আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার ১০ বছর হতে যাচ্ছে। আপনার ক্যারিয়ার রেকর্ডটা আমি লিখে নিয়ে এসেছি। ৪৮ টেস্টে ৩৪ গড়ে ২৭৮৮ রান, ৪টি সেঞ্চুরি। ৯৪টি ওয়ানডেতে ৩০.২২ গড়ে ২৫৬৯ রান, ৫টি সেঞ্চুরি। ৯৫টি টি-টোয়েন্টিতে ২২.৪৪ গড় ও ১২৪.৭৬ স্ট্রাইক রেটে ২০২০ রান—এটা দেখে আপনার কী মনে হয়?
লিটন দাস: সত্যি বললে, আমি যদি বিশ্বের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার ১০ বছরকে তুলনা করি, আমি কিছুই না। কারণ, বাইরের কোনো প্লেয়ার যদি ৪৮টি টেস্ট খেলে, ৯৪টি ওডিআই খেলে, ৯৫টি টি-টোয়েন্টি খেলে, তাদের অ্যাভারেজ বলেন, স্ট্রাইক রেট বলেন, হয়তো অনেক ভালো থাকত। আমি কেন ওই জায়গায় যেতে পারিনি, এর কারণ হিসেবে সব সময়ই আমার দুটি কথা মনে হয়।
প্রথম হলো, অবশ্যই কিছু সুযোগ এসেছিল, যা আমি কাজে লাগাতে পারিনি। আরেকটা হলো, যদি আমরা দেখি ওডিআই ক্যারিয়ারে কতগুলো ম্যাচ আমি মিরপুরে খেলেছি (লিটন খেলেছেন ২১টি)। এমন না যে লিটন দাসই শুধু মিরপুরে স্ট্রাগল করে, বিশ্বের সব ব্যাটসম্যানই করে।
আমরা সবাই বলি যে বিদেশে বাউন্সি উইকেটে, সুইঙ্গিং কন্ডিশনে খেলাটা কঠিন। এটা আমি মানি, তবে একটা পর্যায়ে কিন্তু সেটাও সহজ হয়ে যায়। নইলে বাউন্সি উইকেটে প্লেয়াররা এত ২০০-২৫০ করত না। একটা স্পিন উইকেটে কয়জন দুই শ করতে পারে! আমার এই যে ৪৮টি টেস্ট, এর কয়টা আমি মিরপুরে খেলেছি… (লিটন মিরপুরে ১২ টেস্ট খেলেছেন)।
আমি বিশেষ করে টি-টোয়েন্টির কথাই বলি, এখন আমার স্ট্রাইক রেট কিন্তু অনেক কম। কিন্তু যখন নতুন নতুন শুরু করেছি, অ্যাভারেজ এ রকম থাকলেও আমার স্ট্রাইক রেট অনেক বেশি ছিল। এই ম্যাচগুলোই যদি অন্য কোনো টিমের ক্রিকেটার খেলত, সে ভালো উইকেট পেত, তার অ্যাভারেজ-স্ট্রাইক রেটও অনেক ভালো হতো। আমি বলছি না আমি এর চেয়ে ভালো করতে পারতাম না। আমারও কিছু ভুল ছিল। তবে আমি যে লিটন দাস হয়ে এখানে আছি, এর চেয়ে ভালো থাকত।
বাংলাদেশ দলে আসার আগে আমি প্র্যাকটিস করতাম রংপুরে, বগুড়ায়, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে—সবই খুব ভালো উইকেটে। বিকেএসপিতেও ভালো উইকেট। আপনি ও রকম উইকেটে যখন নিয়মিত খেলবেন, আপনার খেলার প্যাটার্নটাও থাকবে ও রকম। জাতীয় দলে চলে আসার পর আমি প্র্যাকটিস করছি এখানে (মিরপুরে)। এখানকার উইকেটে যদি কোনো খেলোয়াড় এক মাস ব্যাটিং প্র্যাকটিস করে, তার ভালো হওয়ার চেয়ে খারাপ হওয়ার চান্সটা একটু বেশি। বলছি না সবার এমন হবে। আমি এখানে নিয়মিত প্র্যাকটিস করাতে আমার যে নিজস্ব কিছু শট ছিল, সেই শটগুলো কমে গিয়ে আস্তে আস্তে মনে ডাউট আসা শুরু হয়েছে। ওই ডাউট থেকে আস্তে আস্তে আমার স্কিল লেভেল নিচে নেমে এসেছে।
একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি যদি জানেন বল সুইং হবে, টার্ন করবে, সেটা কিন্তু খুব বড় সমস্যা না। কিন্তু যখন পিচে বল পড়ার বল কী হবে আপনি জানেন না, তাহলে খুব কঠিন। কারণ, একজন ব্যাটসম্যানের জন্য সেকেন্ডেরও কম সময় থাকে। আমি কেন বারবার এই কথাটা বলছি, যদি এমন হতো যে এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই হচ্ছে, আমি ম্যানেজ করতে পারছি না, তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। সমস্যা তো সবারই হচ্ছে।
এটা ঠিক, বাজে উইকেটে বেশি খেললে তাতে ব্যাটসম্যানশিপের ক্ষতি হয়। যদিও কেউ হয়তো বলবে, বিভিন্ন কন্ডিশনে অ্যাডজাস্ট করাটাই বড় ব্যাটসম্যানের প্রমাণ..
