বাংলাদেশের ফুটবলারদের ইউরোপীয় লিগের পথ দেখাতে চান হামজা
ফিফার ছাড়পত্রটা পেয়ে গেছেন কালই। হামজা চৌধুরী এখন আনুষ্ঠানিকভাবেই বাংলাদেশের। জাতীয় ফুটবল দলের জার্সিতে হয়তো আসছে মার্চেই এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয়ে যাবে তাঁর। তবে হামজার নিজের লক্ষ্যটা কিন্তু আরও বিস্তৃত।
শুধু নিজের খেলাটাই খেলে যেতে চান না, বাংলাদেশের ফুটবলকে বদলে দেওয়ায় ভূমিকাও রাখতে চান। চান বাংলাদেশি ফুটবলারদের ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার পথে এগিয়ে দিতে। কাজ করতে চান এ দেশের ফুটবলের অবকাঠামো তৈরিতেও। ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা ফুটবল সাময়িকী দ্য অ্যাথলেটিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব ইচ্ছার কথা জানান হামজা।
২৭ বছর বয়সী হামজার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে। বাংলাদেশি মা–বাবার ঘরে বড় হওয়া হামজা ফুটবল শিখেছেন লেস্টার সিটি একাডেমিতে। পরে এই ক্লাবের মূল দলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন, অধিনায়কত্ব করেছেন এবং এফএ কাপও জিতেছেন। এ ছাড়া খেলেছেন ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ ও এর পরের ধাপ উয়েফা কনফারেন্স লিগেও। ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা একজন ফুটবলারের বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা যেকোনো বিবেচনাতেই অনন্য এক ঘটনা।
বাংলাদেশের জার্সিতে তাঁর খেলা বাংলাদেশের ফুটবলকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন হামজা। দ্য অ্যাথলেটিককে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষকে আমি প্রতিনিধিত্ব করব, এ ব্যাপারটা আমার মাথায় সব সময়ই ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে আমার ভালো একটা সংযোগও তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই তারা আমাকে বার্তা পাঠায়, দেশে আসো, খেলো।’
বাংলাদেশি ফুটবল–ভক্তদের এ চাওয়াই হামজাকে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবিয়েছে। তিনি চেয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলকে বিশ্বের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতে, ‘আমার মনে হয়েছে, ফুটবল দুনিয়ায় বাংলাদেশকে আরও পরিচিত করে তুলতে আমিও এমনটাই চাই।’
হামজার চোখে ক্রিকেট নয়, ফুটবলই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, ‘এটা হয়তো একধরনের ভুল ধারণা যে ক্রিকেটই বাংলাদেশের প্রধান খেলা। এটা ঠিক, ক্রিকেটেই সাফল্য বেশি এসেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, সবার মূল খেলা ফুটবলই, যেটা তারা দেখতে ও খেলতে পছন্দ করে।’
বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি এই ভালোবাসা বুঝতে পেরেই হামজা চান, লাল–সবুজ জার্সিতে খেলে তিনি যেন আরও অনেক বেশি বাংলাদেশি ফুটবলারের জন্য ইউরোপে খেলার দুয়ার খুলে দিতে পারেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল–পাগল। আমি আশা করি, আমি আরও বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি ফুটবলারের জন্য ইউরোপের সেরা লিগে খেলার পথটা তৈরি করে দিতে পারি।’
শুধু বাংলাদেশি ফুটবলারদের ইউরোপে খেলার সুযোগ সৃষ্টিই নয়, বাংলাদেশে বয়সভিত্তিক ফুটবল উন্নয়নেও কাজ করতে চান হামজা, ‘আশা করি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ফুটবল উন্নয়নের কাঠামো তৈরিতে স্থানীয় ফুটবল ক্লাবগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পারব।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে তিনি কীভাবে কাজ করতে চান, সেটিও জানিয়েছেন লেস্টার সিটির এই তারকা ফুটবলার, ‘আমি জানি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এরই মধ্যে অনেক কাজ করেছে। তবে আমি যদি ওদের ভিন্ন একটা দৃষ্টিকোণ দিতে পারি, যেটা ইউরোপিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি, আশা করি সেটা কাজে দেবে।’