‘পছন্দ না করলেও’ গর্ব নিয়েই টেনিস ছাড়লেন মারে
প্যারিস অলিম্পিক দিয়ে অবসরের ঘোষণাটা দিয়েছিলেন আগেই। গতকাল রাতে সেই অবসরটা নিয়ে ফেললেন অ্যান্ডি মারে। ছেলেদের দ্বৈত ইভেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের টেলর ফ্রিৎজ ও টমি পল জুটির কাছে ৬-২, ৬-৪ গেমে হেরেছে গ্রেট ব্রিটেনের মারে ও ড্যান ইভানস জুটি। চোটের কারণে এর আগে অলিম্পিকের একক ইভেন্ট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন মারে। ফলে গতকাল রাতে দ্বৈত ইভেন্টে হারের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মারের ক্যারিয়ার। এর মধ্যে টেনিসের সোনালি প্রজন্মের আরেকটি অধ্যায়ও শেষ হলো।
র্যাঙ্কিংয়ে সাবেক এক নম্বর এবং তিনটি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী মারে বিদায়বেলায় বলেছেন, ‘নিজের ক্যারিয়ার, অর্জন ও এই খেলায় যতটুকু অবদান রাখতে পেরেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত। অবশ্যই এটা আবেগের। কারণ, এটাই (আমার) শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। তবে এখন আমি সত্যিই খুশি। যেভাবে শেষ হলো, তাতে আমি খুশি। এটা ভালো লাগছে যে অলিম্পিকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী শেষ করতে পেরেছি। কারণ, (চোটের কারণে) গত কয়েক বছরে এর কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।’
সার্বিয়ান কিংবদন্তি ও ২৪টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী নোভাক জোকোভিচ মারের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। ব্রিটিশ এ তারকাকে ‘অবিশ্বাস্য প্রতিদ্বন্দ্বী’ বলে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন জোকোভিচ, ‘টেনিসে সেরা যোদ্ধাদের একজন। আমি নিশ্চিত, তার লড়াই করার চেতনা অনেক প্রজন্মকেই প্রেরণা জোগাবে।’
রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে মারে ছিলেন টেনিসে ‘বিগ ফোরের’ একজন। ২০টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী ফেদেরার ২০২২ সালে অবসর নেন। ২২টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী নাদালও বিদায় নিয়েছেন প্যারিস অলিম্পিক থেকে। প্যারিসে আর তাঁকে না-ও দেখা যেতে পারে, সে বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন স্প্যানিশ কিংবদন্তি। শুধু জোকোভিচই এখনো খেলে যাচ্ছেন এবং গতকাল উঠেছেন অলিম্পিকের সেমিফাইনালেও।
২০১৩ সালে উইম্বলডন এককে জোকোভিচকে হারিয়েই ব্রিটিশদের ৭৭ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছিলেন মারে। তখন এই সময়ের মধ্যে উইম্বলডনে ছেলেদের এককে মারেই ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়ন। তার আগে ২০১২ সালে জিতেছিলেন ইউএস ওপেন। ২০১৬ সালে আবারও উইম্বলডন জেতেন মারে, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে রজার ফেদেরারকে হারিয়ে সোনাও জেতেন। চার বছর পর রিও অলিম্পিকে হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোকে হারিয়ে ছেলে ও মেয়েদের ইভেন্ট মিলিয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিকের একক ইভেন্টে দুটি সোনা জয়ের কীর্তি গড়েন।
সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে ৪৬টি শিরোপা জিতেছেন মারে। প্রাইজমানি হিসেবে আয় করেছেন ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চোটে জর্জরিত ছিলেন। র্যাঙ্কিংয়ে ১১৭তম স্থানেও নেমে গিয়েছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে কোমরে ‘মেটাল হিপ’ নিয়ে খেলছেন। এ বছরের শুরুতে চোট পান অ্যাঙ্কেলেও। এরপর অস্ত্রোপচার করিয়ে অপসারণ করেছেন মেরুদণ্ডের সিস্ট, যে কারণে এবার উইম্বলডনেও খেলতে পারেননি।
বিদায়বেলায় মারেকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বর্তমান উইম্বলডন ও ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়ন কার্লোস আলকারাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আলকারাজ লিখেছেন, ‘একই কোর্টে তোমার সঙ্গে দাঁড়ানোটা ছিল বিশেষ কিছু। কিংবদন্তিতুল্য ক্যারিয়ারের জন্য এবং সবার উদাহরণ হয়ে ওঠার জন্য অভিনন্দন। তুমি সব সময়ই একজন সমর্থককে পাবে এখানে।’
আর মারে নিজে এক্সে লিখেছেন, ‘টেনিসটা এমনিতেও কখনোই পছন্দই করিনি।’
মারের কথাটির অর্থ কী, তা আপনিই বুঝে নিন!