সাকিবের শিশির, শিশিরের সাকিব—দুজনের ভালোবাসার গল্প
সাকিব আল হাসান ও উম্মে আহমেদ শিশিরের বিয়ের দিনটার একটা বিশেষত্ব ছিল। তিনটি ‘১২’ মিলিয়ে সেই তারিখ—১২.১২.১২। সেই বিয়ের মাস দুয়েক পর চট্টগ্রামে উৎপল শুভ্রর নেওয়া এই সাক্ষাৎকারে সেই বিয়ে, সংসারজীবন ও এর আগে শিশিরের সঙ্গে প্রেম নিয়ে প্রথম কথা বলেছিলেন সাকিব। প্রথম আলোতে ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারটি আবারও ফিরিয়ে আনার উপলক্ষ তো অনুমান করতেই পারছেন—আজ ভালোবাসা দিবস।
ব্যাচেলর জীবন আর বিবাহিত জীবন তো পুরোপুরি ভিন্ন দুই অধ্যায়। বড় পরিবর্তন কী মনে হচ্ছে?
সাকিব আল হাসান: খুব একটা পরিবর্তন যে হয়েছে, তা মনে হচ্ছে না। ব্যস্ত সময় কাটছে। ফ্যামিলি লাইফটা কী, বাড়তি কোনো দায়িত্ব আছে কি না, এসব বুঝতে পারছি না। যে কারণে আমার আলাদা কোনো ফিলিংস নেই। মনে হচ্ছে, যেমন ছিলাম, এখনো একই রকম আছি।
তারপরও যদি একটা পরিবর্তন বলতে বলি...
সাকিব: না, এমন কিছু নেই।
বললেই হলো! কিছু তো আছেই। আগে হয়তো তালা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকতেন। এখন কেউ দরজা খুলে দেয়...
সাকিব: (হাসি) আমার কাছে তো একই লাগে। সত্যি কথা, আমার কাছে মনে হয়নি এমন কোনো চেঞ্জ আসছে। হয়তো পরে হবে, তবে এখন পর্যন্ত সে রকম পরিবর্তন নেই।
১২.১২.১২ তারিখে বিশ্বজুড়ে অনেক বিয়ে হয়েছে। এই দিনেই বিয়ে করার কথাটা কি আগেই প্ল্যান করে রেখেছিলেন?
সাকিব: অনেক আগে থেকে প্ল্যান ছিল না। বিয়ে ঠিক হয়েছে...যেহেতু ও রকম সময়েই হওয়ার কথা ছিল, সামনে ওই ডেটটাও ছিল, ওই কারণেই...। এই তারিখে বিয়ে করতেই হবে, এমন কিছু ছিল না।
২.১২.১২-এর আলাদা কোনো মহিমা আছে আপনার কাছে?
সাকিব: না।
আপনি বিয়ে করায় বাংলাদেশের নারীকুলে যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, সেটি তো জানেন?
সাকিব: না। আমি তেমন কোনো রি-অ্যাকশন পাইনি। আসলে সেভাবে তো বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আমি আমার নিজের জিনিস নিয়ে ব্যস্ত। আগেও ব্যস্ততা ছিল। এখনো ব্যস্তই আছি। যে কারণে সেভাবে কিছু বুঝতে পারছি না। মাঠে তো এখনো দেখি, সবাই ভালোই সাপোর্ট করে। তাদের মধ্যে মেয়েরাও আছে (হাসি)।
প্রথম আলোর স্যাটায়ার সাময়িকী রস+আলো দেখেছিলেন—যেখানে আপনার বিয়ে নিয়ে ফেসবুক থেকে মেয়েদের কিছু মন্তব্য তুলে দেওয়া হয়েছিল?
সাকিব: দেখেছি। মজাই লেগেছে। (বিব্রত হাসি) এসব নিয়ে আমি অত চিন্তা করি না তো...
কে বলেছে, খেলা বাদ দিয়ে এসব নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে! শুধু আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলেই হবে। পরের প্রশ্ন, আপনার জন্য অনেক মেয়ে পাগল ছিলেন। আপনি একজনের জন্য পাগল হয়েছেন। কী দেখে?
