বেয়ারস্টোর সঙ্গে পন্তের তুলনা টেনে ভারতীয়দের খোঁচার মুখে ভন
বড় ভুল সময়ে, ভুল বিষয়ে টুইটটা করেছেন মাইকেল ভন। ভারতের কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে হাস্যরসাত্মক টুইটের ক্ষেত্রে সে খেলোয়াড় সফল হলে জবাবগুলো কেমন হয়, সেটি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক।
ভন টুইটটা করেছেন ঋষভ পন্তকে নিয়ে। বার্মিংহামে গতকাল পন্তের ইনিংস যখন গড়ে উঠছে, তখনই মজা করে টুইটটা করেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক। পন্তকে তুলনা করেছিলেন ইংল্যান্ডেরই দারুণ ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে। কিন্তু নিজেদের ব্যাটসম্যানের সাফল্যের তুলনায় অন্য কাউকে টেনে আনা কেন পছন্দ হবে ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের! বার্মিংহামে কাল টেস্টের প্রথম দিনে দারুণ চাপের মুখে পন্তের সেঞ্চুরির পর ভনকে তাই টুইটের জবাবে দুকথা শুনিয়ে দিয়েছেন ভারতের অনেকেই।
পন্তের ইনিংসটা কাল অবশ্য হয়েছে দেখার মতো! ৬৪ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে হনুমা বিহারী আউট হওয়ার পর ক্রিজে নেমেছেন পন্ত, দলীয় ৭১ রানে দেখলেন বিরাট কোহলির বিদায়। দলের রানে সেঞ্চুরি হওয়ার আগেই শ্রেয়াস আইয়ারের বিদায়ের সময়ও পন্ত অন্য প্রান্তে অসহায় দর্শক। কিন্তু সেখান থেকে পন্ত আর রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাটে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু, ওয়ানডে গতির সেঞ্চুরিতে যে গল্পে নায়ক পন্ত।
ষষ্ঠ উইকেটে জাদেজার সঙ্গে ২২২ রানের জুটি গড়ে যখন বিদায় নিচ্ছেন, সে জুটির আগে ধুঁকতে থাকা ভারত বেশ লড়াই করার মতো অবস্থানে। পাল্টা লড়াইয়ের পথে ৮৯ বলে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে নতুন রেকর্ডও গড়েন পন্ত, ভারতের উইকেটকিপারদের মধ্যে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির তালিকায় মহেন্দ্র সিং ধোনিকে পেরিয়ে এখন শীর্ষে তিনিই। শেষ পর্যন্ত ১১১ বলে ১৯ চার আর ৪ ছক্কায় তাঁর ১৪৬ রানের ইনিংস মুগ্ধতায় হাততালি দিতে বাধ্য করেছে অনেককেই।
ভনও প্রশংসা করেই টুইটটা করেছিলেন। কিন্তু প্রশংসায় জনি বেয়ারস্টোকে টেনে এনেই বুঝি ভুলটা করলেন! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে কদিন আগে ইংল্যান্ডের হয়ে ঝড় তুলেছেন বেয়ারস্টো, পন্তের ইনিংসের সঙ্গে সেটির মিল খুঁজে পাওয়া তাই মোটেও অপ্রাসঙ্গিক নয়। পন্তের ইনিংসের মাঝপথে কাল ভনের টুইটটা ছিল এ রকম, ‘(পন্তের ইনিংসটা) দেখতে কী ভালো লাগছে! ঋষভ পন্ত একেবারে জনি বির মতো খেলছে!’
কিন্তু নিজেদের খেলোয়াড়কে উঁচুতে দেখতে চাওয়া সমর্থকমন এভাবে অন্যের সঙ্গে তুলনা মেনে নেবে কেন! পন্তকে এভাবে বেয়ারস্টোর সঙ্গে তুলনায় তাঁদের কাছে বুঝি মনে হয়েছে, এখানে পন্তকে খাটো করা হচ্ছে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায়, নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আলো ছড়িয়ে আলোচনায় আসা পন্তের সঙ্গে গত কিছুদিনে আলো ছড়ানো বাটলারের তুলনাতেই তাঁদের আপত্তি!
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের কোচ হওয়ার পর থেকেই তো বেয়ারস্টো আর ইংল্যান্ডের এমন আগ্রাসী মনোভাবের দেখা মিলছে বেশি, যে কারণে ইংল্যান্ডের এই দর্শনকে বলাই হচ্ছে ‘বাজবল’। ম্যাককালামের ডাকনাম ‘দ্য বাজ’ কিনা! তা সেটিকেই টেনে এনে এক ভারতীয় সমর্থক ফোড়ন কেটেছেন ভনের টুইটের নিচে, ‘বাজবল আলোচনায় আসার অনেক আগ থেকেই ঋষভ বাজবল দেখিয়ে এসেছে!’
শোয়েব নামে আরেক ভক্ত তো ভনকে ‘একচোখা’ অপবাদই দিয়ে বসেছেন, ‘পন্ত এমনটা সেই ২০১৮ সাল থেকেই করে আসছে, আর জনি করছে সর্বশেষ সিরিজ থেকে। জানি আপনি একচোখা, কিন্তু তথ্যগুলো তো অন্তত ঠিকঠাক দিন।’
কাওয়াল নামের আরেকজন পন্ত যে উইকেটে কাল আলো ছড়িয়েছেন, সেটির চেয়ে বেয়ারস্টোর ইনিংসগুলোর পিচ অনেক ব্যাটিং সহায়ক ছিল জানিয়ে লিখেছেন, ‘পন্ত এমনটা দু–তিন বছর ধরে করছে, আর জনি করেছে একটা মাত্র সিরিজে। আজকের পিচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (ইংল্যান্ডের) সিরিজের পিচের চেয়ে দ্বিগুণ ভয়ংকর।’ পাশে ভনকে খোঁচা মেরে তিনটি ‘জোকার’ ইমোজি দিয়ে রেখেছেন।
এসব তো তবু সমর্থকমনের নিজেদের খেলোয়াড়কে উঁচুতে রাখতে চাওয়ার ইচ্ছা ধরে নেওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে নবীন নায়ারের মন্তব্যকে কী বলবেন? টুইটারে তাঁর বায়ো বলছে, ইন্ডিয়া টুডে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। সেই তিনিই পন্তের কাল অ্যান্ডারসনকে রিভার্স সুইপ করার প্রসঙ্গ টেনে ভনের টুইটের জবাবে লিখেছেন, ‘ও (পন্ত) জনি বেয়ারস্টোর নকল করছে না! জনি তো একজন ফাস্ট বোলারকে রিভার্স সুইপ বা সুইচ হিট করার কথা ভাবতে গেলেও ঘেমে যাবে! এখানে তাই কোনো তুলনাই চলে না!’