নিউজিল্যান্ড সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হলেন। আপনার কাছে এই অর্জনের তাৎপর্য কী?
তাইজুল ইসলাম: সব মিলিয়ে যদি বলি, তাহলে প্রথম ম্যাচটা অবশ্যই ভালো লেগেছে। ওই উইকেটে আমরা জিতেছি। সিলেটের উইকেটে সবার জন্য সাহায্য ছিল। ব্যাটসম্যানরাও রান করেছে। বোলাররা ভালো জায়গায় বল করে সাফল্য পেয়েছে। সিলেট টেস্টটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। আর ম্যান অব দ্য সিরিজ, এই সিরিজে তো অনেক বড় খেলোয়াড় খেলেছেন। তাঁদের মধ্যে সেরা খেলোয়াড় হতে পেরে ভালো লাগছে। তবে সিরিজটা জিততে পারলে অবশ্যই আরও ভালো লাগত।
বড় খেলোয়াড়ের কথা যেহেতু বললেন, এই সিরিজে কেইন উইলিয়ামসনকে চার ইনিংসের মধ্যে তিনবার আউট করাটা নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু?
তাইজুল: ব্যক্তিগতভাবে আমি কে ব্যাটিং করছে, তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। আমি বরং তার ব্যাটিং পরিকল্পনাটা বোঝার চেষ্টা করি। সে কী করতে চাচ্ছে আর কী চাচ্ছে না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটসম্যান যা চাইবে না, সেটাই যেন তাকে সামলাতে হয়, সেই চেষ্টা করি।
উদ্যাপন দেখে মনে হয়েছে, উইলিয়ামসনকে আউট করে আপনি একটু বেশি খুশি হয়েছেন...
তাইজুল: অবশ্যই, আপনি যখন ওই মানের কোনো একজন ব্যাটসম্যানকে আউট করবেন, তাহলে একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসে। ওই রকম উইকেট পেলে মনে আলাদা অনুভূতি হয়। এটাই স্বাভাবিক।
আমি দলের জয়ে কতটা অবদান রাখতে পারলাম, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার ভাবনাটা এমন। রেকর্ড আমার ভাবনা নয়, রেকর্ড এমনিতেই আসবে।
২০০ টেস্ট উইকেট থেকে ৮ উইকেট দূরে আছেন। কেমন লাগছে?
তাইজুল: ভালো লাগার বিষয়। আসলে আপনি তখনই সফল হবেন, যখন আপনি একাই দলকে জেতাতে পারবেন। আমি দলের জয়ে কতটা অবদান রাখতে পারলাম, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার ভাবনাটা এমন। রেকর্ড আমার ভাবনা নয়, রেকর্ড এমনিতেই আসবে। টেস্ট ক্রিকেট একটা অন্য রকম অনুভূতির জিনিস। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। মানে এখন খেলোয়াড় যারা উঠে আসছে, তাদের তো অনেক অপশন আছে। চাইলে তারা অনেকভাবেই তাদের ক্যারিয়ার সাজাতে পারে। কেউ যদি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চায়, টেস্ট খেলতে চায়, তাদের জন্য নিশ্চয়ই অর্জনটা ভালো হবে।
কোনো লক্ষ্য আছে কি? ৩০০ উইকেট, ৪০০ উইকেট?
তাইজুল: এমন কোনো নির্দিষ্ট মাইলফলক নিয়ে চিন্তা করিনি। ৩০০ বা ৪০০ উইকেট নিতে হবে, এই ভাবনা মাথায় আসেনি। আমি যত দূরে যেতে পারি, সেই চেষ্টা করব। আমি তিন শ–সাড়ে তিন শতে আটকে যেতে চাই না। যত দূরে যাওয়া যায় আমি সেই চেষ্টা করব। আমার কোনো সীমা নেই। আমি চাইতে থাকব আল্লাহর কাছে। দেখি, আল্লাহ কোথায় নিয়ে যান।
মিরপুর টেস্টের উইকেট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আপনি স্পিনার হিসেবে উইকেট নিয়ে কী বলবেন?
তাইজুল: মিরপুরে দুটি দলই ফিফটি ফিফটি অবস্থানে নামে। এখানে কখন কী হবে, এটা বোঝা কঠিন। আপনি আগে থেকে আঁচ করতে পারবেন না ম্যাচ কোন দিকে যাবে। এই টেস্টেও আমরা দুই ইনিংসেই ৫০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলাম। এরপর ওদের ধরে রাখা যায়নি। তারপরও আমি বলব, ভালো জায়গায় বল করা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আরেকটু ভালো করতে পারলে ম্যাচটা জিতেও যেতে পারতাম।
ঘরোয়া ক্রিকেটে তো আমরা এ ধরনের উইকেটে খেলি না। জাতীয় লিগ ও বিসিএলে উইকেটে ঘাস থাকে। তাহলে ক্রিকেটাররা স্পিন–স্বর্গে টেস্ট খেলার প্রস্তুতিটা কোথায় হবে?
তাইজুল: উইকেটে ঘাস থাকলে ভালো। কারণ, দেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচগুলোয় সেটা আমাদের পেসারদের সাহায্য করবে। তাদের লাইন-লেংথ, লম্বা সময় বোলিং করার ভালো পরীক্ষা হবে। আমরা যারা স্পিনার আছি, তাদেরও দেশের বাইরে বোলিং দক্ষতায় উন্নতি আসবে। আমি এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখি।
ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুতি...
তাইজুল: আপনি যখন ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে যাবেন, তখন মাঝেমধ্যে এমন অবস্থায় আপনি পড়তেই পারেন। তারপরও আমাদের ভালো করতে হবে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরুন, নিউজিল্যান্ড দল, ওরা তো এই ধরনের উইকেটে জীবনেও খেলে না। কিন্তু এবার এসে খেলেছে, জিতেছে। আমাদেরও মানিয়ে নিতে হবে। অনেকের সেই সামর্থ্য আছে। বাকিরাও যদি পারে, তাহলে ভালো হবে।
বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে এই দলে, যারা খুবই প্রাণবন্ত। খেলা সম্পর্কে তাদের ধারণাটা ভালো।
বাংলাদেশ টেস্ট দলটাকে নতুন বলা যায়। এই দল সামনে কেমন করতে পারে?
তাইজুল: শুরুটা তো ভালো হলো। বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে এই দলে, যারা খুবই প্রাণবন্ত। খেলা সম্পর্কে তাদের ধারণাটা ভালো। তরুণ যারা আছে, তারা যদি খেলাটাকে বোঝে, তাহলে সেটা দলের চেহারাটা দ্রুত পাল্টে দেয়। আমরা এদের নিয়ে ভালো কিছুই করতে পারব।