সাক্ষাৎকারে বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মানিক
‘ডিফেন্ডার হয়েও এ নির্বাচনে আমি গোল করতে চাই’
খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন রাইট ব্যাক। গোল আটকানোই ছিল তখন বড় কাজ। তবে আগামী ৩ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচনের মোড়কে জীবনের নতুন ‘বড় ম্যাচে’ প্রতিপক্ষের কঠিন রক্ষণ ভেঙে গোল করতে চান শফিকুল ইসলাম (মানিক)। নির্বাচন থেকে বাদল রায় সরে গেলেও ‘গোল’ করার লক্ষ্যে প্রবল বেগে এগোচ্ছেন সাবেক তুখোড় স্ট্রাইকার বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তাঁকে হারানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে বড় চমক হয়ে আসেন শফিকুল। বাফুফে নির্বাচনে দুই সভাপতি প্রার্থীর সাক্ষাৎকারের প্রথম দিনে শফিকুল জানিয়েছেন তাঁর নির্বাচনী ভাবনার কথা—
প্রশ্ন :
বাফুফে নির্বাচনে আপনাকে সভাপতি প্রার্থী হতে দেখে সবাই অবাক। আপনি একজন সাবেক ফুটবলার ও কোচ। বাফুফে সভাপতি পদে কেন প্রার্থী হলেন?
শফিকুল ইসলাম: এটি আসলে পরিকল্পনা করে হয়নি। বলতে পারেন হঠাৎই। মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম দুদিনে দেখলাম কেউ আসছে না। কিন্তু আমি ভাবছিলাম ফুটবলে পরিবর্তন দরকার। সেই পরিবর্তনের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েই আমার সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া।
প্রশ্ন :
আপনি বলেছেন, মনোনয়নপত্র বিক্রির শেষ দিনে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ভাবলেন সভাপতি পদে প্রার্থী হবেন। এত বড় পদে প্রার্থী হওয়া কি শেষ দিনে এসে ভাবার বিষয়?
শফিকুল: জীবনে হঠাৎ করেই মানুষ বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। মনোনয়নপত্র বিক্রির দ্বিতীয় দিন রাতে ভাবলাম, পরদিন সকালে সিদ্ধান্ত নেব মনোনয়নপত্রটা কোন পদের জন্য কিনব। সকালবেলা স্ত্রীকে বললাম, ‘আমি মনোনয়নপত্র কিনতে যাব।’ শুনে উনি বললেন, এসব সদস্যপদ-টদে যাওয়ার কী দরকার (হাসি) ! আমাকে এসবে না যেতে বললেন। তখন আমি আমার আরেকজন শুভাকাঙ্ক্ষীকে ফোনে বললাম, ‘আমি বাফুফের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তুলব। তবে কোন পদের জন্য, সেটা বলিনি। উনি বলেন, ‘ধুর, কিনলে সবচেয়ে বড়টাই কিনেন।’ এই অনুপ্রেরণা পেয়ে সভাপতি পদেই মনোনয়নপত্র কিনে ফেললাম।
প্রশ্ন :
খেলোয়াড়ি জীবনে ডিফেন্ডার হিসেবে গোল ঠেকাতেন বেশি। বাফুফে নির্বাচনে লড়ছেন একজন জাত স্ট্রাইকারের বিপক্ষে। ১২ বছর ধরে যিনি বাফুফে সভাপতি এবং প্রভাবশালী। তাঁকে সরিয়ে সভাপতির চেয়ারে বসা মানে আপনার জন্য খাড়া পর্বতে ওঠার মতো ব্যাপার। কী মনে করেন?