সাকিব: জানি না...ও রকম করে আসলে চিন্তা করিনি। কেন পছন্দ করলাম তার কোনো নির্দিষ্ট কারণ আসলে নেই। এই কারণে পছন্দ করলাম, এই কারণে না, এমন কিছু নয়। তবে ক্রিকেট বোঝে না, এটা ভালো লাগে।
পত্রপত্রিকায় এসেছে, ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সময় আপনাদের প্রথম সামনাসামনি দেখা। এটা কি ঠিক? প্রথম দেখার স্মৃতিটাও শুনতে চাই।
সাকিব: আরে, এগুলো কী...বাদ দেন তো...(হাসি)।
প্রথম দেখার কথা মনে নেই, বউ এটা জানলে কিন্তু বিপদে পড়বেন!
সাকিব: মনে থাকা না-থাকা পরের কথা...এসব কি বলা যায় নাকি! আসলে আমি এসব নিয়ে খুব একটা ভাবি না (হাসি)।
আরে, আমিই কি ভাবি নাকি! মানুষ জানতে চায়, এ কারণেই না খেলা বাদ দিয়ে আপনার সঙ্গে এসব কথা বলছি....
সাকিব: (খুব তাড়াহুড়ো করে) ইংল্যান্ডে দেখা হয়েছে, লন্ডনে দেখা হয়েছে...এই তো!
আরেকটু বিস্তারিত বলেন না, কোথায়, কীভাবে বা কোন প্রোগ্রামে দেখা? সিনেমার নায়ক-নায়িকার মতো নিশ্চয়ই রাস্তায় ধাক্কা লেগে পরিচয় নয়...
সাকিব: না, রাস্তায় না। প্রোগ্রামেও না। আগে থেকেই পরিচয় ছিল, দেখা হয়নি। ও আমেরিকা থেকে লন্ডনে এসেছিল, আমি ওই সময় লন্ডনে ছিলাম। তো ওভাবে দেখা।
পরিচয়টা কীভাবে?
সাকিব: ফেসবুকে।
মানে শিশির ফেসবুকে আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন?
সাকিব: হ্যাঁ, পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে।
ইন্টারেস্টিং! তা উনি নাকি ক্রিকেট বোঝেন না, তাহলে আপনাকে কীভাবে চিনতেন?
সাকিব: না, জানত যে ক্রিকেট খেলি। ক্রিকেট বোঝে না বলতে...খেলা তো সবাই দেখে, সবাই তো আর বোঝে না, জানে না। ছয়-চার এটা তো দুনিয়ার যে কেউই বোঝে। ক্রিকেট কম বোঝে। তো দেখলাম, ভালো। কম বোঝা মানুষ আমার ভালো লাগে। খেলা শেষে ফোন করলে কেমন করেছি তা জিজ্ঞেসও করে না।
আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর কারণটা বলেননি?
সাকিব: হুঁ, বলেছে।
বলেন না একটু...
সাকিব: (হাসি) না...(হাসি)।
আরে, বলেন না, আমার ইন্টারভিউটা একটু ভালো হোক। আর এসব তো তেমন কিছু গোপন কথা না...কী কারণে আপনাকে তাঁর এত ভালো লাগল?
সাকিব: কী জানি! আমার আসলে এত কিছু জিগ্যেস-টিগ্যেস করতে ভালো লাগে না। এত খোঁচাখুঁচি...আমি এগুলো নিয়ে এত বেশি চিন্তাভাবনাও করি না। জিজ্ঞেসও করতে ইচ্ছা করে না।
এটা কি এখন জিজ্ঞেস করে জানার ব্যাপার...এত দিন প্রেম করলেন, আগেই তো জানার কথা...
সাকিব: এটা ও-ই ভালো বলতে পারবে (হাসি)। আমি কী বলব...
কিন্তু আপনি তো আগেই বলে দিয়েছেন, শিশিরের সঙ্গে কথা বলতে দেবেন না। ঠিক আছে, আপনার কাছে ওঁর সবচেয়ে কী ভালো লেগেছিল?
সাকিব: ওই যে বললাম না, ক্রিকেট কম বোঝে। তো দেখলাম ভালো। কম বোঝা মানুষ আমার ভালো লাগে।
মানে ক্রিকেট নিয়ে বেশি কথা বলে না...
