‘অবৈধ’ বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন সাকিব

রাজনৈতিক পরিচয় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অদৃশ্য শিকল পরিয়ে রেখেছে। এর মধ্যেই গত সেপ্টেম্বরে সারের হয়ে কাউন্টির এক ম্যাচে প্রশ্নবিদ্ধ হয় সাকিব আল হাসানের বোলিং অ্যাকশন। ডিসেম্বরে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে নিষিদ্ধ হন সব ধরনের ক্রিকেটে বোলিং করা থেকে। চেন্নাইয়ে টেস্ট দিয়েও ব্যর্থ হওয়ার পর তো আরও অনিশ্চয়তা!

সব অনিশ্চয়তা কেটে গেছে ইংল‍্যান্ডের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে দেওয়া সর্বশেষ টেস্টের রিপোর্ট আসার পর। ৯ মার্চ সেখানে দেওয়া টেস্টের রিপোর্টে ত্রুটিমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে সাকিবের বোলিং অ্যাকশনকে। কাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে লড়াইয়ের কথাই বলেছেন বাংলাদেশ দলের এই ক্রিকেটার—

প্রশ্ন:

পরিবারের সঙ্গে কেমন সময় কাটছে?

সাকিব আল হাসান: আলহামদুলিল্লাহ ভালো সময়ই কাটছে। সবার যেমন কাটে, আমারও তেমন কাটছে।

প্রশ্ন:

নানা কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে আছেন। এর মধ্যে আপনার বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন উঠল। সমস্যাটা কেটে যাওয়ায় একটু কি স্বস্তিতে আছেন?

সাকিব: অবশ্যই, স্বস্তিরই তো বিষয়। এটা ভেবে ভালো লাগছে যে আমার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আর কোনো সমস্যা নেই।

পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন সাকিব
ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রশ্ন:

১৫–১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই প্রথম এমন প্রশ্ন। আপনার বোলিং অ্যাকশন ত্রুটিপূর্ণ, এটা শুনে প্রথমে কেমন লেগেছিল?

সাকিব: কেমন আর লাগবে! আমার মনে হয়েছে, গাড়িরও তো মাঝেমধ্যে পার্টস নষ্ট হয়। সেগুলো ঠিক করা লাগে। ও রকমই একটা কিছু আমারও হয়েছে, যেটা ঠিক করা লাগবে। এমন তো নয় যে সব সময়ই এই সমস্যা ছিল। কোনো কারণে এ রকম হতেই পারে। ওটা ঠিক করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, এই বিশ্বাসটুকু সব সময় ছিল। ওই কারণেই অত বেশি চিন্তা করিনি।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

একটু কি অবাক লাগেনি...হঠাৎ কেন এত বছর পরে?

সাকিব: না, অবাক লাগেনি। কারণ, যখন ওরা ওই ভিডিও আমাকে দেখিয়েছে, আমার কাছেও মনে হয়েছে...আসলেই সন্দেহজনক অ্যাকশন।

নিজের বোলিং অ্যাকশন নিজের কাছেই সন্দেহজনক মনে হয়েছে সাকিবের
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

ঠিক কী কারণে অ্যাকশনটা বদলে গিয়ে থাকতে পারে? যতটুকু মনে পড়ে, সারের হয়ে ওই ম্যাচে বোলিং একটু বেশিই করেছিলেন আপনি...

সাকিব: এ রকম হতেই পারে। আঙুলে অনেক ব্যথা ছিল, অনেক ঠান্ডা ছিল। আর আমার জীবনেই তো আমি একটা টেস্টে বা প্রথম শ্রেণির একটা ম্যাচে কোনো দিন ৭০ ওভার বোলিং করিনি। মনে পড়ে না এত বোলিং আমি কোনো দিন করেছি। এই সময়ে এসে এত ওভার বোলিং, তার আগে পাকিস্তানে টানা দুই টেস্ট খেলে আসা...ওখানেও অনেক বোলিং করতে হয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে কাঁধ ক্লান্ত থাকতে পারে, আঙুলেও ব্যথা ছিল। ফিটনেসের অবস্থাও হয়তো ওই রকম জায়গায় ছিল না। সবকিছুর যোগফলেও এটা হতে পারে। নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল, কেন এটা হয়েছে।

প্রশ্ন:

এমনিতেই দেশের হয়ে খেলতে পারছেন না, তার ওপর হঠাৎ ওই সমস্যা। একটু কি আপসেট হয়ে গিয়েছিলেন তখন?