শফিকুল: অবশ্যই। তবে আমি খেলোয়াড়, খেলার কৌশল জানি। আমি সালাউদ্দিন ভাইয়ের বিপক্ষে খেলেছি। তাঁকে আটকেছি। প্রথম জীবনে অবশ্য স্ট্রাইকার হিসেবেই খেলতাম। সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে অনুশীলন করারও সুযোগ হয়েছে। ওনার সাংগঠনিক কৌশল সম্পর্কে আমার হয়তো ধারণা কম। তবে একজন কোচ হিসেবে খেলোয়াড় সালাউদ্দিনকে আটকানোর ছক আমার জানা। তবে কাউকে আটকানো শুধু নয়, ডিফেন্ডার হলেও এই নির্বাচনে আমি গোল করতে চাই। খেলোয়াড়ি জীবনে ওভারল্যাপ করতাম, গোলের রাস্তা চিনি। আন্তর্জাতিক গোলও আছে আমার।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: জীবনে অনেক বড় ম্যাচ খেলেছেন, বাফুফের নির্বাচনের এই ‘ম্যাচ’ আসলে কতটা বড়?
শফিকুল: (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ঘাসের ওপর হাঁটতে হাঁটতে) এই মাঠে, এই ঘাসে আমি অনেক বড় ম্যাচ খেলেছি। ব্রাদার্সের অধিনায়ক ছিলাম (ক্লাবটিতে খেলেন ১৯৭৯-১৯৮৫), মোহামেডানে খেলেছি (১৯৮৬-১৯৮৯)। সাফল্য পেয়েছি। কোচ হিসেবেও সাফল্য আছে। আমার বিশ্বাস, এই বড় ম্যাচেও জিতব। খেলবেন তো আসলে কাউন্সিলররা। নির্দিষ্ট দিনে যেকোনো কিছুই হতে পারে। সবাই হয়তো ভাবছেন, ‘হেভিওয়েট’ সালাউদ্দিন ভাইয়ের বিপক্ষে আমি ‘আন্ডারডগ’। তবে আমার একটা ক্লিন ইমেজ আছে। এটি কাজে আসবে নিশ্চয়ই।
প্রশ্ন :
আপনাকে কাজী সালাউদ্দিনের ছায়া প্রার্থী বলেন অনেকে। তিনিই আপনাকে দাঁড় করিয়েছেন বলেও গুঞ্জন আছে। অনেকে ভাবেন, আপনি আলোচনায় থাকতে নির্বাচনে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত আসলেই থাকবেন তো নির্বাচনে?
শফিকুল: ভোটাররা আমাকে ভোট দেবে বলছেন। কাজেই ভোটারদের প্রতারিত করব কেন? আমি আছি, থাকব অবশ্যই।
প্রশ্ন :
সালাউদ্দিনবিরোধী পরিষদ এখনো আপনাকে তাদের সঙ্গে নেয়নি। আপনি একা যুদ্ধের মাঠে কীভাবে এগোচ্ছেন?
শফিকুল: নিজের মতো এগোচ্ছি এবং স্বস্তিতে আছি। কাউন্সিলররা বদল চান। সালাউদ্দিন ভাইকে তাঁরা আর ভোট দেবেন না। চয়েস ইজ ওয়ান—শফিকুল ইসলাম মানিক। দম্ভ নয়, এটাই বাস্তব। তাই কোনো প্যানেল আমাকে নিল কি না, গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা নির্বাচনী কৌশলও হতে পারে।
প্রশ্ন :
আপনার জন্ম ঢাকার শুক্রাবাদে। আবাহনী মাঠে ছোট থেকেই খেলেছেন এবং কাজী সালাউদ্দিনকে কাছ থেকে দেখেছেন। সেই সালাউদ্দিনকে সরিয়ে বাফুফে সভাপতির চেয়ারে বসা কেন দরকার আপনার? আপনি তো একজন কোচ...
শফিকুল: হ্যাঁ, আমি গত লিগেও শেখ জামালের কোচ ছিলাম। এখন বাফুফে সভাপতি হতে চাই; কারণ গত ১২ বছর ওই চেয়ারে থাকা মানুষটি ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রশ্ন :
কিন্তু শুধু বাফুফের দিকেই সমালোচনার তির কেন? ফুটবল উন্নয়নের অন্যতম অনুষঙ্গ ক্লাব, জেলাসহ অন্যরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে না?
