জাতীয় হকি দলের একমাত্র আদিবাসী প্রতিনিধি তিনি। ২০০৪ সালে হওয়া প্রথম উপজাতি হকির আবিষ্কার রাঙামাটির স্ট্রাইকার পুষ্কর খীসা (মিমো)। ২২ মে শুরু হচ্ছে তৃতীয় পার্বত্য হকি। প্রসঙ্গটা তুলতেই অধারাবাহিক এই আয়োজন নিয়ে আক্ষেপ ঝরল বিকেএসপির তরুণের কণ্ঠে
l রাঙামাটিতে হওয়ার কথা ছিল পার্বত্য হকির। টুর্নামেন্টটা ওখানে হলেই কি ভালো হতো না?
পুষ্কর খীসা (মিমো): আমি জানতাম, এটা রাঙামাটিতেই হবে। এর নামও তো পার্বত্য হকি টুর্নামেন্ট। কিন্তু শুরু হচ্ছে ঢাকায়। আমার মতে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করলে বেশি ভালো হতো। তাহলে দেখা যেত, অনেক শিশু-কিশোর খেলা দেখতে মাঠে আসছে। অনেকে খেলতেও চাইত। ওদের মনের মধ্যে হকির স্বপ্নটা ঢুকিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু বৃষ্টির কারণে নাকি টুর্নামেন্ট ঢাকায় হবে। অবশ্য এটাও ঠিক, বৃষ্টি হলে ঘাসের মাঠে হকি খেলা যাবে না।
l পার্বত্য জেলাগুলো থেকে সেভাবে হকি খেলোয়াড় উঠে না আসার কারণ কী?
পুষ্কর: আসলে আমরা যখন খেলতাম তখন রাঙামাটিতে হকির ভালোই জোয়ার ছিল। ওটা যদি ফেডারেশন ধরে রাখত, তাহলে দেখা যেত এমনিতেই আরও খেলোয়াড় আসছে। বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িতে মহিলা ফুটবলার অনেকই আছে। কিন্তু হকি খেলোয়াড় নেই। আমাদের মধ্যে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। কিন্তু ফেডারেশন পার্বত্য হকি সেভাবে আয়োজনই করে না। একটা টুর্নামেন্ট, এরপর একটা ক্যাম্প। তারপর আর কোনো খবর থাকে না।
l আপনি তো ক্রিকেটার হতে চেয়ে শেষ পর্যন্ত হকি খেলোয়াড় হয়ে গেলেন...
পুষ্কর: আমি হঠাৎ করেই হকিতে এসে পড়েছি। সব সময় ক্রিকেটই খেলতাম। ক্রিকেটই ছিল ধ্যানজ্ঞান। একদিন আমাদের এলাকার এক বড় ভাই একটা ফরম দিয়ে বলে এটা পূরণ কর। পরে বুঝলাম, ওটা ছিল বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্প। আমাদের জিমনেসিয়ামের পাশে গিয়ে দেখি কয়েকটা ছেলে জড়ো হয়ে এক জায়গায় নাম লিখছে। আমি আর আমার এক বন্ধু নাম দিলাম। প্রথম ট্রায়ালে ৭০ জনের মধ্যে টিকে গেলাম। পরের দিন আবারও ট্রায়াল হলো। সেদিনও টিকলাম। এরপর চুন্নু ওস্তাদের (সদ্য প্রয়াত আবদুল মালেক চুন্নু) কাছে ফেডারেশনের ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পে ট্রেনিং করি। কক্সবাজারেও ক্যাম্প করেছি।
l বিকেএসপিতে কীভাবে সুযোগ পেলেন?
পুষ্কর: কক্সবাজারে ক্যাম্পের পর বিকেএসপিতে ৬ মাসের ক্যাম্প করি। ক্যাম্পের শেষের দিকে বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিলাম। এরপর সুযোগও পেলাম।
l পাহাড়িদের জন্য তো আলাদা কোটা নেই বিকেএসপিতে।
পুষ্কর: নেই, কিন্তু থাকলে ভালো হয়। শিক্ষা, চাকরি সব ক্ষেত্রে আছে, এখানেও থাকলে আমাদের খেলোয়াড়েরা বেশি সুযোগ পেত।
l আপনাকে দেখে কি হকিতে কেউ আসতে চায়?
পুষ্কর: রাঙামাটি গেলে বন্ধুরা বলে, কিরে কেমন হচ্ছে খেলা? পত্রিকায় তোর ছবি দেখেছি, খুব ভালো লাগে দেখে। অনেকেই বলে, হকি খেললেই ভালো করতাম। আমার এক বন্ধু আছে ও আমার সঙ্গেই একসময় খেলত। ও এখনো আফসোস করে...বলে তোর মতো খেলতে মন চায়।
l আপনার পরিবারের কেউ খেলাধুলায় আছেন?
পুষ্কর: আমার মামা বিকেএসপির কোচ। উনি একসময় ফুটবল খেলতেন।
l হকির দলবদল নিয়ে কিছু বলুন।
পুষ্কর: হকির দলবদল দিচ্ছে না ফেডারেশন, খেলোয়াড়দের জন্য খুবই খারাপ খবর। হকি লিগ অনিশ্চিত। কিন্তু গত কিছুদিন জাতীয় দলের পারফরম্যান্স খুব ভালো হচ্ছে। এটা যদি ধরে রাখতে পারতাম...। এসব সমস্যা না হলে হয়তো এত দিন ক্যাম্পেই থাকতাম। এশিয়া কাপের জন্য প্রস্তুতিটা ভালো হতো।