অল্পের জন্য বিরল কীর্তিতে নাম উঠল না ফেদেরারকে ছোঁয়া জোকোভিচের

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর নোভাক জোকোভিচরয়টার্স

টেনিস ইতিহাসে তাঁর চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম একক জেতেননি কেউ। সেই নোভাক জোকোভিচও কিনা ‘নার্ভাস’ হয়ে পড়লেন দুর্লভ কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে।

গ্র্যান্ড স্লামের নারী এককে ৬-০, ৬-০ গেমে জয়ের উদাহরণের কমতি নেই। প্রতিপক্ষকে একটি গেমও জিততে না দেওয়ার এমন কীর্তিকে ‘ডাবল ব্যাগেল’ বলা হয়। গ্র্যান্ড স্লামে পুরুষ এককটা বেস্ট অব থ্রির। সেখানে প্রথম দুই সেট ৬-০, ৬-০ গেমে জিতলেও টানা তিনটি সেট ৬-০ গেমে জয় পেয়ে ‘ট্রিপল ব্যাগেল’ পাওয়া দুর্লভ ঘটনাই। কতটা দুর্লভ, সেটির প্রমাণ উন্মুক্ত যুগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কখনোই ‘ট্রিপল ব্যাগেল’ না হওয়াটা। অন্য তিনটি গ্র্যান্ড স্লামেও উন্মুক্ত যুগের ৫৫ বছরের ইতিহাসে এমন ‘ট্রিপল ব্যাগেল’ আছে মাত্র পাঁচটি। যার সর্বশেষটি আবার ১৯৯৩ সালের ঘটনা।

আরও পড়ুন
৫৮
গ্র্যান্ড স্লামে সবচেয়ে বেশিবার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার রেকর্ডে রজার ফেদেরারের পাশে বসেছেন নোভাক জোকোভিচ

মেলবোর্নে আজ সেই দুর্লভ কীর্তি ফিরিয়ে আনার খুব কাছেই চলে গিয়েছিলেন ২৪ বারের গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন জোকোভিচ। মার্গারেট কোর্টকে পেছনে ফেলে নারী-পুরুষ মিলিয়েই সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডটা এককভাবে নিজের করে নেওয়ার অভিযানে নামা সার্ব তারকা চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে আদ্রিয়াঁ মানারিনোর বিপক্ষে নির্মম টেনিস খেলে এগিয়ে যান ৬-০, ৬-০ গেমে।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে টানা ৩২ ম্যাচ জিতেছেন জোকোভিচ
রয়টার্স

দুর্লভ ‘ট্রিপল ব্যাগেল’-এর সাক্ষী হওয়ার উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটতে শুরু করেছিল রড লেভার অ্যারেনার গ্যালারিও। কিন্তু তৃতীয় সেটের দ্বিতীয় গেমটা হেরে সব উত্তেজনায় জল ঢেলে দিলেন জোকোভিচই। অনেক দিন পর রড লেভার অ্যারেনায় দিনের আলোয় ম্যাচ খেলা জোকোভিচ এরপর হেরেছেন আরও দুটি গেম। তবে ম্যাচ জিততে বেশি সময় নেননি। বরং ১ ঘণ্টা ৪৪ মিনিটের মধ্যে ৬-০, ৬-০, ৬-৩ গেমে ম্যাচটি জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ছুঁয়ে ফেলেছেন আরেকটি রেকর্ড। এই রেকর্ড গ্র্যান্ড স্লামে সবচেয়ে বেশিবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার। ৫৮ বার শেষ আটে উঠে রজার ফেদেরারের রেকর্ড ছুঁয়েছেন জোকোভিচ। ১৪তম বারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের রেকর্ডও ছুঁয়েছেন টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়। জোকোভিচ ছুঁয়েছেন রাফায়েল নাদাল ও জন নিউকম্বের রেকর্ড। আর সর্বশেষ এই জয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে টানা ৩২তম জয়ও পেয়ে গেলেন ৩৬ বছর বয়সী জোকোভিচ।

আরও পড়ুন

এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শুরুর ম্যাচগুলোতে একটু আড়ষ্টই ছিলেন জোকোভিচ। ঠিক জোকোভিচসুলভ ছিল না জয়গুলো। সেই জোকোভিচ আজ দুর্দান্ত খেলে মানারিনোকে হারানোর পর নিজেকে ফিরে পাওয়ার স্বস্তি পেয়েছেন, ‘গত কয়েক বছরের মধ্যে আমার খেলা অন্যতম সেরা সেট ছিল এই ম্যাচের প্রথম দুই সেট। প্রথম থেকে শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত কী দুর্দান্তই না খেললাম।’

ট্রিপল ব্যাগেলের বিরল কীর্তি না গড়তে পারলেও তা নিয়ে কোনো আফসোস নেই জোকোভিচের। বরং এ নিয়ে একটু মজাই করলেন ম্যাচের পর, ‘আমি সত্যিই গেমটা হারতে চেয়েছিলাম। না চেয়ে উপায় ছিল, স্টেডিয়ামের সবাই যে রকম টেনশন করছিলেন! আমি এসব থেকে মুক্তি চাইছিলাম, চাইছিলাম ম্যাচে মনোযোগ দিতে।’

১১তম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়কে পাখির চোখ করা জোকোভিচ কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন টেলর ফ্রিটজকে। গ্রিক তারকা স্তেফানোস সিৎসিপাসকে হারানো ফ্রিটজ প্রথমবার উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ আটে। দুজনের আগের আট লড়াইয়ের আটটিতেই জিতেছেন জোকোভিচ।

আরও পড়ুন
আমি এখন এক নম্বর, খেলছিও ভালো—এমন অবস্থায় তো টেনিস ছাড়তে চাই না। আমি চালিয়ে যেতে যাই।
নোভাক জোকোভিচ

এবার সংখ্যাটা টানা ৯ হবে কি না জানা যাবে মঙ্গলবার। তবে জোকোভিচ আজ জানিয়ে রাখলেন, এখনই টেনিস ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তাঁর, ‘আমি এখন এক নম্বর, খেলছিও ভালো—এমন অবস্থায় তো টেনিস ছাড়তে চাই না। আমি চালিয়ে যেতে যাই। যখন মনে হবে অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেরাটা দিতে পারছি না আর গ্র্যান্ড স্লাম জয়ে আমি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নই, তখনই হয়তো অবসরের চিন্তাভাবনা করব। তবে ওই ভাবনাও বদলে যেতে পারে। অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে।’

দুর্দান্ত জোকোভিচের দিনে মেয়েদের বিভাগে টিকে থাকা শীর্ষ দশের তিনজন আরিনা সাবালেঙ্কা, কোকো গফ ও বারবোরা ক্রেইচিকোভা উঠে গেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে।

আরও পড়ুন