‘বাংলাদেশ দলের রাকিব আমাদের জন্য বড় হুমকি, ওকে নিষ্ক্রিয় রাখতে হবে’

১২ অক্টোবর মালেতে দুই দলের প্রথম লেগ ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। ফিরতি ম্যাচ ঢাকার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ১৭ অক্টোবর। এই ম্যাচের জয়ী দল পাবে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গ্রুপ পর্বের টিকিট। গুরুত্বপূর্ণ সেই টিকিট পেতে মরিয়া মালদ্বীপ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ আলী সুজাইন। লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা মনে করছেন বাংলাদেশ দলের উইঙ্গার রাকিব হোসেনকে। তবে বাধা মানছেন না বাংলাদেশের ঘরের মাঠে খেলার সুবিধাকে। গতকাল কমলাপুর স্টেডিয়ামে দলের অনুশীলনের পর প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বরং বললেন, কিংসের মাঠে খেলা তাঁর দলের জন্য নাকি বাড়তি সুবিধাই।

প্রশ্ন:

মালেতে প্রথম লেগে ৮৭ মিনিটে গোল করেও জিততে পারলেন না। অতিরিক্ত সময়ের গোলে বাংলাদেশ সমতা ফিরিয়েছে। কী মনে হয়, বিশ্বকাপের বাছাইয়ে সুযোগ পাওয়ার তীব্র লড়াইয়ে বাংলাদেশকে হারানোর একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে?  

আলী সুজাইন: তা তো হয়েছেই। তবে এ নিয়ে আমি কাতর নই। এটা ঠিক, মালেতে আমরা বেশ ভালো ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু পরিষ্কার ৫-৬টি সুযোগ নষ্ট করেছি। শেষ পর্যন্ত ৮৭ মিনিটে গোল করেছি। কিন্তু শেষ দিকে মনোযোগ ধরে রাখতে পারেনি ছেলেরা। বাংলাদেশ অতিরিক্ত সময়ে গোল করে ড্র করে ফেলেছে ম্যাচটা। তবে আমি মনে করি, মালের চেয়ে ঢাকায় ভালো করব আমরা। ঢাকায় আমাদের জয়ের ভালো সম্ভাবনা আছে।

প্রশ্ন:

কিন্তু এটা নিশ্চয়ই মানবেন, বাংলাদেশকে ঘরের মাঠে হারানো কঠিন হবে? কারণ, বাংলাদেশ নিজেদের চেনা পরিবেশে খেলবে...

আলী সুজাইন: দেখুন, অ্যাওয়ে ম্যাচ কারও জন্যই সহজ হয় না। বাংলাদেশ ঘরের মাঠে খেলবে। বসুন্ধরা কিংসের মাঠটাও দারুণ। মাঠটা আমি দেখেছি। মালদ্বীপের মাঠের চেয়েও ভালো। আর ভালো মাঠে আমরা ভালো খেলব, এই আত্মবিশ্বাস রাখি। এ কারণেই বলছি, কিংসের মাঠ আমাদের জন্য একটা বাড়তি সুবিধাই। বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পাবে মনে করছি না।

প্রশ্ন:

কীভাবে আপনারা বাড়তি সুবিধা পাবেন মনে করছেন?

আলী সুজাইন: মালের ম্যাচটার কথা ভাবুন। আমরা বেশ কয়েকটি পাস খেলে গোলটা করেছি। এর অর্থ হলো ভালো মাঠে আমরা নিজেদের কাছে বল রাখতে পারি। যেটা মালের মাঠে রেখেছি। কিংসের মাঠেও আরও ভালোভাবে পারব আশা করি।

রাকিব এমন একজন যে ম্যাচ ঘোরাতে পারে। সে আমাদের ভোগাতে পারে। এ কারণে তাকে আমাদের নিষ্ক্রিয় রাখতে হবে।
আলী সুজাইন, কোচ, মালদ্বীপ
প্রশ্ন:

তাহলে ফিরতি লড়াইয়ে কি নিজেদের এগিয়ে রাখছেন?

আলী সুজাইন: আমি মনে করি ম্যাচটা ৫০-৫০। অবশ্যই শেষ পর্যন্ত সেরা দলটাই জিতবে। জয়ের জন্য প্রস্তুতি ভালো হওয়া চাই। যে দল ৯০ মিনিট ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। এখানে ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা বলে কিছু নেই। আমাদের খেলোয়াড়দের ভালো পারফর্ম করতে হবে। সেটা করার জন্য আমরা তৈরি।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে বেশ ভুগিয়েছেন রাকিব হোসেন
ছবি : বাফুফে
প্রশ্ন:

বাংলাদেশ দলের কাউকে হুমকি মনে করেন?

আলী সুজাইন: উইঙ্গার রাকিব হোসেনের কথা বলব। ও বেশ দ্রুতগতির। ওর বিপজ্জনক পাস থেকেই আমরা গোলটা খেয়েছি মালেতে। রাকিব এমন একজন যে ম্যাচ ঘোরাতে পারে। সে আমাদের ভোগাতে পারে। এ কারণে তাকে আমাদের নিষ্ক্রিয় রাখতে হবে।

প্রশ্ন:

গত জুনে ভারতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। সেই টুর্নামেন্টে মালদ্বীপকে চেনাই যায়নি। কেন?

