টেনিস থেকে আর কী পাওয়ার আছে জোকোভিচের

রেকর্ড ২৪টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন নোভাক জোকোভিচএএফপি

নোভাক জোকোভিচের ক্যারিয়ারে অপূর্ণতা বলতে ছিল অলিম্পিক টেনিসের সোনা জিততে না পারাটা। এ মাসের শুরুতে প্যারিসে সেই অপূর্ণতাও দূর করেছেন গ্র্যান্ড স্লাম একক জয়ে পুরুষ টেনিসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। রেকর্ড ২৪টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা, পেশাদার ক্যারিয়ারে ৯৯টি ট্রফি জয়, অলিম্পিকে সোনা জয়, এটিপি র‍্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ১ নম্বরে থাকা জোকোভিচের টেনিস কোর্ট থেকে আর কী পাওয়ার থাকতে পারে!

তবে ভাববেন না আজ শুরু বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্লাম ইউএস ওপেন থেকে কিছু পাওয়ার নেই সার্বিয়ান তারকার। টেনিস থেকে আর কী পাওয়ার আছে, সেটির উত্তর গত শনিবারই যেচে দিয়েছেন জোকোভিচ, ‘মানুষ হয়তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে, “ওই সোনালি পদকটা গলায় তোলার পর তো বাস্তবিক সবকিছুই জিতে গেছেন, আর কী জেতার আছে?” তাড়নাটা আমার এখনো আছে। আমার এখনো লড়াই করার মানসিকতা আছে। আমি এখনো চাই আরও ইতিহাস গড়তে, আর চাই ট্যুরটা উপভোগ করতে।’

খেলাটা যখন টেনিস, আর নামটা যখন জোকোভিচ—যেকোনো টুর্নামেন্টের আগে ধরেই নেওয়া যায়, কোনো না কোনো ইতিহাস ডাকছে তাঁকে। এবারের ইউএস ওপেনটাও ব্যতিক্রম নয়। বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্লামটা জিতলেই যে ইতিহাস। ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে নারী-পুরুষ মিলিয়েই সর্বকালের সেরা হওয়ার সুযোগ ৩৭ বছর বয়সী জোকোভিচের। সেই অভিযানে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকালে প্রথমবার কোর্টে নামবেন জোকোভিচ। এটিপি র‍্যাঙ্কিংয়ের ২ নম্বর খেলোয়াড়ের প্রথম রাউন্ডের প্রতিপক্ষ ১৩৮ নম্বর খেলোয়াড় রাদু আলবোত।

পঞ্চম চেষ্টায় অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন জোকোভিচ
রয়টার্স

‘ছোট’ আরেকটি কীর্তি গড়ারও সুযোগ আছে জোকোভিচের। সেই কীর্তিটি টানা দুবার ইউএস ওপেনের পুরুষ একক জয়ের। সর্বশেষ যে কীর্তি গড়েছিলেন টেনিসের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রজার ফেদেরার। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সুইস তারকা টানা পাঁচবার ইউএস ওপেন জয়ের পর আর কেউ ফ্ল্যাশিং মিডোতে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি।

এরপর কেটে গেছে ১৬ বছর। বছরের সংখ্যাটা নিয়েই একটু বিস্মিত হলেন জোকোভিচ, ‘আমার জানা ছিল না এত লম্বা সময় পার হয়ে গেছে। আশা করছি, এ বছর বদলে যাবে তা। আমি বলতে চাইছি, এটাই লক্ষ্য। ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া ও ট্রফির জন্য লড়াই করার চেষ্টা করাটাই তো সব সময় আমার লক্ষ্য। এ বছরও আমার মানসিকতা ও উদ্দেশ্য এমনই আছে।’

অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতার জন্য যাঁর খ্যাতি, সেই জোকোভিচ গত বছর ইউএস ওপেন জয়ের পর আর চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি গ্র্যান্ড স্লামে। ইউএস ওপেনের মতো বছরের প্রথম তিনটি গ্র্যান্ড স্লামেই ‘২৫ ’-কে সামনে রেখে শুরু করেছিলেন জোকোভিচ। ‘২৫’ যে এখনো পেলেন না জোকোভিচ, তাতে ‘অবদান’ ছিল চোটেরও। হাঁটুর চোটের কারণে ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, এরপর অস্ত্রোপচার করিয়ে মাস না যেতেই উঠে যান উইম্বলডনের ফাইনালে। সেখানে অবশ্য কার্লোস আলকারাজের কাছে হেরে যান জোকোভিচ। তবে তিন সপ্তাহ পর অলিম্পিকের ফাইনালে সেই আলকারাজকে হারিয়েই সোনার পদকটি জিতেছেন সার্বিয়ান তারকা।

‘অলিম্পিকে এই পদকটাই জিতেছি’—ইউএস ওপেন খেলতে গিয়ে ক্যামেরাম্যানদের সামনে জোকোভিচ
এএফপি

যাকে হারিয়ে অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন জোকোভিচ, সেই আলকারাজও ইউএস ওপেন শুরুর আগে বললেন, জোকোভিচের পথেই হাঁটতে চান তিনি। ২১ বছর বয়সেই চারটি গ্র্যান্ড স্লাম জেতা স্প্যানিশ তারকা বলেছেন, ‘জোকোভিচ ক্যারিয়ারজুড়ে যা করে এসেছেন, আমি সেটিই অনুসরণ করতে চাই। সেটি হলো প্রতিনিয়ত তাঁর নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়া, কোর্টে নিরন্তর নিজের সেরাটা দেওয়া।’

আরও পড়ুন

এবারের ইউএস ওপেনের ড্রতে জোকোভিচ ও আলকারাজ পড়েছেন বিপরীত অর্ধে। যার অর্থ, ফাইনালের আগে দুজনের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জোকোভিচের সঙ্গে ফাইনালের আগে দেখা হওয়া সম্ভব নয় শীর্ষ বাছাই ইয়ানিক সিনারেরও।

নোভাক জোকোভিচের মতো পথ চলার কথা বলছেন টেনিসের ভবিষ্যৎ কার্লোস আলকারাজ
এএফপি ফাইল ছবি

তবে কে প্রতিপক্ষ হবে, সেটি নিয়ে না ভেবে জোকোভিচ মুখিয়ে আছেন গ্র্যান্ড স্লামে আরেকবার সর্বস্ব নিংড়ে দিতে, ‘গ্র্যান্ড স্লামগুলোই আমাদের খেলাটার স্তম্ভ। এগুলোই টেনিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ইভেন্ট। তাই আপনি যদি গ্র্যান্ড স্লামে সেরা টেনিস খেলতে নিজেকে উদ্দীপ্ত না করতে পারেন, তবে আর কোথায়বা করবেন।’

আরও পড়ুন