হাতে কিছু ক্রীড়াসরঞ্জাম নিয়ে কাল বিকেলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে দাঁড়িয়ে, তিনি বরুণ বিকাশ দেওয়ান। নব্বইয়ের দশকে মোহামেডান ও আবাহনীর জার্সি গায়ে ফুটবল মাঠের চেনা মুখ। খেলেছেন জাতীয় দলেও। শুরু হয়ে গেল সাবেক এই ডিফেন্ডারের সঙ্গে বর্তমান আর অতীত নিয়ে নানা কথা
* ঢাকায় এলেন কী মনে করে?
বরুণ বিকাশ দেওয়ান: আমি তো রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ডিএসএ) সাধারণ সম্পাদক। ২০১০ সালে এই পদে প্রথম নির্বাচিত হই। গত বছর আবার নির্বাচনে জিতেছি। তো দায়িত্বের অংশ হিসেবেই কিছু ক্রীড়াসরঞ্জাম কিনতে ঢাকায় আসা।
* আপনি তো জেলা ক্রীড়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনেরও (ডিএফএ) সদস্য। ডিএএস আর ডিএফএর দ্বন্দ্ব অনেক জেলাতেই। আপনার জেলায় কী অবস্থা?
বরুণ: আমার ওখানে ডিএসএ-ডিএফএ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। দুই পক্ষেই সমন্বয় আছে, কোনো ভেদাভেদ নেই। আমি ফুটবলার হওয়ায় এ ক্ষেত্রে সুবিধাই হয়েছে বলব।
* আপনাকে তো পুরো জেলার খেলাই দেখতে হয়। ফুটবলের জন্য আলাদা কী করছেন?
বরুণ: চেষ্টা করছি ফুটবলের জন্য কিছু করতে। ডিএসএর দায়িত্ব নিয়ে এ পর্যন্ত দুটি ফুটবল লিগ করেছি। ২০১১-১২ মৌসুমে এই লিগের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। আমরা প্রতি দলকে ৫০ হাজার করে টাকা দিই। পরের লিগে ১০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য দেয় মন্ত্রণালয়ে, ওটা ২২ লাখ টাকা বিক্রি করে লিগটা ভালোভাবেই চালিয়েছিলাম।
* পাঁচ বছরে মাত্র দুটি লিগ কেন?
বরুণ: স্পনসরশিপের অভাব বলেই হোঁচট খেতে হয়। তবে আমরা কিন্তু নামমাত্র লিগ করিনি। লিগটাকে সফল করতে প্রয়োজনীয় সবই করেছিলাম। সম্প্রতি আমরা অনূর্ধ্ব-১৬, ১৯ ট্রেনিং ক্যাম্প করেছি। কিছুদিন আগে ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়েও কাজ করেছি। চেষ্টা থাকে কিছু করার।
* একটা কথা সব সময়ই নানা জায়গায় আলোচনায় আসে। রাঙামাটি থেকে একসময় জাতীয় পর্যায়ে আপনিসহ অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছে। এখন আর আসছে না কেন?
বরুণ: এখন না আসার কারণ তরুণদের বেশির ভাগই খেলাধুলা-বিমুখ হয়ে পড়েছে। এখন ওরা মোবাইল, ফেসবুক ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। আমি তো দেখি অনেক কিশোর, তরুণ সারাক্ষণ মোবাইলে গেমস খেলে। খেলার প্রতি টান নেই, নেশা নেই।
* পাহাড়ি খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা অনেক বেশি। ডিফেন্ডার হিসেবে আপনার কথাই বলতে পারি। এই জায়গাতেও তো এখন খেলোয়াড় নেই...
বরুণ: কথাটা ঠিক। তবে আমি বলব, এ ক্ষেত্রে ফুটবল ফেডারেশনের অনেক দায়িত্ব। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী কাপ হয় না অনেক বছর, খেলোয়াড় উঠে আসার রাস্তাও কমে গেছে। এগুলো আগে মাঠ ছিল, তাই খেলোয়াড় উঠে এসেছে অনেক। আশার কথা, এগুলো নাকি এ বছর হবে, হলে ভালোই।
* আপনার বড় ভাই গোলরক্ষক অরুণ বিকাশও ঢাকায় খেলেছেন। তারপর আপনাদের ভাতিজা কিংশুক চাকমা। তাঁরা এখন কোথায়?
বরুণ: দাদা এখন রাঙামাটিতেই আছেন। কিংশুকও তাই। আমার দুই বোনও হ্যান্ডবলের জাতীয় দলে খেলেছে।
* আপনি তো ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে সেই চ্যালেঞ্জ কাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। সফরটা মনে পড়ে নিশ্চয়ই?
বরুণ: হ্যাঁ, হ্যাঁ, অনেক মনে পড়ে। মিয়ানমারের অং নামে একটা প্লেয়ার ছিল, ওর সঙ্গে লিগ ম্যাচে সংঘর্ষে আমার নাক ফেটে যায়। অনেক রক্ত ঝরে, হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। সেই ভাঙা নাক নিয়েই টুর্নামেন্টটা খেলে গেছি। ওই অংকে পরে আবাহনী এনেছিল। সে ঢাকায় কিছুদিন খেলে গেছে। এমন অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে সব সময়।