শফিকুল: প্রশ্নটির সঙ্গে একমত নই। কারণ, আপনি যখন ইশতেহার দিয়ে বলছেন এটা করব, ওটা করব; আপনি অন্যদের দোষ দিতে পারবেন না। ব্যর্থতার দায় নিয়ে আপনার উচিত সরে যাওয়া। চেয়ারে বসলে কাজ করতেই হবে। আমি যেমন ১৯৮৯ সালে ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক হয়ে অনেক কাজ করেছি। আমি জানি কী করতে হবে। ঢাকার লিগ, জেলার লিগসহ দেশের সামগ্রিক ফুটবল উন্নয়নের পাশাপাশি তৃণমূলে বেশি নজর দেব। মঙ্গলবার (আজ) ইশতেহারে বিস্তারিত বলব। জয় নিয়েই বের হব ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্ন :
বাফুফে সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিন ব্যর্থ হলে আপনি এত দিন কথা বলেননি কেন?
শফিকুল: আমি যেহেতু কোচ, আমার সীমাবদ্ধতা ছিল। তবে কখনো কখনো অনিয়ম নিয়ে কথা বলে শোকজও খেয়েছি (হাসি)।
প্রশ্ন :
সভাপতি পদে নির্বাচিত হলে আপনার প্রথম কাজ কী হবে?
শফিকুল: বিগত দিনে দেখেছি, বাফুফের ২১ জন সদস্যের মধ্যে অনেকগুলো গ্রুপ। আমি এটা বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ ফেডারেশন চাই। রুটিন কাজগুলো আগে করব। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, পাইওনিয়ার লিগ আয়োজন—এগুলো ফেডারেশনের রুটিন কাজের মধ্যে পড়ে। দুঃখজনক হলো, এগুলোও নিয়মিত হয়নি এই ১২ বছর।
প্রশ্ন :
আগামী ৪ বছরে ফিফা র্যাঙ্কিং–এ ১৫০–এর আশপাশে আনতে চান সালাউদ্দিন। আপনার লক্ষ্য কী?
শফিকুল: আমি ওভাবে বলব না। তবে এটা বলব, ১২ বছর আগে আমরা যে ভালো অবস্থায় ছিলাম, সেখানে ফিরিয়ে আনব। তারপর ভাবব আর কীভাবে উন্নতি করা যায়।
প্রশ্ন :
গত ১২ বছর প্রিমিয়ার লিগ হয়েছে নিয়মিত। পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরও মোটামুটি মাঠে ছিল। কিন্তু নিচের দিকের লিগগুলো ছিল চরম অনিয়মিত। জেলা লিগও তাই। অনেক জায়গাতেই নামকাওয়াস্তে লিগ হয়েছে। এত বছরেও দেশের কোনো ফুটবল একাডেমি নেই। আপনি দেশের সামগ্রিক ফুটবল উন্নয়ন নিয়ে কী ভাবছেন?
শফিকুল: তৃণমূলের ফুটবলই আসল। সেটিই আমাদের ফুটবলের মূল ভিত্তি। নির্বাচিত হলে জেলার দিকেও ভালোভাবে নজর দেব।
প্রশ্ন :
কাজী সালাউদ্দিন পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৬টি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আপনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে কিছু বলছেন না কেন?
শফিকুল: ইশতেহার দিয়ে কাজ না করলে কোনো লাভ নেই। অতীতে আমরা ইশতেহার দেখেছি, কিন্তু কাজ দেখিনি। আমি যা বলব, সেটা করতে চাই। শুধু শুধু ফালতু প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশের ফুটবলারদের সঙ্গে প্রতারণা করব না। মঙ্গলবার (আজ) আমার ইশতেহার দেখলেই একটা ধারণা পাবেন।
প্রশ্ন :
বাফুফের নির্বাচন মানে টাকার খেলা। ভোটারদের কাছে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে বলে সরব আলোচনা ফুটবল অঙ্গনে। ব্যাপারটা কীভাবে দেখছেন?
শফিকুল: টাকা দিয়ে সব হয় না। আমার টাকা নেই। তবে ভোটারদের ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসাই চাই আমি। সবার দোয়া প্রত্যাশী।