আলী সুজাইন: গত সাফটা খুব খারাপ কেটেছে আমাদের। দল ভালো খেলেনি মোটেও। বাংলাদেশের কাছে আমরা ৩-১ গোলে হেরেছি। বিদায় নিয়েছি গ্রুপ থেকেই। আমাদের সেরা খেলোয়াড়েরা পারফর্ম করতে পারেনি। তবে সুখবর হলো, আলী ফাসির, হামজারা সাফের চেয়ে এখন ভালো অবস্থায় আছে। খেলোয়াড়দের মানসিকতাও বদলেছে। সাফে আমাদের অধিনায়ক ডিফেন্ডার সামু এখানে নেই। তার চোট আছে। সম্ভবত সে মাজিয়ার হয়ে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে এএফসি কাপের ম্যাচ খেলতে ঢাকায় আসবে।

প্রশ্ন:

ঢাকায় এবার নিয়ে কতবার আসা হলো আপনার?

আলী সুজাইন: সম্ভবত ষষ্ঠবার। প্রথমবার আসি মোহামেডানের বিরুদ্ধে খেলতে। ১৯৮৮-৮৯ সালের দিকে। কায়সার, সাব্বিররা তখন মোহামেডানের বড় তারকা। এমেকাও সে সময় মোহামেডানে। ভিক্টোরি স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে খেলতে আসি এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। ১৯৮৯ সালে আমরা আবার মোহামেডানের মুখোমুখি হই। সেটা ছিল ইরানে এবং সেই ম্যাচও ছিল এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের। সেই দলেও ছিল সাব্বিররা। ভালো ভালো ফুটবলাররা তখন মোহামেডানে। মোহামেডানের বিপক্ষে খেলার স্মৃতিগুলো বেশি মনে পড়ে।

প্রশ্ন:

১৯৯৫ ঢাকা সাফ গেমসে মালদ্বীপকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা মনে পড়লে কেমন লাগে?

আলী সুজাইন: তখন ফুটবলে আমরা অনেক পিছিয়ে। যে কারণে অমন ফল হয়েছিল। তবে পরের ১০-১৫ বছরে অনেকটা বদলাতে শুরু করি আমরা।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশের ফুটবলে তখন আর এখন কী পার্থক্য দেখছেন?

আলী সুজাইন: বাংলাদেশের ফুটবল তখন অন্য পর্যায়ে। লিগ ছিল অনেক ভালো। স্পনসর ছিল, অনেক অর্থ ছিল ফুটবলে। গত পাঁচ-ছয় বছরে সেটা আবার ফিরে এসেছে। বড় স্পনসর এসেছে। এখানকার ফুটবলে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। ভালো ভালো খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে। ভালো কোচ আসছে। ফলে বাংলাদেশের ফুটবল এগোচ্ছে। গত সাফে বাংলাদেশ খুব ভালো খেলেছে।

প্রশ্ন:

মালদ্বীপের ফুটবল একটা ক্লান্তিকাল পেরোচ্ছে। এখন পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটা কী?  

আলী সুজাইন: আপনাদের বাফুফের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলিকে আমরা নিয়েছি। টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর হিসেবে তিনি মালদ্বীপের ফুটবল নিয়ে কাজ করছেন। আশা করছি তিনি আমাদের ফুটবল বদলে দেবেন। এখন আমরা গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছি। গত ২০ বছরে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে ভারতের পরই ছিলাম। কখনো কখনো ভারতের ওপরে ছিলাম। সাফ জিতেছি ২ বার (২০০৮ ও ২০১৮)। কিন্তু এক-দুই বছর ধরে আমরা কিছুটা পিছিয়েছি। সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। মালদ্বীপের ফুটবল আধা পেশাদার। ফুটবলাররা কোনো না কোনো কাজ করে। ফলে এখন আমাদের ফুটবলকে আরও পেশাদার করতে হবে। ৮ দলের লিগ হয়, সেটিকে ১২ দলের করার উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে।

বাফুফের চাকরি ছেড়ে মালদ্বীপ দলে যোগ দিয়েছেন পল স্মলি
ছবি : প্রথম আলো
প্রশ্ন:

মালদ্বীপ ফুটবলে সোনালি একটা প্রজন্ম এসেছে। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় তারকা আলী আশফাক এখন আর দলে নেই। কী অবস্থা এখন তাঁর?

আলী সুজাইন: সে এখন অবসরে। তবে ক্লাব ফুটবল চালিয়ে নেবে কি না জানি না। চোট কাটিয়ে সে পুনর্বাসনে আছে। আমি মনে করি, আলী আশফাক মালদ্বীপের ফুটবলে এক বড় দূত। সে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলেই একজন আদর্শ তারকা। তাকে দেখে অনেক তরুণ ফুটবলে এসেছে।

প্রশ্ন:

আপনি মালদ্বীপের ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে সফল কোচ। এখন জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্বে আছেন। মালদ্বীপে ফুটবল নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?

আলী সুজাইন: স্বপ্ন তো অনেক বড়। আবার যেন সাফে সেরা হতে পারি। সাফে আমি মালদ্বীপের কোচ ছিলাম। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ ছিলাম। জুনিয়র পর্যায়েও কোচের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার জন্ম মালেতে। ফলে আমার জন্য সুবিধাই হয়েছে। মালদ্বীপের সবচেয়ে সফল ক্লাবের কোচও আমি। ১২টি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছি। জাতীয় দলে অনেক বছর খেলেছি। এখন চাইছি ঢাকা থেকে যেন হাসিমুখে ফিরতে পারি।

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে নিজের আদর্শ ভাবেন আলী সুজাইন
ছবি : টুইটার
প্রশ্ন:

কোচ হিসেবে আপনার আদর্শ কে?

আলী সুজাইন: স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক।