‘এটাই জীবন, এটাই মজা’
এখন তাঁকে ‘তাসকিন ২.০’ বলাই যায়। তাসকিন আহমেদের প্রত্যাবর্তনের গল্পটাই যে এমন!
২০১৭ সালের পর প্রায় চার বছরের বিরতি দিয়ে টেস্টে ফেরা তাসকিন এখন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র। অবশ্য ফিটনেসে বেশ উন্নতি করলেও ফাস্ট বোলারদের ‘জীবনের নিয়ম’ মেনে চোটের আঘাত সামলাতে হচ্ছে এ পেসারকে। বেশ কিছুদিন পর নেটে ফিরে বোলিং করার পর তাসকিন বলছেন, এই চোটে পড়া, ফিরে আসা—‘এটাই জীবন, এটাই মজা’।
২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে দলে ফেরা তাসকিন এরপর চোটের কারণে মিস করেছেন ৫টি টেস্ট। পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সিরিজের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে চোটের কারণে ছিলেন না। সে চোট নিয়েই দেশেই ফিরতে হয় তাঁকে। এরপর চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ড যান। অস্ত্রোপচার না লাগলেও বেশ লম্বা পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার মধ্যেই যেতে হচ্ছে তাসকিনকে। আজ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে নেটে ফিরেছেন তিনি। ৮ ওভার বোলিং-ও করেছেন।
নেটে ফিরতে পারা তাসকিনের কণ্ঠে স্বস্তিটা স্পষ্টই, ‘অনেক দিন পর বোলিং করতে পেরেই খুশি, ৮ ওভার বোলিং করলাম। একা একা পুনর্বাসনপ্রক্রিয়াটা আসলে বেশ একঘেয়ে। বাইরে থেকে খেলা দেখাটাও বেশ কষ্টের। আল্লাহর রহমতে বোলিং করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’
নেটে বোলিং অবশ্য তাসকিনের পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ারই অংশ, মাঠে ফিরতে সময় লাগবে এখনো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট দলেও তিনি নেই, শুধু ওয়ানডে দলে রাখা হয়েছে। তাসকিন অবশ্য ‘শিগগির’ ফিরে আসার আশাই করছেন। বেশ কিছুদিন পর বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন, সেটিও জানালেন এ ফাস্ট বোলার, ‘আজ সমস্যা হয়নি, তবে সামনে যখন লোড বাড়বে, তখন যাতে সমস্যা না হয়, সে দোয়া করবেন। খেলোয়াড় হিসেবে সুস্থ থেকে দলের সঙ্গে থাকাটাই আনন্দের।’
চোট নিয়ে তাসকিনের দৃষ্টিভঙ্গিটা এখন এমন, ‘চোট তো জীবনের অংশ। দুনিয়ার সব ফাস্ট বোলারই কমবেশি চোটে পড়ে। এটা হবে, আবার ফিরে আসতে হবে—এটাই জীবন, এটাই মজা। সবার পরামর্শেই পুনর্বাসন শুরু হয়েছে এবং সেখানে উন্নতিও হচ্ছে। পুনর্বাসন করতে করতেই উন্নতি হবে।’
তাসকিনের মতো চোটের কারণে শ্রীলঙ্কা সিরিজে খেলেননি শরীফুল ইসলামও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও নেই তিনি। চোটের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে মূল ব্যাপারটি কী, তাসকিন মনে করিয়ে দিলেন সেটিও, ‘প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। শুধু প্রক্রিয়া ও ডিসিপ্লিনই নিয়ন্ত্রণে আছে, এটিই আরও তীব্রভাবে করতে চাই। চোটের বাধা আসবেই মাঝেমধ্যে। আর আমাদের সবচেয়ে বড় উদাহরণ মাশরাফি (বিন মুর্তজা) ভাই চোটের সঙ্গে লড়াই করেই খেলেছেন। এসব দেখে আমরা তরুণ পেসাররা অনুপ্রেরণা পাই, চোট আসবেই, তবে ফিরে আসতে হবে।’
চোটের সমস্যা থাকলেও তাসকিন এখনো কোনো সংস্করণ বাদ দেওয়ার কথা ভাবতে চান না, ‘এখনো চিন্তাভাবনা করি নাই। এখনো তরুণই আছি। তিন সংস্করণেই খেলতে চাই। পরে সিনিয়র হলে, লোড বাড়লে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। চোটে পড়ে খেলা মিস করলে খারাপ লাগেই খেলোয়াড় হিসেবে। খেলতে নামলে ভালো খারাপ হতেই পারে, মাঠে নামলে জান দিয়েই চেষ্টা করি। সুস্থ হয়ে খেলতে পারলে আশা করি অবদান রাখতে পারব। আর খেলতে না পারলে আসলে বলার কিছু নেই। যা নিয়ন্ত্রণে আছে, সেটিই অনুসরণ করতে চাই। ভবিষ্যতে যাতে বিশ্বের অনেক বড় বোলার হতে পারি, এটিই স্বপ্ন। সবাই দোয়া করবেন।’
সাম্প্রতিক সময়ে পেস আক্রমণ বেশ আশা জুগিয়েছিল বাংলাদেশকে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়েও অবদান ছিল তাঁদের। বাংলাদেশের পেস বোলিং নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথাও তাসকিন জানালেন আরেকবার, ‘টেস্ট ক্রিকেট অনেক স্পেশাল। (একসময়) অনেকেই গোনায় না ধরলেও…যেদিন নিজের কাছে নিজেকে গোনায় ধরা বন্ধ করব, সেদিন সব শেষ হয়ে যাবে। সবকিছু যুক্তি দিয়ে হয় না। নিজের কাছে আত্মবিশ্বাস থাকলে অনেক কিছু হয়ে যায়, চেষ্টা করতে হয়। আশা করি, ফাস্ট বোলাররা একদিন বাংলাদেশে টেস্ট জেতাবে। ঘরে বসে এই সবই ভাবি। হয়তো অনেকেরই হাসি আসতে পারে, তবে একদিন এ কথা সত্যি হবে।’