লিটন: অ্যাডজাস্টমেন্ট অন্য জিনিস। আমরা যখন বিদেশে খেলতে যাই, কথার কথা, আমরা যখন নিউজিল্যান্ডে যাই, অস্ট্রেলিয়ায় আমার কখনো সৌভাগ্য হয়নি যাওয়ার, ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাই, আমরা স্ট্রাগল করি না, তা না। তবে সাত-আট দিন করার পর একটু অ্যাডজাস্ট করতে পারি। যদি একদমই করতে না পারতাম, তাহলে আমরা কেউ ওখানে একদমই দাঁড়াতে পারতাম না।
কারণ, অ্যাডজাস্টমেন্টটা কী, আমরা জানি। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন বাউন্সি ও সুইং-ই, লো বাউন্সের কোনো চান্স নেই। বল বেশি ঘোরারও কোনো চান্স নেই। তার মানে আমরা প্রস্তুতি নেব বাউন্সি উইকেটের জন্য। মিরপুর যদি আমাকে বলত তোমার শুধু বল ঘুরবে, তাহলে কিন্তু আমরা সে জন্য প্রস্তুতি নিতাম। কিন্তু মিরপুর আমাকে বলছে, বল ঘুরবে, বল সোজা যাবে, বল নিচু হবে, বল হঠাৎ লাফাবে। এখানে আপনি কীভাবে অ্যাডজাস্ট করবেন? একই জায়গায় বল পড়ছে, বোলারও হয়তো বলটা ছাড়ছে একইভাবে, তারপরও একটা বলটা পড়ার পর হয়তো অফ স্পিন করেছে, আরেকটা সোজা যাচ্ছে। বোলারও জানে না কী হবে।
মিরপুর তো তাহলে আমাদের ক্রিকেটের বড় ক্ষতি করছে...
লিটন: সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে কী, বিশ্বব্যাপী আপনি যদি দেখেন পাঁচ বছর আগেই কিন্তু ওয়ানডে ৩২০-৩৩০ রানে খেলা হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানি, মিরপুরে কোনো দল যদি আড়াই শ করে, ডমেস্টিকেও আপনি দেখেন, ২৫০ করলেই সেই দল জানে, যদি দ্রুত দুইটা উইকেট ফেলে দিতে পারি, টার্গেট ২৭০ হয়ে যাবে, আরেকটা উইকেট ফেলতে পারলে ২৯০। ২৯০ বা ২৭০ কিন্তু অনেক রান মিরপুরের জন্য।
আমি আবারও বলছি, আমাদের বাঙালিদের তো লিমিটেড শট, লিমিটেড স্কিল, আমরা হয়তো ব্যাকফুটের বল অনেক কষ্ট করে এক নিই। বাইরের যারা পাওয়ার হিটার, অনেকে তো ছয়ও মারে। তারাও কিন্তু ওই রান তাড়া করতে পারে না। শুধু একটা কারণেই, তাদের মধ্যেও ওই ডাউটটা তৈরি হয়ে যায়।
তারপরও যদি বলি, আপনি যতক্ষণ খেলেন, খুব সুন্দর লাগে। তারপর হঠাৎ করেই আউট…আপনি কি মানেন, আপনার বেশির ভাগ আউটই সফট ডিসমিসাল?
