ফেডারেশন কাপে প্রাপ্তিই বেশি

পরশু শেষ হওয়া ফেডারেশন কাপ ফুটবলের একটা সারমর্ম যদি লেখা হয়, তাহলে অনেক ভালো দিকই বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে সাধারণ্যে ধারণাটা তো মোটের ওপর খারাপই। আগের মতো ফুটবল জমে না, দর্শক হয় না, খেলার মান নিম্নগামী—এসব কথা মুখস্থ বলে দেন অনেকে। কিছু ব্যাপার হয়তো ঠিক আছে। তবে এবারের ফেডারেশন কাপ নিয়মিত দেখেছেন, এমন লোকদের কাছে টুর্নামেন্টটা যথেষ্ট ভালোই মনে হয়েছে। খেলার মান আগের মতো নেই, এটা আর আগের মতো জোর দিয়ে বলা যাবে না। হ্যাঁ, আগের মতো ব্যক্তিগত ঝলক দেখানো খেলোয়াড়ের অভাব আছে, কিন্তু এটাও ঠিক, ফুটবল এখন দলীয় খেলা। আর সেই খেলায় সেমিফাইনাল ও ফাইনালে পিছিয়ে পড়ে শেখ রাসেল যেভাবে জিতল, তা এককথায় অসাধারণ। ফাইনালে তো অতিরিক্ত সময়ের শেষ পাঁচ মিনিটে শেখ রাসেল দুটি গোল করে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে জিতে গেছে নাটকীয়ভাবে। এই যে দলটি ১২০ মিনিট লড়ল, হারের আগে হারেনি মন্ত্রে উজ্জীবিত হল, কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয় রাসেলের জন্য। ট্যাকটিক্যালি খেলার মানও বেড়েছে। কখন কীভাবে রক্ষণ কাজ সামলাতে হবে, কখন আক্রমণে যেতে হবে, এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি বুঝে খেলতে পেরেছেন খেলোয়াড়েরা। এখানে খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দিতেই হবে। মোটের ওপর খেলোয়াড়দের ফিটনেসও ভালো পর্যায়ে ছিল। জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা ভালো করেছেন। বিশেষ করে সাত গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা এমিলির পুনর্জন্ম এই টুর্নামেন্টের অন্যতম বড় প্রাপ্তি। গত দুই মৌসুমে অনেকটা আড়ালে চলে যাওয়া এমিলি ভালো করতে পারছিলেন না, যে কারণে জাতীয় দলও ভুগছিল। সেই এমিলি সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। এরপর নিজের প্রথম টুর্নামেন্টেই জ্বলে উঠে নির্ভরতা দিলেন জাতীয় দলকে। জাতীয় দল ও মোহামেডানের কোচ সাইফুল বারী এই ফেডারেশন কাপ থেকে প্রাপ্তির তালিকায় আগে রাখতে চান খেলোয়াড়দের ভালো পারফরম্যান্সকে, ‘মামুনুল সেরা খেলোয়াড় হয়েছে। এমিলি গোল পেয়েছে। জাহিদও ভালো খেলেছে। এভাবে জাতীয় দলের অন্যরাও ভালো খেলায় ভবিষ্যতে এর ফল পাবে জাতীয় দলই। মোটের ওপর টুর্নামেন্টটা বেশ ভালো হয়েছে, ট্যাকটিক্যাল উন্নতিসহ খেলার মানও বেড়েছে।’সেমিফাইনাইলে ১০-১২ হাজার দর্শক এসেছে। এট ভালো লক্ষণ। কিন্তু অশুভ লক্ষণ হলো, মাঠে কোনো নিরাপত্তা ছিল না, যে কারণে সেমিতে শেখ রাসেলের কাছে হেরে মোহামেডান কোচকে লাঞ্ছিত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে কিছু উগ্র সাদাকালো সমর্থক। ১৮ দিনের টুর্নামেন্টে ফাইনাল পর্যন্ত খেলা দলকে খেলতে হয়েছে ছয়টি ম্যাচ। বিরতি সেভাবে পাওয়া যায়নি। আরেকটু বিরতি চায় দলগুলো। বৃষ্টির কারণে কাদায় থিকথিকে মাঠে খেলা হয়েছে দুই দিন। পরে রোদ উঠলে মাঠে বালু দেওয়ায় দুই-তিন দিন ফুটবলের নামে আসলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিচ ফুটবল হয়েছে। বালু দেওয়ায় কোচেরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। শেখ রাসেলের কোচ মারুফুল হক ছিলেন এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ক্ষুব্ধ, ‘মাঠে মাটি দেওয়া উচিত ছিল। বালু দেওয়ায় পাসিং ফুটবল খেলা যায়নি। আশা করি, কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এটা মাথায় রাখবে।’ বাছাইপর্ব থেকে আসা দলগুলোর মান ছিল খুবই নিচু। অনেক দলই ছয়-সাতটি করে গোল খেয়েছে। টুর্নামেন্টের মানের সঙ্গে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ছাড়া ভালো দিকই বেশি। অবশ্য এর আগেও ফেডারেশন কাপ শেষে ‘ফুটবলে সুতাবাস’ শিরোনামে অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। কিন্তু লিগে গিয়ে পাতানো খেলা, ফেডারেশনের উদাসীনতা—সবই মাটি করে দিয়েছে। এবার যাতে তেমন কিছু না হয়, সেটিই ফুটবল অঙ্গনের প্রত্যাশা।