দেখে তো ইংরেজ সমর্থকই মনে হয়। কিন্তু মাথায় লাল-সবুজ টুপি কেন? ‘আমি প্রথমে ইংল্যান্ড, এরপর বাংলাদেশের সমর্থক’—ষাটোর্ধ্ব স্টিভেন নিলের নীল চোখে মৃদু হাসি। বার্মি আর্মির সদস্য আপনি? ‘না, না নিজের মতো করেই এসেছি। ওই যে ছাদে পতাকাটা দেখেছেন? ওটা বার্মি আর্মির’।
ইংল্যান্ড সিরিজের আগে জানা গিয়েছিল, নিরাপত্তার কারণে ইংলিশ সমর্থক গোষ্ঠী বার্মি আর্মি এবার বাংলাদেশে আসবে না। ক্রিকেট দলগুলোর সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ইংল্যান্ডের বার্মি আর্মি। মাঠের বাইরে-গ্যালারিতে মজা করে আর দলকে সমর্থন দেয়। সব টেস্ট খেলুড়ে দেশই এেদর চেনে। তাঁরাই কিনা এবার ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে আসবে না, তা কী করে হয়!
টেস্ট সিরিজ শুরু হতেই চলে এসেছে বার্মি আর্মি। পার্থক্য একটাই, অন্যবার সংঘবদ্ধ হয়ে এলেও এবার তাঁরা এসেছেন নিজেদের মতো করে। সব মিলিয়ে ১৫-২০ জন হবে। ঢাকা টেস্টে সংখ্যাটা নাকি বাড়বে। সিরিজের আগে শুনেছিলাম, আপনারা নাকি আসবেন না? গায়ে বার্মি আর্মি লেখা টি-শার্ট দেখে প্রশ্নটা করা হলো মাইকেল ক্রককে। ভদ্রলোকের ত্বরিত জবাব, ‘না, না খবরটা অফিশিয়াল না। আমরা এসেছি তো। তবে সংগঠিতভাবে নয়, নিজেদের উদ্যোগে।’
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হয়েছে মাত্রই। হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন ইংলিশ সমর্থকেরা। গলা ছেড়ে গাইছেন তাঁদের জাতীয় সংগীত। এভাবে দিন শুরু করাই তাঁদের নিয়ম।
এরপরই সেই চেনা ছবি। সবাই হইচই করছেন, হাসি-ঠাট্টায় সমর্থন দিচ্ছেন ইংল্যান্ড দলকে। ‘এখানকার মানুষ বড় ভালো, জায়গাটা ভালো, আবহাওয়াও ভালো’—প্রশংসার বৃষ্টি ক্রকের কণ্ঠে। আবহাওয়া ভালো মানে? দুই দিন আগেই এক ব্রিটিশ সাংবাদিক রোদের ঝাঁজ দেখে বলছিলেন—সো হট ফর ইংলিশম্যান! আর ক্রক কিনা বলছেন, ‘ভালো আবহাওয়া’! রহস্যটা তিনিই উন্মোচন করে দিলেন, ‘আরে আমি থাকি আবুধাবি। সেখান থেকেই এসেছি খেলা দেখতে। ওখানকার চেয়ে এখানে তো গরম কম।’
সিরিজের আগে নিরাপত্তা নিয়ে কত কথা! মাঠের লড়াই শুরু হতেই নিরাপত্তা-সংক্রান্ত আলোচনা চলে গেছে পেছনের পৃষ্ঠায়। তবু ইংল্যান্ড দল কিংবা ইংরেজ সাংবাদিক-বহরকে ঘিরে থাকা নিরাপত্তাবলয় দেখে মাঝেমধ্যে নিরাপত্তার কথা মনে পড়ে। তবে তাঁদের ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তত্পরতা নেই। এতে কোনো সমস্যাই দেখছেন না ইয়র্কশায়া থেকে আসা জিম লভন, ‘আমরা সিএনজি কিংবা রিকশায় করে স্টেডিয়ামে আসছি। কোনো সমস্যা দেখছি না। নিরাপত্তা নিয়ে যত মাতামাতি ইংলিশ মিডিয়ায়। এখানকার মানুষগুলো চমত্কার। আমাদের নানাভাবে সহায়তা করছে তারা। সবচেয়ে উপভোগ করছি এখানকার খাবার।’
জন ক্যারল অবশ্য বার্মি আর্মির সদস্য নন। লন্ডনের এই পাবলিক প্রসিকিউটর এসেছিলেন ২০১০ সালেও। ছয় বছর পর আবারও এলেন বাংলাদেশে। এবার যখন আসার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর পরিবার বেশ উদ্বিগ্ন ছিল। ক্যারল জানালেন, এখানে এসে পৌঁছানোর পর উদ্বেগ অনেকটাই কেটে গেছে পরিবারের।’
দুই দলের ইনিংস নিয়ে ফলিত গণিতের শিক্ষার্থী স্টুয়ার্ট কেম্প শোনান তাঁর গাণিতিক বিশ্লেষণ, ‘আজকের (কাল) দিনটা দুই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজ (কাল) ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে আরও ১০০ রান যোগ করবে। বাংলাদেশ গুটিয়ে যাবে ২২০ রানে। আশা করি, দিনটা ইংল্যান্ডের জন্য ভালোই হবে।’
কেম্পের দুটি অনুমানই ভুল হয়েছে। তাতে কী? মাঠে বসে দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা তো উপভোগ করা যাচ্ছে। নিরাপত্তা-জুজুর ভয়ে বাংলাদেশে না এলে কি আর এ সুযোগটা পাওয়া যেত!