>
আটটি গ্র্যান্ড স্লাম, একটি অলিম্পিক সোনা। তাঁর পরিচয় অবশ্য শুধু এতে সীমাবদ্ধ নয়। শুধু খেলায় নয়, চলনে-বলনে, পোশাক-আশাকে ছিলেন সত্যিকার এক বর্ণাঢ্য চরিত্র। পেশাদার টেনিস ছেড়েছেন প্রায় এক যুগ আগে, কিছুদিন আগে নোভাক জোকোভিচের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। স্ত্রী কিংবদন্তি টেনিস খেলোয়াড় স্টেফি গ্রাফ আর দুই ছেলেমেয়ে জাডেন ও জাজকে নিয়ে জন্মস্থান লাস ভেগাসেই বাস। লাস ভেগাসেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আগাসি কথা বলেছেন একেবারেই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে
প্রশ্ন: সবচেয়ে খুশি হন কখন?
আন্দ্রে আগাসি: প্রতিবার যখন আমার দুই সন্তানকে দেখি। জাডেন আর জাজ। একজনের বয়স ১৩, অন্যজনের ১১। পড়াশোনা হোক বা খেলাধুলা, সবকিছু ওরা এত মন দিয়ে করে।
প্রশ্ন: এখনো বেঁচে আছেন, এমন কোনো ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আপনি মুগ্ধ এবং কেন?
আগাসি: আমার সুন্দরী স্ত্রী। কারণ, জীবনের প্রতিটি ঘণ্টায় সে তার মূল্যবোধ মেনে চলে। সে ক্লান্তিহীন ও নির্ভীক। সে তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারে খুবই পরিষ্কার। স্টেফি আসলেই খুব প্রশংসনীয় এক ব্যক্তিত্ব।
প্রশ্ন: আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি কী?
আগাসি: আমার ছেলের বয়স যখন চার, ও আমাকে একটা মালা বানিয়ে দিয়েছিল। একেবারে সাধারণ একটা দড়ি আর কিছু অক্ষর দিয়ে বানানো, যাতে লেখা—‘ড্যাডি রকস’।
প্রশ্ন: মৃত কোনো কিছুতে যদি প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়, কী বেছে নেবেন?
আগাসি: নেলসন ম্যান্ডেলার চেতনা। এখন তো ওটা মৃতই মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনার জীবন বদলে দিয়েছে, এমন কোনো বই?
আগাসি: জে আর মোয়েরিঙ্গারের (পুলিৎজার জেতা আমেরিকান সাহিত্যিক ও সাংবাদিক) দ্য টেন্ডার বার। এই বই পড়ে আমি বুঝেছি, একজনের জীবনের গল্প অন্যজনের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। আমার ওপর ওই বইয়ের দারুণ প্রভাব পড়েছিল। যে কারণে আমি মোয়েরিঙ্গারের সঙ্গে মিলে আমার আত্মজীবনী ওপেন লিখেছি।
প্রশ্ন: বেড়ে ওঠার সময় আপনি কী হতে চেয়েছিলেন?
আগাসি: আমি কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি, টেনিসই আমার নিয়তি ছিল। খুব কম বয়সেই আমি জানতাম, আমি টেনিস খেলোয়াড় হব। আমার বাবা টেনিস পছন্দ করতেন এবং ছোটবেলায় ইরানে থাকার সময় টেনিস খেলতেনও। ‘আমেরিকান ড্রিম’ যেটাকে বলা হয়, সেটা পূরণের সবচেয়ে দ্রুত পথ মনে করতেন তিনি টেনিসকে।
প্রশ্ন: আপনার ইচ্ছাপূরণের তালিকায় সবার ওপরে কী আছে?
আগাসি: আমার ছেলেমেয়েদের আফ্রিকা নিয়ে যাওয়া। গত গ্রীষ্মে অবশ্য আমরা সেটা করেছি।
প্রশ্ন: এমন কোনো কাজ আছে যেটা করে খুব আনন্দ পান, আবার একটু দ্বিধাও কাজ করে?
আগাসি: ভীষণ তুষারপাতের মধ্যে স্নো বোর্ডিং করার জন্য আমি যেকোনো দূরত্ব পাড়ি দিতে রাজি।
প্রশ্ন: জীবনের সবচেয়ে বড় হতাশা কোনটা?
আগাসি: বাকি দুই-তৃতীয়াংশের প্রস্তুতি না নিয়েই জীবনের এক-তৃতীয়াংশ খেলাধুলায় কাটিয়ে দেওয়া! খেলা ছাড়ার পর আমার শরীরের যে অবস্থা ছিল, সেই জায়গা থেকে এই উপলব্ধিটা এসেছে। আমার শরীর আর কখনো ভালো অবস্থায় ফিরে যায়নি।
প্রশ্ন: যদি অতীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত, কী করতেন?
আগাসি: আমি অতীতে ফিরতে চাই না। আমার জীবন যত এগিয়েছে, তত সুন্দর হয়েছে।
প্রশ্ন: অবসরে কী করেন?
আগাসি: আমি রান্না করতে পছন্দ করি। এ ছাড়া আমার ছেলেমেয়েরা তাদের পছন্দের কিছু করছে—এটা দেখতেও ভালো লাগে।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের যেকোনো একটা দিক উন্নত করার সুযোগ থাকলে কী করতেন?
আগাসি: নমনীয়তা। আর চোটমুক্ত একটা শরীর চাইতাম।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন কোনটা?
আগাসি: আমাকে বিয়ে করতে স্টেফিকে রাজি করানো।
প্রশ্ন: মানুষ আপনাকে কীভাবে মনে রাখলে খুশি হবেন?
আগাসি: এমন একজন, যে জন্মের সময় পৃথিবীটা যে অবস্থায় ছিল, চলে যাওয়ার সময় তার চেয়ে ভালো অবস্থায় রেখে গেছে।
প্রশ্ন: জীবন থেকে আপনি সবচেয়ে বড় কী শিক্ষা পেয়েছেন?
আগাসি: যে জিনিসটা তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, শুধু সেটাই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করো। যেটা নিয়ন্ত্রণ করার মতো নয়, সেটার পেছনে শক্তি নষ্ট কোরো না।
প্রশ্ন: এখনকার দিনগুলোতে আপনি কোথায় থাকতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন?
আগাসি: আমার বাচ্চাদের স্কুলের বাইরে পার্কিংয়ে, যেখানে আমি ওদের জন্য অপেক্ষা করি।