সাক্ষাৎকারে নাফিসা তাবাসসুম
‘অলিম্পিকে পদক জিততে চাই’
বাংলাদেশের শুটিংয়ে এক দিক দিয়ে তিনিই প্রথম। আন্তর্জাতিক শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের (আইএসএসএফ) সরাসরি আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে প্রথম পদক জিতেছেন বিকেএসপির শুটার নাফিসা তাবাসসুমই। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় চলমান আইএসএসএফ গ্রাঁ প্রিতে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ব্রোঞ্জ জেতার পর নাফিসার অবদান আছে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের মিশ্র দলগত ও মেয়েদের দলগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতায়ও। জাকার্তা থেকে মুঠোফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাফিসা জানালেন তাঁর ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের কথা—
প্রশ্ন :
আন্তর্জাতিক অভিষেকেই তিনটি পদক—জাকার্তায় পদক জয়ের ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?
নাফিসা তাবাসসুম: আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। নতুন কোচ (ইরানের মোহাম্মদ জায়ের রেজাই) এসে নতুনভাবে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো মানার চেষ্টা করেছি। তিনটি পদক জিততে পেরে আমি খুশি।
প্রশ্ন :
গত বছর বাংলাদেশ গেমসে সোনা জিতেছিলেন। হামিদুর রহমান জাতীয় যুব শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপেও জেতেন সোনার পদক। এসব সাফল্য নিশ্চয়ই আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে...
নাফিসা: শুরুতে আমি ৫০ মিটারে অংশ নিতাম। ২০১৭ সাল থেকে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নিচ্ছি। ২০১৯ সালের কাঠমান্ডু এসএ গেমসে চতুর্থ শুটার হিসেবে গিয়েছিলাম। রেঞ্জে উঠতে না পারায় খুব মন খারাপ হয়েছিল। আমার জায়গায় রত্না আপু (শারমিন আক্তার) ছিলেন। উনি আমাকে বলেছিলেন ধৈর্য ধরতে। সুযোগ পেলে যেন নিজেকে প্রমাণ করি। এখানে মনে হয় সেটা করতে পেরেছি।
দুজনই খেলোয়াড় হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। কখনো আমার পারফরম্যান্স খারাপ হলে অনিক (জাকের আলী) আমাকে পরামর্শ দেয়। এবার বাংলাদেশ গেমসে সোনা জেতায় ওর অবদান ছিল অনেক। সারাক্ষণ উৎসাহ দিয়েছে। গেমসের সময় সারাক্ষণ রেঞ্জে আমার পাশে পাশে ছিল। আবার অনিক কখনো খারাপ খেললে আমি সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন :
২০১০ এসএ গেমসে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে শারমিন সোনা জেতার পর এই ইভেন্টে আর কোনো আন্তর্জাতিক সাফল্য নেই বাংলাদেশের। শারমিনের জায়গাটা কি নিতে পারবেন?
নাফিসা: রত্না আপু, সাদিয়া (সৈয়দা সাদিয়া পারভীন) আপুদের পর আসলেই কেউ সেভাবে উঠে আসেনি। কিন্তু আমি নিজেকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার ওপর ফেডারেশন যে আস্থা রেখেছে, সেটার প্রতিদান দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
প্রশ্ন :
আপনার স্বামী জাকের আলী তো একজন ক্রিকেটার। খেলোয়াড় দম্পতি হিসেবে আপনাদের সম্পর্কের রসায়নটা কেমন?
নাফিসা: দুজনই খেলোয়াড় হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। কখনো আমার পারফরম্যান্স খারাপ হলে অনিক (জাকের আলী) আমাকে পরামর্শ দেয়। এবার বাংলাদেশ গেমসে সোনা জেতায় ওর অবদান ছিল অনেক। সারাক্ষণ উৎসাহ দিয়েছে। গেমসের সময় সারাক্ষণ রেঞ্জে আমার পাশে পাশে ছিল। আবার অনিক কখনো খারাপ খেললে আমি সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন :
এবারের বিপিএলে তো খুলনা টাইগার্সের হয়ে খেলছেন জাকের আলী। ক্রিকেট কি দেখেন?
নাফিসা: অনিকের (জাকের আলী) ম্যাচ থাকলে টেলিভিশনের সামনে বসি। তবে আমার অনুশীলন বাদ দিয়ে নয় (হাসি)।
প্রশ্ন :
আপনারা দুজনই তো বিকেএসপিতে পড়তেন। সেখানেই নিশ্চয়ই পরিচয়...
নাফিসা: হ্যাঁ, সেখানেই পরিচয়। অনিকই আমাকে প্রথম ভালো লাগার কথা জানায়। তবে ২০২০ সালে দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে।
প্রশ্ন :
আপনার শুটিংয়ের শুরু কি বিকেএসপিতেই?
নাফিসা: আমাদের বাড়ি দিনাজপুরে। আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, বাবা একদিন আমাকে দিনাজপুর শুটিং ক্লাবে নিয়ে গেলেন। প্রথম দিনেই শুটিংটা ভালো লেগে যায়। বাবাকে বলে সেখানে কিছুদিন অনুশীলন করি। এরপর ২০১২ সালে বিকেএসপিতে শুটিংয়ে ভর্তি হই। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছি।
প্রশ্ন :
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আপনার সবেমাত্র শুরু। শুটিং নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
নাফিসা: কোনো কোটার ভিত্তিতে নয়, আমি যোগ্যতা দিয়েই অলিম্পিকে যেতে চাই। অলিম্পিকে পদক জিততে চাই। এর আগে অবশ্যই এসএ গেমসে আমাকে সোনা জিততে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বেশি বেশি খেলাটা জরুরি।