সাকিব: বেশি না, বলেই না। খেলা শেষে ফোন করলে কেমন করেছি তা জিজ্ঞেসও করে না।
উনি কি ক্রিকেটার সাকিবের ফ্যান ছিলেন?
সাকিব: না, সেভাবে না।
আপনার খেলাটেলাও দেখেননি?
সাকিব: না, যত দূর আমি জানি।
তাহলে আপনাকে চিনলেন কীভাবে?
সাকিব: যেটা হয়েছে, ২০১১ বিশ্বকাপে আমি বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন ছিলাম। তখন যত এক্সপোজার হয়েছে, তাতে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ টিমের ক্যাপ্টেনকে কে না চিনবে! এই তো এভাবেই চিনেছে।
হানিমুনে গেলেন না যে...
সাকিব: দেখি, সময় হলে যাব।
মানে কী, হানিমুনের সময় বের করতে পারেননি?
সাকিব: না। আমি বললাম না, আমার ব্যস্ততা তখনো ছিল, এখনো আছে। বিয়ে করার পরদিন থেকেই আমি ব্যস্ত। খেলিনি, ঠিক আছে। তবে আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম।
শুভ্র: হানিমুনে কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা? ‘রিচ অ্যান্ড ফেমাস’রা যেসব জায়গায় যায়, তেমন কোথাও?
সাকিব: আগে দেশ ঘুরি ঠিকভাবে, তারপর না বিদেশ। আমি তো দেশই ঘুরিনি সেভাবে।
মানে হানিমুন দেশেই...কোথায়?
সাকিব: জানি না। আমার আসলে ফিক্সড কোনো জিনিস ভালো লাগে না। হঠাৎ মন চাইল, কোথাও চলে গেলাম। আগে থেকে প্ল্যান করে, গোছগাছ করে কিছু করতে ভালো লাগে না।
কিন্তু বিয়ের পরের এ সময়টা তো আর ফেরত আসবে না। হানিমুনটা কি করে ফেলা উচিত ছিল না?
সাকিব: আমার এগুলো নিয়ে এত বেশি চিন্তাভাবনা নেই। যে স্মৃতি ধরে রাখতে হবে, সারা জীবন মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতি বানাতে হবে। আমার মনে হয়, জীবন চলছে, চলুক...
শুভ্র: রোমান্টিসিজম জিনিসটা কি একটু কম আপনার মধ্যে?
সাকিব: (হাসি) আমি কেমনে বলব! আমার পক্ষে বলা ডিফিকাল্ট না?
আমি বলছি, কারও মধ্যে হয়তো ভালোবাসার প্রকাশটা খুব বেশি। আবার কেউ হয়তো একটু চাপা...মনে আছে, মুখে সেটির প্রকাশ নেই। আপনি কেমন?
সাকিব: আসলে এসব আমার পক্ষে বলা কঠিন। একেকজনের কাছে আমি একেক রকম। আমার কাছে আমি একরকম, মা-বাবার কাছে একরকম, বোনের কাছে একরকম, বাইরের মানুষের কাছে কী রকম...
বাইরের মানুষের কাছে আপনি অহংকারী...
সাকিব: যে যেভাবে নিয়ে রাখে। আমার এত টেনশন নেই।
সংসারের কাজে সাহায্য করেন?
সাকিব: সংসার শুরু করলাম কই যে হেল্প করব। না ওর রান্না করা লাগে, না আমার টাইম মেনে মেনে খাওয়া লাগে...বিয়ের পর থেকে তো হোটেলেই খাচ্ছি।
রান্না করতে পারেন কিছু?
সাকিব: (হাসি) তেমন কিছু না। কাউন্টিতে গিয়ে আলু ভাজি-টাজি করা শিখে ফেলেছিলাম। মানুষ খাবার নিয়ে আসত বলে পরে আর করা লাগেনি। করা না লাগলে কে শখ করে রান্না করতে যায়! ডিমভাজি, ডিম পোচ এসব করতে পারি, এসব তো যে কেউই পারে।
ঝগড়াঝাঁটি হওয়ার সময় তো এটা নয়, তবে মান-অভিমান...
সাকিব: (কথা শেষ করতে না দিয়ে) ভাই রে, আপনি পারেনও! বাদ দেন তো এবার (হাসি)।