লিটন: বাইরে থেকে হয়তো আপনাদের জিনিসটা অনেক ইজি মনে হয়। কিন্তু আমি যখন ব্যাটিং করি, আমার ওপরও অনেক চাপ থাকে। সত্যি কথা বলতে, আমি যদি কখনো নিজের ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস দেখি, নিজের ব্যাটিং আমার নিজেরই ভালো লাগে না। আমি যখন ব্যাটিং করি, অন্য ব্যাটসম্যানদের জন্য যে স্ট্রাগল, আমার জন্যও একই স্ট্রাগল। হতে পারে আমি একটু ভালো ম্যানেজ করতে পারি।
সেটা কি ভালো ব্যাটসম্যানরা একটু বাড়তি সময় পায়, এমন কিছুর কারণে?
লিটন: হতে পারে। এটা অস্বীকার করব না, আমার কিছু কিছু সফট ডিসমিসাল হয়নি। এতগুলো ম্যাচ খেললে তা হবেই। কিন্তু কোন সময়টায় হয়েছে, আমি কী করতে চেয়েছিলাম ওই সময়টাতে, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিংয়ে আমি সব সময় চিন্তা করি, আমি কীভাবে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারব। অনেকে বলবে, এই শটটা না মারলেও হতো। অথবা ইনিংস বড় করার জন্য আপনাকে একটু ধীরেসুস্থে খেলতে হবে। আমিও মানি, এক শ-দেড় শ মারতে হলে আপনার গিয়ার একটু চেঞ্জ করে যেতে হবে। কিন্তু আমার কাছে হয়তো ওই সময়টায় মনে হয়েছে, এখন যদি আমি অ্যাটাক করি, তাহলে আমি আরও বেটার কিছু নিয়ে বের হয়ে আসতে পারব।
আরেকটা ব্যাখ্যা দিই, গত কিছুদিন শুনছি, আমি অফ সাইডের বল লেগ সাইড দিয়ে মারি। আমি অফ সাইডের বল লেগ সাইডে ছোট থেকেই মারি, আমি ছোট থেকেই এভাবে রান করে আসছি। কিন্তু ইদানীং যেটা হচ্ছে, আমার এক্সিকিউশন ভালো হচ্ছে না, যে কারণে মানুষ বলছে আমি অফ সাইডের বল লেগ সাইডে টেনে মারছি। লিটন দাস তো আজকের লিটন দাস না, ডমেস্টিক থেকে ইন্টারন্যাশনাল ১০ বছর হয়ে গেল। আমি যদি অফ সাইড দিয়ে রানই না করি, লেগ সাইডেই মারি সব সময়, তাহলে এত দিন তো ওই রানই করেছি আমি। জিনিসটা হচ্ছে, কেন এক্সিকিউশনটা হচ্ছে না, সেটা চিন্তা করতে হবে, প্রয়োজনে কোচের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলতে হবে। আর এর আগে যে আপনাকে বললাম, একটা ব্যাটসম্যানের মধ্যে যখন ডাউট চলে আসে, তখন এই সিলি মিস্টেকগুলো বেশি হয়।
আরেকটা ক্ষেত্রে আমি সবচেয়ে বেশি স্ট্রাগল করি, আমরা সবাই জানি ভালো উইকেটের প্যাটার্নটা একটু আলাদা। খারাপ উইকেটে খেলতে খেলতে ভালো উইকেটের প্যাটার্ন বিশেষ করে আমি ধরতে পারি না। ভালো উইকেটে কখন অ্যাটাক করব, কখন আমি নিজেকে সময় দেব…। খারাপ উইকেটে আমি জানি বেশিক্ষণ টিকতে পারব না, আমাকে রান বের করে নিতে হবে। তখন তাড়াহুড়া থাকে এবং তা করতে গিয়ে অনেক শট আছে, যেটা ওই বলের না, সেটাও আপনি খেলে ফেলেন। ভালো উইকেটে কিন্তু যত স্থির থাকা যায়, তত ভালো। কারণ, আপনার ওই ইনিংসটাকে বড় করার সুযোগ থাকে। আমি মনে করি, ভালো উইকেটে খেলার সময় আমি সেটিকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারিনি।
হ্যাঁ, ভালো উইকেটে ব্যাটিং করাটাও আলাদা একটা আর্ট। এমন না যে টানা খারাপ উইকেটে খেলার পর ভালো উইকেট পেলেই একটা সুইচ টিপে ব্যাটিংটা বদলে ফেললাম…
লিটন: সেটাই। ভালো উইকেটে ব্যাটিং করার সময় প্ল্যানিংটা আরও ভালো হতে হয়।
এখন আপনার ৩০ চলছে। একটা কথা বলা হয়, ব্যাটসম্যানদের সেরা সময়টা আসে ২৮-৩০ বছর বয়সে। এর সঙ্গে মিলিয়েই ২০২১-২২ সালে আপনি দারুণ ব্যাটিং করেছেন। সেই ধারাটা ধরে রাখতে পারেননি কেন?
