ভালোবাসার প্যারিসে আর না–ও ফিরতে পারেন নাদাল
সাইডলাইন থেকে টেনিস সরঞ্জামগুলো তুলে নিয়েই চারপাশে ঘুরে ঘুরে তাকালেন রাফায়েল নাদাল। সবাই তখন দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাঁকে সম্মান জানাচ্ছিলেন। একটু পর ড্রেসিংরুমের দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলেন। সঙ্গী কার্লোস আলকারাজ সেই মুহূর্তে তাঁর কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিলেন। কিন্তু নাদালের ভেতরের যন্ত্রণা তাতে একটুও কি কমেছে?
টেনিস অঙ্গন তো বটেই, নাদালকে ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বানিয়েছে ভালোবাসার শহর প্যারিসের এই রোলাঁ গারো স্টেডিয়াম। ২২ গ্র্যান্ড স্লামের ১৪টিই সেখানে জিতে হয়েছেন ‘লাল দূর্গের রাজা’। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনাল যে কোর্টে হয়, কালকের ম্যাচটা সেই ফিলিপে শাত্রিয়েতে খেলেছেন। সেখানে তাঁর কতশত স্মৃতি! এমন জায়গা থেকে বিদায় নিতে যে কারোরই কষ্ট হওয়ার কথা। নাদালেরও হয়েছে।
বিদায়? হ্যাঁ, প্যারিসের প্রিয় প্রাঙ্গণ রোলাঁ গারোর কোর্টে নাদালকে আর কখনো না–ও খেলতে দেখা যেতে পারে। ৩৮ বছর বয়সী কিংবদন্তির কথাতে সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
গত সোমবার নোভাক জোকোভিচের কাছে ৬–১, ৬–৪ সেটে হেরে প্যারিস অলিম্পিক টেনিসে ছেলেদের একক ইভেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছেন নাদাল।
আলকারাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাল যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিন ক্রাইচেক ও রাজীব রাম জুটির কাছে ৬–২, ৬–৪ সেটে হেরে ছেলেদের দ্বৈত ইভেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেও ছিটকে পড়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নাদালের অলিম্পিক–যাত্রা যেমন শেষ হলো, তেমনি রোলাঁ গারোতেও সম্ভবত তাঁকে শেষবারের মতো দেখা গেল।
রোলাঁ গারোয় শেষ ম্যাচটি কি খেলে ফেললেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নাদাল বলেছেন, ‘হতে পারে, আসলে আমি জানি না। এখানে (প্যারিসে) যদি শেষবারের মতো খেলে থাকি, তাহলে এটা আমার জন্য অবিস্মরণীয় ও আবেগঘন অনুভূতি। যতবার আমি এই কোর্টে নেমেছি, তাঁরা (দর্শকেরা) আমাকে ভালোবাসা ও সমর্থন দিয়েছেন।’
দ্বৈত ইভেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে নাদাল–আলকারাজের স্পেন হেরে যাচ্ছে বুঝতে পেরেও দর্শকেরা ম্যাচজুড়ে নাদালের জন্য করতালি দিয়েছেন, গলা ফাটিয়েছেন ও গান গেয়েছেন। দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এটা (দর্শকদের উপস্থিতি ও সমর্থন) আমার জন্য বিশেষ ব্যাপার, বিশেষ করে এই জায়গায়। তাঁদের নিয়ে আমার মনে যে আবেগ তৈরি হয়েছে, সে জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানানো যথেষ্ট নয়। আমি জানি না ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে। তবে এটিই যদি শেষবার হয়, তাহলে আমি বলব মুহূর্তগুলো উপভোগ করেছি।’
নাদালকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ রাজীব রাম। তিনি বলেছেন, ‘রোলাঁ গারোয় রাফাই শেষ কথা।’
রোলাঁ গারো থেকে বিদায়ের ইঙ্গিত দিলেও বর্ণাঢ্য টেনিস ক্যারিয়ারের ইতি কবে টানবেন, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি নাদাল। বয়স ও লাগাতার চোট বিবেচনায় নিলে টেনিসকে দেওয়ার মতো তাঁর আর খুব বেশি যে বাকি নেই, সেটা অনুমান করাই যায়। এ মাসেই শুরু হচ্ছে ইউএস ওপেন। বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্লামে খেলবেন কি না, সে ব্যাপারেও নাদাল নিশ্চিত নন বলে গত বুধবার জানান।
কাল অবসর ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিতে আমার কিছু সময় প্রয়োজন। মনে হচ্ছে এটা আমার জন্য কঠিন হবে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে আমি আসলে ফলের চেয়ে আবেগ ও অনুভূতির জন্য খেলছি।’
প্যারিস অলিম্পিকে স্পেনকে পদক এনে দিতে না পারলেও নাদালের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে জুটি বেঁধে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বিত আলকারাজ, ‘নেটের একপাশে রাফার সঙ্গে খেলতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। এটা এমন কিছু, যা আমি কখনোই ভুলব না। তাঁর সঙ্গে খেলা প্রতিটি সেকেন্ড আমি উপভোগ করেছি।’
নাদালের অবশ্য অলিম্পিক নিয়ে আক্ষেপ থাকার কথা নয়। স্পেনকে তো তিনি অনেক আগেই সোনার পদক এনে দিয়েছেন। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকের এককের পর ২০১৬ রিও অলিম্পিকের দ্বৈতে মার্ক লোপেজের সঙ্গে জুটি বেঁধে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এই কিংবদন্তি।