উইম্বলডনের রাজা ফেদেরারের বিদায়

সরাসরি সেটে হেরে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছেন রজার ফেদেরার।ছবি: এএফপি

রজার ফেদেরারের দিন কি তবে ফুরিয়ে গেল? উইম্বলডনে কি শেষ ম্যাচটি খেলে ফেললেন ঘাসের কোর্টের রাজা?

প্রশ্নগুলো উঠে গেছে। ওঠারই কথা। ২০১৮ সালের পর আর কোনো গ্র্যান্ড স্লাম না জেতা সুইস মহাতারকা যে আরেকটি গ্র্যান্ড স্লাম থেকে বিদায় নিলেন খালি হাতে। সেটিও কীভাবে!

উইম্বলডনের যে ঘাসের কোর্টে কখনো ৬-০ গেমে সেট হারেননি, সেই উইম্বলডনে আজ হুবের্ত হুরকাৎসের কাছে সেই অচেনা স্বাদ পেয়েছেন ফেদেরার। কোয়ার্টার ফাইনালের তৃতীয় সেটের ঘটনা এটি। আগের দুই সেটও হেরেছিলেন সুইস মহাতারকা। যার অর্থ, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেন ২০ বারের গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন। তাতে রাফায়েল নাদালকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডটা একান্তই নিজের করে নেওয়ার অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘ হলো ফেদেরারের। ৪০ ছুঁই ছুঁই ফেদেরার আবার গ্র্যান্ড স্লাম জিতবেন, আবার ফিরবেন অল ইংল্যান্ড ক্লাবে, সেই বিশ্বাসী ভক্তের সংখ্যাও দিন দিন কমছে।

ফেদেরারকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছেন হুবের্ত হুরকাৎস।
ছবি: রয়টার্স

২৪ বছর বয়সী হুরকাৎস এবারের উইম্বলডনের আগে কখনোই কোনো গ্র্যান্ড স্লামের তৃতীয় রাউন্ড পেরোতে পারেননি। সেই পোলিশ তরুণ উইম্বলডনে কী দারুণই না খেলছেন! আজ ফেদেরারকে ৬-৩, ৭-৬ (৭/৪), ৬-০ গেমে হারিয়ে তো উঠে গেলেন সেমিফাইনালে। ১৪তম বাছাই হুরকাৎস গতকাল চতুর্থ রাউন্ডে বিদায় করেছেন দ্বিতীয় বাছাই দানিল মেদভেদেভকেও। সেই ম্যাচ জিততে অবশ্য পাঁচ সেটের কঠিন এক ম্যাচ খেলতে হয়েছিল হুরকাৎসকে।

টেনিসের পরিভাষায় ব্যাগেল নামের একটি শব্দ আছে। কোনো সেটে কেউ ৬-০ ব্যবধানে হারলে ব্যাগেল উপহার পেয়েছেন বলা হয়ে থাকে। আজকের আগে ফেদেরার ঘাসের কোর্টে সেই ব্যাগেলের দেখা পেয়েছিলেন সেই ১৯৯৯ সালে। কুইন্স ক্লাবে বায়রন ব্ল্যাক যেটি উপহার দিয়েছিলেন ফেদেরারকে। সেদিন এই হুরকাৎসের বয়স ছিল মোটে দুই বছর।

ফেদেরারকে আজ আরও কয়েকটি ভুলতে বসা স্বাদও দিয়েছেন হুরকাৎস। উইম্বলডন ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বার সরাসরি ৩-০ সেটে ম্যাচ হারলেন ফেদেরার। সুইস মহাতারকা দ্বিতীয়বার এ স্বাদ পেয়েছিলেন ২০০২ সালে, প্রথম রাউন্ডে মারিও আনচিচের কাছে হেরেছিলেন ৬-৩, ৭-৬, ৬-৩ গেমে। ২০০০ সালেও প্রথম রাউন্ডে ইয়েভগেনি কাফেলনিকভের কাছে ফেদেরার হেরেছিলেন ৭-৫, ৭-৫, ৭-৬ গেমে। ফেদেরার অবশ্য তখন ক্যারিয়ার মাত্রই শুরু করেছেন, তখনো দেখা পাননি প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপার।

সব গ্র্যান্ড স্লাম মিলিয়েও মাত্র তৃতীয়বার ৬-০ গেমে সেট হারলেন ফেদেরার। ১৯৯৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ডে প্যাট র‌্যাফটারের কাছে ও ২০০৮ সালে সেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে রাফায়েল নাদাল ফেদেরারকে এ স্বাদ দিয়েছিলেন।

আবার এই গ্রেট খেলোয়াড়কে এখানে খেলতে দেখতে পাব কি না, সেটি আমি বলতে পারছি না।
বরিস বেকার, সাবেক টেনিস তারকা

গত বছর হাঁটুর অস্ত্রোপচারের কারণে টেনিস থেকে ছুটি নিয়েছিলেন ফেদেরার। ফেদেরার গ্র্যান্ড স্লাম টেনিসে ফেরেন এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেন দিয়ে। রোলাঁ গারোর চতুর্থ রাউন্ড থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নিয়েছিলেন ফেদেরার। উইম্বলডনের আগে নিজেকে সতেজ রাখতেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ৩৯ বছর বয়সী ফেদেরার। কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

সেই ফেদেরারের শেষ দেখে ফেলেছেন টেনিস কিংবদন্তি বরিস বেকারও। ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে সাবেক উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন জানিয়ে দিলেন নিজের মতামত, ‘আমি মিস হিট করতে দেখেছি। যা ফেদেরারের সঙ্গে একেবারেই যায় না। কোনো সমস্যা ছিল কি না, সে তা কখনোই বলবে না। তবে আবার এই গ্রেট খেলোয়াড়কে এখানে খেলতে দেখতে পাব কি না, সেটি আমি বলতে পারছি না।’