সাকিব: আপসেট না ঠিক। তবে এ রকম একটা সমস্যা হলে তো অবশ্যই খারাপ লাগবে। আবার খারাপ লাগলেই তো শুধু হবে না। নিজেরও বোঝার ব্যাপার আছে, কেন এটা হলো।

বাংলাদেশের জার্সিতে সাকিবকে হয়তো আর কখনো দেখা যাবে না
ছবি: আইসিসি
আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

বোলিং অ্যাকশন শোধরানোর কাজটা এরপর কীভাবে করলেন?

সাকিব: শ্রীলঙ্কায় খেলতে (এলপিএল) যাওয়ার পর যখন ওরা বলল যে বোলিং করতে পারব না, তখন ওখানে অনুশীলন করেছি। আরেকটু ভালো পরামর্শ পেলে হয়তো ওই সময়ই এটা ঠিক হয়ে যেত। তবে আমার মনে হয়, চেন্নাইয়ের টেস্টটা আরেকটু সময় নিয়ে দিলে তখনই উতরে যেতাম।

প্রশ্ন:

চেন্নাইয়ের টেস্টে কী সমস্যা হয়েছিল?

সাকিব: সঠিক বা ভুল কিছু ছিল, তা বলব না। এটাও বলছি না যে আমার ওই সময়ই টেস্টটা পাস করা উচিত ছিল। তবে আমার মনে হয়েছে, ওদের টেস্টের যে সরঞ্জামাদি ছিল, সেগুলো প্রস্তুত ছিল না। আর ওরাও তাড়াহুড়া করেছে। কারণ, আমি তাদের অনেক জোর করেছিলাম টেস্টটা নিতে। হতে পারে ওদের মেশিনারিজ, ক্যামেরা সেটআপ ঠিক ছিল না। ওরা প্রস্তুত ছিল না। তারপরও আমি তাড়াহুড়া করার কারণেই হয়তো ওরা টেস্টটা নিয়েছে।

প্রশ্ন:

চেন্নাইয়ের টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পর কী করলেন?

সাকিব: এরপর একটু সময় নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ভালো কিছু বিশেষজ্ঞ পেয়েছি, যাঁরা কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করে আমাকে সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে সারে কাউন্টি, সারের হেড কোচ গ্যারেথ বেটি আন্তরিকভাবে আমাকে সাহায্য করেছে। যোগাযোগ করার পরই ওরা আমাকে ওয়েলকাম জানিয়ে বলেছে, যখনই আমি যাব, তারা সাহায্য করবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সারের জার্সিতে অভিষেক হয় সাকিবের
ছবি: সারে ক্রিকেট
প্রশ্ন:

সারে ছাড়া আর কারও সাহায্য কি পেয়েছেন অ্যাকশন শোধরানোর কাজে?

সাকিব: না, ও রকম কিছু না। নিজে নিজেই কাজ করার চেষ্টা করেছি। ফোনে কথা হয়েছে সালাহউদ্দীন স্যারের সঙ্গে। তবে ফোনের চেয়ে সামনাসামনি এগুলো আরও ভালো হয়।

প্রশ্ন:

এখন তো আপনি মুক্ত, ম্যাচে বোলিং করতে পারবেন। অনুশীলন বা খেলা নিয়ে কী পরিকল্পনা?

সাকিব: দেখি, কী করতে পারি।

দেশের মাটিতে নিজের শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েও পারেননি সাকিব
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েও খেলতে পারেননি। আপনার টেস্ট ক্যারিয়ার কি তাহলে শেষ, নাকি শেষ টেস্টটা এখনো খেলেননি?

সাকিব: এটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।