শেষ বেলায় একটু আলো

৫২ বলে ৬৬ রান করার পথে আরেকটি আগ্রাসী শট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনের শেষ ম্যাচেই সাকিব আবার সেই সাকিব ।  ছবি: শামসুল হক
৫২ বলে ৬৬ রান করার পথে আরেকটি আগ্রাসী শট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনের শেষ ম্যাচেই সাকিব আবার সেই সাকিব । ছবি: শামসুল হক

শেষটা কি আফসোস দিয়েই হলো বাংলাদেশের? সুপার টেন পর্বটা ২১ মার্চের পরিবর্তে যদি শুরু হতো গতকাল থেকে! কিংবা সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে যদি বাংলাদেশ খেলত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে! ১ এপ্রিল এবং অস্ট্রেলিয়া দুটোই যে কাল পয়া মনে হলো বাংলাদেশ দলের জন্য।
এমন নয় যে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছেন মুশফিক-সাকিবেরা। উল্টো অস্ট্রেলিয়ার মুখেই হাসি। সান্ত্বনার জয় পেয়েছে আগের তিন ম্যাচেই হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত করা সাবেক ওয়ানডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অন্য দিকে ১৫ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটের হার, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ দৃশ্যেও তো সেই একই বাংলাদেশ!
না, ‘একই’ বোধ হয় নয়। আফসোস এখানেই। ঘরের মাঠে হচ্ছে বলেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল সেমিফাইনাল-ফাইনাল খেলে ফেলবে, এমন দূরাশা কেউ করেনি। সুপার টেনে সবার চাওয়া ছিল একটু ভালো পারফরম্যান্স, কিঞ্চিৎ লড়াই। শেষ ম্যাচটাও হারের বৃত্তে থাকলেও কাল ভালো খেলার সেই চেষ্টাটা যেন সামান্য হলেও দেখা গেল দলের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই কেন যেন বাংলাদেশ দাঁড়াতে চাইল মাথা উঁচু করে। এমন একটা ম্যাচ যদি দলটা সুপার টেনের শুরুতেই খেলতে পারত, সেই আত্মবিশ্বাস হয়তো টেনে নেওয়া যেত পরের ম্যাচগুলোতে। সে জন্যই আফসোস, সুপার টেনটা কেন কালই শুরু হলো না! কিংবা প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ কেন হলো না অস্ট্রেলিয়া!

প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দর্শক-সমর্থকদের প্রত্যাশায় সীমারেখা টানতে চেয়েছেন সাকিব আল হাসান। কাল সাক্ষাৎকারটি ছাপা হওয়ার পর দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বললেন, সাকিব ঠিক কথাই বলেছেন। কেউ আবার তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তবে একটা জায়গায় দুই পক্ষই মিলেমিশে একাকার—সাকিব যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, হাততালি দিয়েছেন সবাই। পুরো টুর্নামেন্টেই দলের কাছে যা প্রত্যাশিত ছিল, সব যেন এক দিনেই ‘উপহার’ দিতে চাইলেন সাকিব। টুর্নামেন্টে দলের পক্ষে প্রথম ফিফটি করলেন, মুশফিকের সঙ্গে প্রথম এক শর বেশি রানের জুটি গড়লেন এবং সেই জুটির সৌজন্যে শেষ ম্যাচে এসেই বাংলাদেশের স্কোর প্রথমবারের মতো দেড় শ ছাড়াল।

ওপেনার তামিম কালও নিজেকে ফিরে না পাওয়ায় বাংলাদেশের শুরুতে বৈচিত্র্য এল না। বরং ১২ রানের মধ্যে তামিম-এনামুল দুই ওপেনারেরই বিদায় শেষ দিনের আকাশটাকেও করে তুলেছিল মেঘাচ্ছন্ন। সেই মেঘ একটু একটু করে সরিয়ে দিলেন সাকিব আর মুশফিক। ৭০ বলের মধ্যে হয়ে গেল ১০০ রানের জুটি, যেটা শেষ পর্যন্ত থেমেছে ১১২ রানে। ওয়াটসনকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মুশফিক ডিপ মিড উইকেটে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ধরা না পড়লে অস্ট্রেলিয়ার সামনে হয়তো আরেকটু বড় লক্ষ্য দিতে পারত বাংলাদেশ। সেটা আর হলো কই! সাকিব-মুশফিকের তৃতীয় উইকেট জুটি ১৫ ওভার শেষে যেখানে দলকে এনে দিয়েছিল ১১৬ রান, সেখানে ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মুশফিকের বিদায়ের পর যোগ হলো আর মাত্র ২৯।

৩৬ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে কম বিনোদন ছড়াননি মুশফিক। বাউন্ডারি মেরেছেন পাঁচটি, সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে গ্যালারি মাতানো একটা ছক্কাও। দর্শকের বিনোদনের কথা বললে অবশ্য এগিয়ে থাকবেন সাকিবই। ফিফটি করেছেন ৪০ বলে। ততক্ষণে বাউন্ডারি চারটা, সঙ্গে বলিঞ্জারকে মিড উইকেট আর ওয়াটসনকে লং অন দিয়ে দুটি ছক্কা। সাকিব নিজের তৃতীয় ছক্কাটি মেরেছেন ফিফটি করার পরের বলেই। ‘নো’ বলে মুশফিকের সঙ্গে প্রান্ত বদলের পর ফ্রি-হিটে মারা বিশাল সেই ছক্কাটা গেছে বোলার ম্যাক্সওয়েলের মাথার ওপর দিয়ে। আউটও হয়েছেন ছক্কা মারতে গিয়েই। মুশফিক ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই বলিঞ্জারকে সীমানাছাড়া করতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ম্যাক্সওয়েলের হাতে।

বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচেই হার ওয়ানডেতে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পিঠটাও ঠেকিয়ে দিয়েছিল দেয়ালে। একটু সান্ত্বনা নিয়ে দেশে ফিরতে একটা জয় বড় দরকার ছিল জর্জ বেইলির দলের জন্য। তা অ্যারন ফিঞ্চ আর ডেভিড ওয়ার্নারের ৯৮ রানের ওপেনিং জুটিতে কাঙ্ক্ষিত সেই জয়টা এল সহজেই। তবে বাংলাদেশ প্রাপ্তি খুঁজতে পারে এই ইনিংস থেকেও। অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচেই সম্ভাবনার দ্যুতি ছড়িয়েছেন হাঁটুর চোটে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া মাশরাফির জায়গায় দলে আসা তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের সপ্তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে রান দিলেন মাত্র ২। দুই ওভারের প্রথম স্পেলে ৫ রান দিলেও ডট বল করেছেন সাতটা। তৃতীয় ওভারে ১৪, আর শেষ ওভারে দিলেন মাত্র ৫ রান, দ্বিতীয় বলে তো বোল্ডই করলেন ম্যাক্সওয়েলকে। ৪ ওভারে ১২টি ডট বলসহ ২৪ রানে ১ উইকেট—স্মরণযোগ্য সূচনা।

আর বাংলাদেশ দল? ঘরের মাঠের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুলেই যেতে চাইবে তারা।

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৩/৫
অস্ট্রেলিয়া: ১৭.৩ ওভারে ১৫৮/৩
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী