বিতর্কের পর এক নারীই হলেন টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান
এক সপ্তাহ আগে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছিলেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির প্রধান ইয়োশিরো মোরি। সেই মন্তব্য নিয়ে দেশে–বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। ২০২০ টোকিও অলিম্পিক করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে গেছে। নতুন সূচিতে এ বছরের ২৩ জুলাই হবে ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় উৎসব।
হাতে সময় আছে এখন মেরে-কেটে পাঁচ মাস। এই অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি ঠিক রেখে সুষ্ঠু একটি অলিম্পিকের আয়োজন করার জন্য বাছাই প্যানেল গত তিন দিনে বেশ কয়েকটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর নেতৃত্বের পদে শেষ পর্যন্ত একজন নারীকেই বাছাই করে নিয়েছে।
সেইকো হাশিমোতো অবশ্য জাপানের রাজনীতি ও ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত এক নাম। অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরির মন্ত্রিসভায় অলিম্পিকবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। জাপানের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচিত সদস্য তিনি। নতুন পদ গ্রহণ করায় তাঁকে এখন মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
হাশিমোতোর জন্ম জাপানের উত্তরের জেলা হোক্কাইডোতে। তুষারপাতের জন্য পরিচিত হোক্কাইডো হচ্ছে জাপানের শীতকালীন খেলাধুলারও কেন্দ্রস্থল। সেই সূত্রে অল্প বয়সেই স্কেটিং রিঙ্কে তাঁর পদচারণ। পাশাপাশি প্রশিক্ষকের পরামর্শে সাইকেল চালনাতেও দক্ষ হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়ে চারটি শীতকালীন অলিম্পিকে স্পিড স্কেটিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং সাইক্লিস্ট হিসবে গ্রীষ্মকালীন তিনটি অলিম্পিকে জাপানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯২ সালে ফ্রান্সের এলবার্টভিল গেমসে মহিলাদের ১,৫০০ মিটার স্পিড স্কেটিং ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন। সেটা ছিল জাপানের কোনো নারী ক্রীড়াবিদের জন্য প্রথম শীতকালীন অলিম্পিকে পদক লাভ।
হাশিমোতো অনেক দিন থেকেই জাপান অলিম্পিক কমিটির নির্বাহী বোর্ডের সদস্য এবং ২০২০ অলিম্পিক টোকিওতে নিয়ে আসায় সক্রিয় ভূমিকা তিনি পালন করেছেন। আয়োজক কমিটির সভাপতি পদের বাছাইপ্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর হাশিমোতো বলেছেন, চলতি গ্রীষ্মে নিরাপদ ও নিশ্চিত গেমসের আয়োজন করা তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সন্দেহ নেই কঠিন অনেক বাধা আগামী পাঁচ মাস সময়ে তাঁকে অতিক্রম করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অলিম্পিকের আয়োজন শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। বিশ্বজুড়ে টিকাদানের মন্থর গতি শেষ পর্যন্ত অলিম্পিককে ভন্ডুল করে দিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করেছেন। সে রকম অবস্থায় পদ গ্রহণে এগিয়ে এসে সাহসের পরিচয় হাশিমোতো দেখিয়েছেন।
একই সঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনে নারীর অবস্থানের উন্নতি করা নিয়েও মন্তব্য করেছেন হাশিমোতো। বলেছেন, আয়োজক কমিটিতে লিঙ্গসমতা নিয়ে আসা নিয়ে তিনি কাজ করবেন। এর আগে অলিম্পিকবিষয়ক মন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, জনতার স্বাগত জানানো একটি অলিম্পিক আয়োজনে তার প্রচেষ্টা সমর্থন করে যাওয়ার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা করেছেন।