ফুটবলার পরিচয়ের বাইরে আপনি যে ভালো গানও করেন, সেটা বোধ হয় অনেকেই জানে না…
শেখ মোহাম্মদ আসলাম: (হাসি), হ্যাঁ, আমি আসলে গান করতে খুব ভালোবাসি।
কখন থেকে এই গান গাওয়ার শুরু?
আসলাম: স্কুলে পড়ার সময়। প্রতি বৃহস্পতিবার স্কুলে বিতর্ক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। আমি সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করতাম। পড়ালেখার চেয়ে আমরা কজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে বেশি আগ্রহী ছিলাম। আমি গান করতাম অনুষ্ঠানে।
গানের প্রতি ঝোঁক কীভাবে এল?
আসলাম: আমার আব্বা ছিলেন খুলনা অঞ্চলের বেতারের শিল্পী। বাবাকে দেখেই গানের প্রতি আগ্রহ জন্মে। মা-ও চেয়েছিলেন আমি গান করি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেটা হয়ে ওঠেনি…
প্রিয় কোনো গান আছে, যেটা মাঝেমধ্যেই গুনগুন করেন?
আসলাম: মা তুমি চলে গেছো…এখনো যদি কেউ গাইতে বলে, এই গানটাই গাইব।
এখনো গান করেন?
আসলাম: হ্যাঁ, অবসরে একটু চর্চা করি।
কখনো মঞ্চে গেয়েছেন?
আসলাম: হ্যাঁ, অনেকবার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকের অনুরোধে গেয়েছি। একবার তো গান শুনে দর্শকেরা ‘ওয়ান মোর’ ‘ওয়ান মোর’ বলে চিৎকারও করেছিল।
কাদের গান শুনতে ভালো লাগে?
আসলাম: হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুবীর নন্দী।
শেষ পর্যন্ত তাহলে গায়ক না হয়ে ফুটবলার হলেন কেন?
আসলাম: ফুটবল আরও ভালো খেলতাম। আমি ফুটবলার হয়েই সন্তুষ্ট।
গান গাওয়া ছাড়া ছোটবেলায় আর কোনো শখ ছিল?
আসলাম: প্রচুর ঘুড়ি ওড়াতাম। এমন অনেকবার হয়েছে, ঘুড়ি কেটে যাওয়ার পর সেটা না ধরা পর্যন্ত বাসায় ফিরিনি। এর জন্য পরে বাসায় গিয়ে মায়ের কাছে কত যে মার খেয়েছি…
এখন ঘুড়ি ওড়াতে ইচ্ছা হয়?
আসলাম: অনেক। আসলে শৈশবে ফিরে যেতেই অনেক ইচ্ছা হয়। ঘুড়ি ওড়াতে মন চায়। কিন্তু সেই বয়স তো আর নেই।
আর কী ভালো লাগত ছোটবেলায়?
আসলাম: আমার নানাবাড়িটা খুব প্রিয় ছিল। এখনো সেখানে যেতে মন চায়। সবুজ-শ্যামলে ভরা চারপাশ। এখনো ঘুরতে মন চাইলে ইচ্ছা করে সেখানে চলে যেতে।
নানাবাড়ির কোনো মজার স্মৃতি আছে?
আসলাম: নানাবাড়ি যাওয়ার জন্য একবার স্কুল মাঠেই গড়াগড়ি শুরু করে দিই। যেটা দেখতে অনেক লোক জমে গিয়েছিল।
ঘোরাঘুরি নিয়ে আর কোনো স্মৃতি?
আসলাম: ১৯৮৭ সালের দিকে জাতীয় দলের হয়ে ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলাম। দলের কয়েকজন মিলে হোটেল থেকে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। কীভাবে যেন অনেক দূর চলে গেলাম। আর টিম হোটেল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে হোটেলে আসতে হয়েছিল। এসে দেখি সবাই মহাচিন্তায়। আমাদের নিয়ে হাউকাউ। আমি ছিলাম তখন অধিনায়ক। রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড।
অবসরে গানের চর্চা করেন, এটা তো বললেনই। আর কিছু?
আসলাম: বিকেল বেলায় একটু টেনিস খেলি।
এর বাইরে আর কিছু? বই পড়া, টিভি-সিনেমা দেখা...
আসলাম: একসময় তো উত্তম–সুচিত্রার সিনেমা অনেক দেখতাম। রাজ্জাক–শাবানার সিনেমাও খুব প্রিয় ছিল। তখন ওনাদের সিনেমা ছাড়া আর কোনো সিনেমা দেখাই হতো না। এখন আগের আকর্ষণটা চলে গেছে। আর এখন তো ইউটিউবের যুগ। সবকিছু নেটেই পাওয়া যায়।
কোন জুটি বেশি প্রিয় ছিল, উত্তম–সুচিত্রা না রাজ্জাক-শাবানা…
আসলাম: রাজ্জাক–শাবানা।
বই পড়ার অভ্যাস আছে কি?
আসলাম: হ্যাঁ, পড়ি তো। একসময় সাহিত্যের বই বেশি পড়তাম। এখনো টুকটাক পড়ি। কবি গুরু ও কাজী নজরুল আমার খুব পছন্দ। খেলোয়াড়ি জীবনে মাঠে নামার সময় নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কানে বাজত। নজরুলের কবিতা শুনে লড়াইয়ে প্রেরণা পেতাম। বিজয় ছিনিয়ে আনতেই হবে, এমন একটা মনোভাব তৈরি হতো।
আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব কারা?
আসলাম: আমার মা–বাবা। তাঁরা আমার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকও।
কী খেতে বেশি ভালো লাগে?
আসলাম: দুধ–ভাত। এখন অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শে অনেক কমিয়ে দিয়েছি। তবে পোলাও-কোরমাও আমার এত পছন্দ না, যতটা পছন্দ দুধ–ভাত।
খেলোয়াড় হিসেবে এত সাফল্য জীবনে, কোনো আক্ষেপ কি আছে?
আসলাম: যখন লিগে টানা চারবার (১৯৮৪-১৯৮৭) সর্বোচ্চ গোলদাতা হলাম, এক পর্যায়ে জার্মানির একটা লিগ থেকে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু মা বলেছিলেন, আমার সন্তান আমার চোখের সামনে থাকবে, কোথাও যাবে না। মায়ের কথা শুনে আর যাইনি।
খেলোয়াড় হিসেবে কোনো মজার স্মৃতি আছে?
আসলাম: আবাহনী ক্লাবে মাঝেমধ্যেই মেয়েরা আসত। তারা এসে নানান বায়না ধরত। একবার তো ছবি তোলার নাম করে একজন প্রেম নিবেদন করে বসলেন (হাসি…)।