‘টাকা নয়, খেলাটাই আসল কথা’
২০১৬ সালের ২৪ মার্চ রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জর্ডানের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন রেজাউল করিম। সে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। ২০২১ সালে এসে কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাকি তিন ম্যাচকে সামনে রেখে পাঁচ বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ডিফেন্ডার। কঠোর পরিশ্রম করে ফিরে পাওয়া ‘নতুন জীবন’ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন রেজাউল।
প্রশ্ন :
সুনির্দিষ্ট করে বললে ১ হাজার ৮৭৯ দিন পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অনুশীলন করলেন। কেমন রোমাঞ্চ অনুভব করেছেন?
অনেক দিন পর জাতীয় দলের জার্সি পরার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জাতীয় দল মানেই খেলোয়াড়ি জীবনে সর্বোচ্চ পাওয়া। অনুশীলনও তো ভিন্নমাত্রার। প্রথম দিন হিসেবে একটু কষ্ট হয়েছে। অনুশীলন শেষে হোটেলে ফিরে গোসল করার সময় ভাবছিলাম কত দিন পর গায়ে দিলাম জার্সিটা। জার্সি গায়ে দিয়েই অন্য রকম লাগছে। আর খেলতে পারলে তো আরও অন্য রকম লাগবে।
জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন অধিনায়ক হিসেবে। এখন তো প্রাথমিক দল থেকে চূড়ান্ত দলে আসতেই আপনাকে লড়াই করতে হচ্ছে। কী ভাবছেন?
আগে অধিনায়ক ছিলাম, সেটি কোনো বিষয় নয়। জাতীয় দলে খেলতে পারাটাই আমার কাছে আসল কথা।
প্রশ্ন :
প্রায় পাঁচ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে আসাটা তো বড় ব্যাপার। ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?
আমার মনোযোগ জাতীয় দলে ছিল না। সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরার চেষ্টা করেছি। মাঠে ভালো খেলতে পারলে জাতীয় দলে ফিরতে পারব—এ আত্মবিশ্বাস আমার ছিল।
প্রশ্ন :
আপনার সমসাময়িক মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হাসান এমিলি, জাহিদ হোসেনরা জাতীয় দল থেকে ছিটকে গেছেন আগেই। সেখানে আপনার ফিরে আসার রহস্য কী?
আমার বয়স ৩৩ বছর। সার্টিফিকেটে, যা মূল বয়সও তাই। আমি কোনো দিন অনুশীলনে এক বিন্দুও ফাঁকি দিই না। ক্লাবের অনুশীলনে নিজের সর্বোচ্চটাই দিই। তাই সব সময় ফিট থাকি। তবে নিজে কখনো অতিরিক্ত অনুশীলনও করি না।
প্রশ্ন :
সর্বশেষ বাতিল হওয়া লিগ থেকেই আপনি ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছেন। আরও আগেই কি ডাক পাওয়ার আশা করেছিলেন?
গত বছর লিগে টানা পাঁচ ম্যাচ খেলেছি। শেষ চার ম্যাচেই আমরা (শেখ জামাল ধানমন্ডি) জিতি। করোনার কারণে লিগ অল্প কয়েক দিনের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় কোচের হয়তো নজরে পড়িনি। দেখলে অন্য রকমও হতে পারত। এবার হয়তো নিয়মিত খেলা দেখেছেন। নজরে পড়েছি।
প্রশ্ন :
চোট থেকে ফিরে কোথাও তেমন খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৯-২০ মৌসুমে শেখ জামাল ধানমন্ডিতে যোগ দেওয়াটাই আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট?
২০১৬ সালের নভেম্বরে ব্যথা পাই। পরের বছরেই মোহামেডান আমাকে জোর করে ক্লাবে নিয়ে যায়। আমি কোনো ক্লাবের বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। চারটি ম্যাচে পুরো সময় ও দুটিতে বদলি হিসেবে খেলেছি। সেখান থেকে বসুন্ধরা কিংস। সেখানে কয়েকটা ম্যাচে (তিনটি ম্যাচ) পুরো সময় খেলেছি, আর কিছু ম্যাচ (নয়টি ম্যাচ) বদলি হিসেবে। আমি কোনো ক্লাবে কখনো বসে থাকিনি। তাই খেলার সুযোগ না পাওয়ায় মধ্যবর্তী দল বদলেই আমি ক্লাব ছাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। পরের মৌসুমে শেখ জামালে গিয়ে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাই। আমার কাছে টাকা নয়, খেলাটাই আসল কথা।
প্রশ্ন :
জাতীয় দলের ক্যাম্পে আপনিসহ পাঁচজন সেন্টারব্যাক। এর মধ্যে তপু বর্মণ ও রিয়াদুল হাসান নিয়মিত খেলছেন। নেপালে ত্রিদেশীয় সিরিজে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তরুণ মেহেদী হাসানও। আগামী মাসে কাতারে বাছাইপর্বের দলে একাদশে জায়গা পাওয়াটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
ডিফেন্ডারদের মধ্যে তপুর সঙ্গে আগেই খেলেছি। রাফি (রিয়াদুল) ভালো করছে। মেহেদীকে এখনো ভালোভাবে দেখিনি। ভালো লড়াই হবে। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি—আমি আত্মবিশ্বাসী।
প্রশ্ন :
নতুন প্রজন্মটাকে কেমন দেখছেন?
দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে। ভুল পথে না গেলে ওদের দিয়ে অনেক কিছুই আশা করা যায়। ওদের সেই যোগ্যতা আছে।
প্রশ্ন :
নতুন কোচ জেমি ডেকে কেমন দেখলেন? আলাদা করে কোনো কথা হয়েছে?
এক দিনের অনুশীলনে কাউকে তো বিচার করা যায় না। তবে বুঝতে পারছি, খেলোয়াড়দের ভালো অনুপ্রেরণা দিতে পারেন। রোববার ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার দিন রাতে খাবারের সময় বলেছিলেন, কোনো সমস্যা হলে আমি যেন তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলি।
প্রশ্ন :
পাঁচ বছর আগের জাতীয় দলের সঙ্গে বর্তমান জাতীয় দলের সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য কেমন দেখছেন?
এখন ফাইভ স্টার হোটেলে ক্যাম্প করছি। আগে বাফুফে ভবন বা বিকেএসপিতে ক্যাম্প হতো। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা কোচিং স্টাফে। আগে একজন প্রধান কোচের সঙ্গে বড়জোর একজন বিদেশি ট্রেনার থাকতেন। ইলিয়েভিস্কি একা ছিলেন। ডিডোর সঙ্গে একজন বিদেশি ট্রেনার (আর্জেন্টিনার এরিয়াল কোলম্যান) ছিলেন। এখন চারজন বিদেশি কোচিং স্টাফ। বিদেশি হলেই যে ভালো হবে, তা নয়। তবে এটা পরিবর্তন তো। এ ছাড়া এখন জিপিএস ব্যবহার করছে জাতীয় দল। অবশ্য আমি বসুন্ধরাতে আগেও জিপিএস ব্যবহার করেছি।