ভারতে ‘ভুয়া’ আইপিএল, বাজি ধরে প্রতারিত রাশিয়ানরা
গত ২৯ মে শেষ হয়ে গেছে আইপিএলের সর্বশেষ মৌসুম। প্রথমবার খেলতে এসেই শিরোপা জিতেছে হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট টাইটানস। এর সপ্তাহ তিনেক পর গুজরাটের এক খামারে শুরু হলো আরেক ‘আইপিএল’। সে ‘টুর্নামেন্ট’ পৌঁছাল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। তবে এরপরই ধরা খেতে হলো পুলিশের হাতে!
বুঝতেই পারছেন, গুজরাটের মহীসেনার মলিপুর গ্রামের ওই আইপিএলের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট লিগের সম্পর্ক নেই। আদতে রাশিয়ার কিছু জুয়াড়ির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেই অদ্ভুত এ আয়োজন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ‘ভুয়া’ আইপিএলের জন্য ২১ জন বেকার যুবককে বানানো হয় ক্রিকেটার। পালা করে চেন্নাই সুপার কিংস, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, গুজরাট টাইটানসের জার্সি পরে খেলার অভিনয় করতে থাকেন তাঁরা। মাঠে বসানো হয় পাঁচটি এইচডি ক্যামেরা। ‘ম্যাচ’গুলো সরাসরি স্ট্রিমিং করা হয় ইউটিউবে। এমনকি নিয়ে আসা হয় এমন একজনকে, যিনি নকল করতে পারেন বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের ধরন! আম্পায়ারদের হাতে দেওয়া হয় ওয়াকিটকি, মাঠের দর্শকদের আওয়াজ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সংযুক্ত করা হয় স্ট্রিমিংয়ের সঙ্গে।
সব মিলিয়ে ভুয়া এই আইপিএল চলতে থাকে গুজরাটের ওই গ্রামে, আর যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের মাধ্যমে এর ওপর বাজি ধরতে শুরু করেন রাশিয়ানরা!
পুলিশ জানিয়েছে, এই ভুয়া আইপিএলের মূল হোতা শোয়েব দাবদা নামে একজন। প্রায় আট মাস রাশিয়ায় কাজ করে ফিরে এসে এটি চালু করেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা ভবেশ রাথোড় বলেছেন, ‘গোলাম মহীশের খামারটি ভাড়া করে শোয়েব। সেখানে হ্যালোজেন বাতি লাগানো হয়। ২১ জন খামার শ্রমিককে ম্যাচপ্রতি ৪০০ রুপির বিনিময়ে ভাড়া করা হয়। এরপর ক্যামেরাম্যান ভাড়া করে, আইপিএলের দলের জার্সি কেনে।'
তবে অভিযুক্ত শোয়েব বলেছেন, এমন আইপিএল আয়োজনের পরিকল্পনাটা মূলত আসে আরেক জনের মাথা থেকে। রাশিয়ার পানশালায় কাজ করতে গিয়ে আসিফ মোহাম্মদ নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। মলিপুরে ফিরে এরপর সাদিক দাবদা, সাকিব, সাইফি ও মোহাম্মদ কোলুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন শোয়েব। এঁদের মধ্যে সাকিব কাজ করেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে, বাকিরা আম্পায়ার হিসেবে।
কীভাবে এই ভুয়া আইপিএল থেকে শোয়েবরা টাকা হাতিয়ে নিতেন, সেটির বর্ণনা পুলিশ দিয়েছে এভাবে, ‘শোয়েব সরাসরি টেলিগ্রামের মাধ্যমে বাজি ধরত। আম্পায়ার কোলুকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে চার-ছয়ের সংকেত দিতে বলত। ব্যাটসম্যান-বোলারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখত। নির্দেশনা অনুযায়ী এরপর বোলার ধীরগতিতে বল করতেন, যাতে চার বা ছয় মারতেন ব্যাটসম্যানরা।’
এমন ম্যাচের ওপর রাশিয়ার কয়েকটি শহরের জুয়াড়িরা বাজি ধরতেন। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনা এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিশ্বের সংবাদ সংস্থাগুলোতেও জায়গা পেয়েছে এ খবর। আর ভোগলে মজা করে টুইট করেছেন, ‘হাসি আটকাতে পারছি না। এ “ধারাভাষ্যকার”কে শুনতেই হবে!’