লিটন: ব্যাপারটা কী, ’২১-২২ সালের যে সময়টার কথা বলছেন, ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি খেলেছি টেস্ট এবং কিছু ওয়ানডে। আমরা টি-টোয়েন্টি সংস্করণে খুব কম খেলেছি। টানা টেস্ট ক্রিকেট খেললে একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়ে যায়। আমার খেলার ধরনটা কিন্তু অন্য খেলোয়াড়দের মতো না যে আমি খুব মারি। আমি ক্রিকেটিং শটই বেশি খেলি। যখন আমি প্রতিনিয়ত টেস্ট ক্রিকেট খেলছি, আমি জানি আমার থট প্রসেস কী, আমার বাড়তি কোনো চাপ নেই যে বল ছাড়া যাবে না। তখন আমি নিয়মিত রান করেছি। টেস্টের পরপরই যখন ওয়ানডে খেলেছি, ওয়ানডের প্যাটার্নও অনেকটা একই রকম। টানা ওই প্যাটার্নে খেলে যাওয়াতে আমার সবকিছু ভালো হয়েছে।
ওই মৌসুমটা শেষ হওয়ার পর আমাদের বেশির ভাগ ম্যাচ চলে আসে টি-টোয়েন্টিতে। এই সংস্করণে একজন ব্যাটসম্যানকে স্বাভাবিকভাবে একটু অ্যাগ্রেসিভ খেলতেই হবে। টি-টোয়েন্টির জন্য খেলাটা যে একটু বদলেছি, ওখান থেকে আমি আর ব্যাক করতে পারিনি।
যে বছরটা আমি একদমই রান করিনি, দেখবেন, সে বছর আমাদের কোনো টেস্টই ছিল না। শুধু ছিল টি-টোয়েন্টি আর গ্যাপে ছিল তিনটা ওয়ানডে, তিনটা ওয়ানডেও ছিল একেবারে শুরুতে ও শেষে। আরেকটু লম্বা সময় ধরলে টি-টোয়েন্টির মাঝে মাঝে আমরা ওয়ানডে খেলেছি। ওয়ানডে খুবই কম ছিল আর টেস্ট ছিল কয়েকটা। এর মধ্যে টেস্ট আমি পাকিস্তানের সঙ্গে খেলেছি, খারাপ খেলিনি; ভালোই খেলেছি। এরপর ভারতের সঙ্গে আমরা সবাই খারাপ খেলেছি।
টানা টি-টোয়েন্টি খেললে একটু অ্যাগ্রেসিভ হতে হয়। আমার মনে হয়েছিল, বিশ্বের অন্য খেলোয়াড়েরা যেভাবে টি-টোয়েন্টি খেলে, আমি কেন পারছি না। আমি নিজে নিজে তাই কিছু চেঞ্জ করার চেষ্টা করেছি। সেটা আমি বিপিএলে করেছিলাম মূলত। সফলও হয়েছি। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল খেলার সময় তা করে ততটা সাকসেস পাইনি। টি-টোয়েন্টি থেকে যখন আবার ওয়ানডেতে গিয়েছি; প্যাটার্নটা শিফট করতে পারিনি। টি-টোয়েন্টিতে নামবেন, বল দেখবেন, হিট করবেন, ওয়ানডেতে খেলাটা একটু হলেও গোছানো। একটা জায়গা স্ট্রং করতে গিয়ে আমার অন্যটায় সমস্যা হয়ে গেছে।
প্যাটার্ন বলতে তো মেইনলি মাইন্ডসেটের ব্যাপার। যে বলটা মারার না, সেটাও আপনি মারবেন, তা–ই তো?
