ব্রাজিলের মতো দলের ৭ গোলে উড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন। জার্মানি জিতবে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে ব্রাজিলকে গুঁড়িয়ে দেবে ভাবতে পারিনি। সময় সময় মনে হচ্ছিল, ব্রাজিল-জার্মানি একটা ভুতুড়ে ম্যাচ হচ্ছে। জার্মানি বল নিয়ে যাচ্ছে আর গোল করে বেরিয়ে আসছে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এমন হেসেখেলে গোল করতে পারে একটা দল, সতি৵ই বিস্ময়কর।
ব্রাজিলের লজ্জাজনক হারের প্রথম কারণ মনে হচ্ছে, দলটির গাঁথুনিই ঠিক ছিল না পরশু। কার কী দায়িত্ব, সবাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন। একটা দল পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে, কে কোন জায়গায় কাকে ব্লক করবে সেটা ঠিক করা থাকে। কিন্তু এই ব্রাজিলের মধ্যে সেসবের কিছুই দেখলাম না। তার ওপর ছিল জঘন্য মার্কিং।
প্রথম কয়েক মিনিট ব্রাজিল ভালো খেলেছিল। মনে হচ্ছিল ঘরের মাঠে কিছু একটা করবে তারা। কিন্তু প্রথম গোলটার পর ব্রাজিল এত তেড়েফুঁড়ে ওপরে উঠল কেন মাথায় আসছে না। মনে হলো পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল শোধ করার চাপ তাঁদের ওপর! এত উত্তেজনার কী আছে! হাতে সময় থাকায় নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে দেখেশুনে আক্রমণে যেতে পারত ব্রাজিল। সেটা না করায় এমন কুৎসিত পরাজয়।
ব্রাজিল ডিফেন্ডারদের জায়গা-মতো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার অভাব পূরণ হওয়ার নয়, এই যুক্তি হয়তো ঠিকই আছে। তাই বলে সিলভার জায়গায় খেলা দান্তেকে একটা ট্যাকলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেটাই বা কী করে হয়! দানি আলভেজকে বসিয়ে রেখে যাঁকে খেলানো হলো, সেই মাইকন দৌড়াদৌড়ি ছাড়া আর কী করলেন! ডেভিড লুইজ, মার্সেলোদের মতো লড়াকু সৈনিকেরা বলের কাছে নেই। কোথায় তাঁরা? বেচারা গোলরক্ষক সিজার, দিনটাও তাঁরও গেল খুব বাজে।
মাঝমাঠ নিষ্প্রভ। একটা বল ধরতে পারছে না। আক্রমণভাগ ভোঁতা। মাঝেমধ্যে বল পেলেও সেই আক্রমণভাগ এক মিনিটও বল রাখতে পারেনি। এভাবে ব্রাজিলের মতো দলকে বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখাটা খুবই হতাশার।
নেইমার না থাকায় ব্রাজিলের উচিত ছিল কৌশলী ফুটবল খেলা। সেটা খেলতে তারা ব্যর্থ। টমাস মুলারকে ফাঁকায় ছেড়ে প্রথম গোলটা খেল দুর্বল মার্কিংয়ের খেসারত গুনে। সেই গোলের পর ব্রাজিল আসল ভুলটা করল ‘চল রে, এক্ষুনি গোল শোধ করতে হবে’ এমন অভিযানে বের হয়ে। দুই গোলের পর বোঝা যাচ্ছিল, হতভম্ব ব্রাজিল ম্যাচ ছেড়ে পালাতে চায়। ছন্নছাড়া এই দলের লড়াইয়ের আর ক্ষমতা নেই।
কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারির দল গঠন নিয়ে কথা উঠতে পারে। অনেকে বলতে পারেন এই দলে কাকার প্রয়োজন ছিল। আসলে কে থাকলে কী হতো সেটা বলে লাভ নেই। তবে এটা ঘটনা, হাতে সময় থাকলেও স্কলারি বড় দলগুলোর মধ্যে সবার আগে ২৩ জনের স্কোয়াড দিলেন। তিনি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এই দল নিয়ে। কিন্তু এখন দেখা গেল, স্কলারির দলের সামর্থ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। সঠিক দলটা তিনি বেছে নিয়েছিলেন কি না সেটা নিয়ে সংশয় থাকলই।
শুনলাম, এই লজ্জার দায় নিয়েছেন স্কলারির। তবে বড় দায় খেলোয়াড়দেরই। মাঠে নেমে খেলোয়াড়েরা এতটা উত্তেজিত থাকবেন কেন? তাঁরা কি ছোট্ট শিশু নাকি!