আর্জেন্টিনা ব্রাজিলে এসেছিল বিধ্বংসী আক্রমণভাগ নিয়ে। সবাই বলছিল মেসি, হিগুয়েইন, ডি মারিয়া আর আগুয়েরোর নাম শুনেই প্রতিপক্ষ ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, মেসি ছাড়া বাকিরা পারেনি নামের প্রতি তেমন সুবিচার করতে। ফলে কোচকে খেলতে হয়েছে রক্ষণাত্মক।
তবে যারা ব্রাজিলে এসেছিল কোনোরকম তারকাখ্যাতি ছাড়াই, তারাই লড়াকু পারফরম্যান্সের কারণে এখন নায়কের আসনে। এই বিশ্বকাপ রোমেরো, গ্যারাই, মাচেরানোকে চিনিয়েছে। জার্মানিকে তাই এখন বিশেষভাবে ভাবতে হচ্ছে কীভাবে আকাশি-নীলদের রক্ষণদুর্গে ফাটল ধরাবে, আর্জেন্টিনা ভাবছে কীভাবে গোল করবে।
তবে আর্জেন্টিনার খেলার ধরনে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা মাঝমাঠকে একটু হলেও দুর্বল করে দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে বসনিয়ার সঙ্গে সাবেলার দল শুরু করেছিল পাঁচজন ডিফেন্ডার নিয়ে, মাচেরানোর সঙ্গে মাঝমাঠে ছিল ম্যাক্সি রদ্রিগেজ। বিরতির পর রদ্রিগেজের জায়গায় নামে গ্যাগো, পরের ম্যাচেও। তবে আর্জেন্টিনা ঠিকই জিতেছে।
কারণটা হলো, সাবেলার দল জিততে চেয়েছে। প্রতিপক্ষ চেয়েছে শুধু আটকাতে। বসনিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, এমনকি সুইজারল্যান্ডও। মাচেরানো জীবন বাজি রেখে খেলেছে, বিগলিয়া যোগ্য সহায়তা দিয়ে গেছে বেলজিয়াম আর হল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে। ডি মারিয়ার জায়গায় এনজো পেরেজও ভালো খেলেছে। পরের দিকে মেসির খেলা যতটা খারাপ হয়েছে হিগুয়েইন ততটাই ভালো খেলেছে। লাভেজ্জিও দলে এনেছে ভারসাম্য। দল ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার কৃতিত্ব আপনার সাবেলাকে দিতেই হবে। টিকে থাকতে হলে চেষ্টা করার পাশাপাশি কখনো কখনো ঝুঁকিও নিতে হবে। সাবেলা পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা করেননি। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে এই সিদ্ধান্তগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সাবেলার প্রশংসা করতে হবে সেগুলো সঠিকভাবে নেওয়ার জন্য। দলের আক্রমণভাগ যখন নিজেদের সেরাটা খেলতে পারছে না, তখন আপনাকে রক্ষণ গুছিয়েই খেলতে হবে। মেসি অসাধারণ কিছু করতে পারেনি, কিন্তু মাচেরানোরা সেটার অভাব পূরণ করেছে। আর্জেন্টিনা আক্রমণাত্মক খেলেনি, সেটার দোষ তাই সাবেলার না। সবাই নিজের সেরাটা খেলতে পারেনি।
মানলাম, আর্জেন্টিনা জার্মানির মতো আহামরি খেলেনি। কিন্তু ঠিকই ম্যাচ বের করে এনেছে। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ওরা ছিল কৌশলী, হল্যান্ডের বিপক্ষেও। এখন ওদের সামনে জার্মানি। আমি আশা করি মাচেরানোরা রক্ষণদুর্গ সামলাবে। একই সঙ্গে আশা করি মেসি সময়মতো জ্বলে উঠে শিরোপা ঘরে নিয়ে আসবে।