লিটন: সবারই তো ধরেন কিছু কিছু স্ট্রং পয়েন্ট থাকে যে আমি এটা পারি। আর কিছু কিছু জিনিস থাকে নিজেকে আপগ্রেড করার। আমার কাছেও মনে হয়েছিল, যদি আমি টি-টোয়েন্টিতে খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই, তাহলে আমাকে আপগ্রেড করতে হবে। যদি আমি ওয়ার্ল্ডের প্লেয়ারদের দেখি, তারা এই জিনিসগুলোতে অনেক পারদর্শী।
সেটা কি এ রকম যে স্কুপ করা, রিভার্স সুইপ মারা…
লিটন: অবশ্যই, আপনি যদি দেখেন, ওয়ার্ল্ডওয়াইড কীভাবে চলছে। বাংলাদেশ ধরে তো আমার লাভ নেই। আমি যদি শুধু বাংলাদেশ চিন্তা করি, তাহলে শুধু দেশের মাটিতেই জিততে হবে। ওয়ার্ল্ডওয়াইড চিন্তা করলে দেখতে হবে ওয়ার্ল্ডের প্লেয়াররা কীভাবে খেলছে। তাদের সঙ্গে ম্যাচ করতে গেলে কিছু তো ডেভেলপ করতেই হবে আমার।
আমার মনে হয়েছে আমার ব্যাটিংয়ে যা স্কিল আছে, তার সঙ্গে দু-একটা জিনিস যদি ডেভেলপ করতে পারি, তাহলে আমার ব্যাটিংটা আরও আপগ্রেড হতো। ওটা করতে গিয়ে আমার যে স্ট্রং পয়েন্টগুলো ছিল, যেগুলো আমি পারতাম, সেটাতে একটু ল্যাকিংস চলে আসছে। যে কারণে আমি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে ওয়ানডে খেলতে গিয়ে ওই জায়গাগুলোতে স্ট্রাগল করেছি। সেটার প্যাটার্নও কিন্তু একই রকম।
২০২১-২২-২৩ যদি আমি ধরি, যে জোনে আমি সবচেয়ে বেশি রান করেছি, ২০২৪-এ ওই জোনেই আমি সবচেয়ে বেশি আউট হয়েছি।
আপনি নতুন কী ডেভেলপ করতে চেয়েছিলেন…সেটা কি মূলত রেঞ্জ অব শটস?
লিটন: হ্যাঁ, রেঞ্জ অব শটস। যে শটগুলো আমি সাধারণত খেলি না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, টি-টোয়েন্টিতে খেলতে হবে। আপনি যদি ডমিনেট করতে চান, তাহলে খেলতে হবে। এটা করতে গিয়ে আমার যে স্ট্রেংথ ছিল, আমি যে প্যাটার্নে খেলি, সে প্যাটার্ন থেকে একটু বের হয়ে আসার কারণে সমস্যা হয়েছে।
ওয়ানডেতেই বেশি, ওয়ানডেতে দুই দিক দিয়ে নতুন বল, বল একটু সুইং হবে এটাই স্বাভাবিক। আমি ওই সুইংগুলোতেই বারবার পরাস্ত হয়েছি। প্রায় সব আউটই দেখবেন একই রকম। এটা বোঝার পর আবার ওটা নিয়ে কাজ করেছি। পরে কিন্তু আস্তে আস্তে জিনিসটা আবার গোছানো হয়েছে।
ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি নিজে আপনার সবচেয়ে শক্তির জায়গা মনে করেন কোনটিকে?
লিটন: আমার শট। আমার হাতে অনেক শট আছে। আমার মনে হয়, আমি চাইলে সব শটই খেলতে পারব। কিন্তু এটাই হচ্ছে আমার সবচেয়ে বড় উইক পয়েন্ট যে আমি সব সময় সব শট খেলে ফেলি। যে বছরগুলোতে আমি অনেক রান করেছি, ওই বছরগুলোতে আমি লিমিটেড শট খেলতাম।
আমি কেন এই কথা বলছি, আমি লিটন দাস যখন নতুন নতুন শুরু করেছি, অনেক শট খেলতাম। এ জন্য আমার স্ট্রাইক রেট অনেক হাই থাকত। যখন আমি বুঝতে পারলাম অনেক শট খেলতে গিয়ে আমার স্ট্রাইক রেট হাই হচ্ছে, অ্যাভারেজ কমে যাচ্ছে। আমি তখন আমি ঠিক করলাম যে আমি শট কমিয়ে দেব। অ্যাভারেজ বাড়াব, স্ট্রাইক রেট কমলে কমবে। কিন্তু পরে আবার চিন্তা করলাম, যদি আমাকে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ধরতে হয়, আমাকে স্ট্রাইক রেট বাড়াতেই হবে। তখন আমি আবার ওই প্যাটার্নে গেলাম যে স্ট্রাইক রেট বাড়াতে হবে। তখন আবার অ্যাভারেজটা কমে গেছে। আমি যে জিনিসটা চাই যে আমার অ্যাভারেজ ভালো থাকবে, স্ট্রাইক রেটও। ওই জিনিসটা হয়ে ওঠেনি।