প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা?
শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ: বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই বলেছিলাম, বিশ্বকাপে ম্যাচ করার সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য প্রত্যাশিত ছিল। যখন প্রত্যাশা থাকে, তখন একটা প্রস্তুতিও থাকে। সেদিক থেকে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। আমি কখনোই বিষয়টিকে অত বড় করে দেখতে চাইনি। আমি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ম্যাচ করছি, এটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। তবে আমার কাছে আম্পায়ারিংয়ের সবচেয়ে বড় অর্জন টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা করা, সেটা আগেই হয়েছে। এবার নতুন একটা অধ্যায় যোগ হলো ক্যারিয়ারে। নিজের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। আমার মনে হয়, আমি সম্মানটা অর্জন করতে পেরেছি।
বেশ কিছু আলোচিত ম্যাচে আম্পায়ার ছিলেন। সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন কোনটি?
শরফুদ্দৌলা: আমার শুরুটাই ভালো হয়েছিল। বিশ্বকাপে এবার উইকেটও ভালো ছিল। দিল্লিতে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে বিশ্বকাপের রেকর্ড রান হলো, তিনটি সেঞ্চুরি হলো। একটা সেঞ্চুরি আবার বিশ্বকাপেরই দ্রুততম। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুই দিন পর ওই রেকর্ড ভাঙেন ম্যাক্সওয়েল। আফগানিস্তান ইংল্যান্ডকে হারাল। নেদারল্যান্ডস হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এসব ম্যাচেও আমি ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে প্রায় ৮০০ রান হয়েছে। সেটা মাঠ থেকে করেছি। ম্যাক্সওয়েলের ২০০ করা ম্যাচটায় আমি চতুর্থ আম্পায়ার ছিলাম। সব ম্যাচই বেশ উপভোগ করেছি। ম্যাচগুলো উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, আমিও উত্তেজনার অংশ হয়ে গিয়েছিলাম।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ পরিচালনা করা নিশ্চয়ই বাড়তি রোমাঞ্চ ছিল...
শরফুদ্দৌলা: খুবই সম্মানিত বোধ করেছি। উদ্বোধনী ম্যাচে আমি রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলাম। আমার জন্য এটা বিশেষ কিছুই ছিল।
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে আপনার পারফরম্যান্সের কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
শরফুদ্দৌলা: আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে আমি অভিজ্ঞ। হয়তো এখনো এলিট আম্পায়ার হয়ে যাইনি, তবে আমার মনে হয়েছে এই বিশ্বকাপে আমি ভালো ছাপ রাখতে পেরেছি।
মাঠ নিয়ন্ত্রণ করাটাকে আম্পায়ারদের পারফরম্যান্স বিচারের অন্যতম মানদণ্ড ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
শরফুদ্দৌলা: প্লেয়ার ম্যানেজমেন্ট, টাইম ম্যানেজমেন্ট—এসব আম্পায়ারদের পারফরম্যান্স বিচারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক। আম্পায়ারের কাজটা আউট-নট আউটের সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ নয়। সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক হচ্ছে, সেটার চেয়েও টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো করতে পারলাম কি না, সেটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আম্পায়ারের নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা আছে কি না, সহকর্মীকে সাহায্য করেছি কি না; এসবও দেখা হয়।
খেলোয়াড়দের মতো আমরাও এক-দুটি বল দেখার পর বুঝে যাই যে এই উইকেট কেমন আচরণ করতে পারে। তখন সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হয়।শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ, বাংলাদেশি আম্পায়ার
এখন তো টিভি আম্পায়ারদের ভূমিকা অনেক বেড়েছে। ডিআরএস তো আছেই, নো বলও এখন টিভি আম্পায়ার দেখছেন...
শরফুদ্দৌলা: হ্যাঁ, পরিসর অনেক বেড়ে গেছে। প্রায় সব সিদ্ধান্তই এখন টিভি আম্পায়াররা নিচ্ছেন। প্রযুক্তির কারণেই হচ্ছে সেটা। প্রতিটা বলে সামনের পা দেখতে হয়। রিভিউ নিলে আপনি কীভাবে কথা বলছেন, সেটাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ঘরোয়া পর্যায়ে খুব বেশি ম্যাচ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যাসটাও তাই ভালোভাবে গড়ে ওঠে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিভি আম্পায়ারিংয়ের গুরুত্ব বাড়ছে। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন, খেলার আইনকানুন এবং প্লেয়িং কন্ডিশন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হয়।
বিশ্বকাপের উইকেটের কথা বললেন। আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে উইকেটের কী সম্পর্ক?
শরফুদ্দৌলা: বিশ্বকাপের উইকেটগুলো ওয়ানডে ক্রিকেটের উইকেট যেমন হয়, সে রকম ছিল। ক্রিকেটটা ব্যাট-বলের খেলাই। তবে যদি ভালো উইকেটে খেলা হয়, তাহলে আম্পায়ারদের কাজও সহজ হয়ে যায়। যদি ভালো বাউন্স থাকে, খুব বেশি টার্ন না থাকে, তখন আম্পায়ারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। খেলোয়াড়দের মতো আমরাও এক-দুটি বল দেখার পর বুঝে যাই যে এই উইকেট কেমন আচরণ করতে পারে। তখন সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হয়।