ওসাকার রোগে ধরেছিল ইনিয়েস্তাদেরও
ফ্রেঞ্চ ওপেন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় নাওমি ওসাকা বলে গেছেন তিনি তিন বছর ধরে ‘তীব্র মানসিক অবসাদে’ ভুগছেন। জাপানের টেনিস তারকার এই কথার পর প্রশ্ন উঠেছে—বিশ্বজোড়া ক্রীড়া তারকারা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার মোকাবিলা করছেন কীভাবে? সংবাদ সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এর আগে মানসিক অবসাদে ভোগা আরও ছয়জন ক্রীড়া তারকার কথা।
মাইকেল ফেলপস, সাঁতারু
২৩ বারের অলিম্পিকজয়ী প্রায়ই মানসিক অবসাদগ্রস্ততা নিয়ে তাঁর লড়াইয়ের কথা বলতেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু এ–ও বলেছিলেন, প্রতিটি গেমসের পরই মানসিক অবসাদে ভুগেছেন তিনি। ২০১৮ সালে একবার ফেলপস বলেছিলেন, ‘আমি সুইমিং পুলে অসাধারণ কিছু কীর্তি গড়তে পারি। কিন্তু পুলের বাইরেও আমি লড়াই করেছি। এগুলো আমার জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছিল এবং আমি আর বাঁচতে চাইনি।’ ২০১২ অলিম্পিকের পর অনেক দিন একটি কক্ষের মধ্যে নিজেকে আটকে রেখেছিলেন ফেলপস।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ফুটবলার
বার্সেলোনার সাবেক মিডফিল্ডার গত বছর একটি টেলিভিশন প্রামাণ্যচিত্রে অবসাদগ্রস্ততার সঙ্গে নিজের লড়াইয়ের গল্প নিয়ে কথা বলেছেন। স্পেনের হয়ে দুটি ইউরো আর ২০১০ বিশ্বকাপ জেতা ইনিয়েস্তা বলেছেন, ২০০৯ সালে তাঁর বন্ধু দানি জার্ক মারা যাওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। ২৬ বছর বয়সী এসপানিওলের সাবেক ডিফেন্ডার জার্ক হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।
বার্সেলোনার হয়ে ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর একবার মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভুগেছিলেন ইনিয়েস্তা। সেই সময়কার কথা মনে করে বার্সার সাবেক তারকা বলেছেন, ‘শরীরের ওপর দিয়েও একটা ঝাপটা গিয়েছিল। এটা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে আমাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি ঠিক ছিলাম না। দিন যেতে থাকে এবং মনে হতে অবস্থার থাকে উন্নতি হচ্ছে না। এই সময়ে আপনার কিছুই ভালো লাগবে না। আপনি আপনার মধ্যে থাকবেন না। জীবনে যেন একটা অন্ধকার নেমে আসে।’
রবার্ট এনকে, ফুটবলার
২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর হ্যানোভারের সাবেক গোলকিপার আত্মহত্যা করেন। কারণ, মানসিক অবসাদগ্রস্ততা। সেই সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার আগে জার্মানির এক নম্বর গোলকিপারের জায়গা নেওয়ার পথে নিজেকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এনকে। ধারণা করা হচ্ছিল, ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির গোলবারের নিচে তিনিই থাকবেন।
এনকের মৃত্যু নিয়ে তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন, ‘ওর মৃত্যুটা আমি কখনোই ভুলতে পারব না।’ আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের সংগঠন ফিফপ্রোর ২০১৫ সালের এক গবেষণায় বেরিয়ে আসে বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ পেশাদার খেলোয়াড় মানসিক অবসাদগ্রস্ততার বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
রন্দা রাউসি, মিক্সড মার্শাল আর্ট খেলোয়াড়
২০১৫ সালে হোলি হোমের কাছে হেরে নিজের অপরাজিত থাকার রেকর্ড হারানোর পর মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভুগতে শুরু করেন মিক্সড মার্শাল আর্টের এই নারী খেলোয়াড়। তিনি এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। পরের বছর ইউএফসিতে টানা দ্বিতীয় হারের পর ৩৪ বছর বয়সে খেলা থেকেই অবসর নিয়ে নেন রাউসি। ২০১৮ সালে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেছেন, ‘আমি অনেক কেঁদেছি, নিজেকে আইসোলেশনে নিয়ে গিয়েছিলাম।’
মার্কাস ট্রেসকোথিক, ক্রিকেটার
২০০৬–০৭ অ্যাশেজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান মার্কাস ট্রেসকোথিক নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলে আসছেন। ট্রেসকোথিকের পর তাঁর দুই সাবেক সতীর্থ স্টিভ হার্মিসন আর অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফও বেশ কয়েকবার বলেছেন যে তাঁরা কীভাবে ক্যারিয়ারে মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভুগেছেন। ২০১২ সালে একটি প্রচারণা শুরু করেন ট্রেসকোথিক। যেটির লক্ষ্য ছিল মানসিক অবসাদ থেকে খেলোয়াড়দের মুক্তির উপায় বাতলে দেওয়া।
ক্রিস্টোফ ডমিনিচি, রাগবি খেলোয়াড়
১৯৯৯ সালের রাগবি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ খেলা ফ্রান্সের রাগবি দলের উইঙ্গার ক্রিস্টোফ ডমিনিচিও মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভুগেছেন। ২০০৭ সালে আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ছোটবেলায় নিপীড়নের শিকার হওয়ার কারণেই মূলত মানসিক অবসাদগ্রস্ততা পেয়ে বসে তাঁকে। গত বছরের নভেম্বরে ৪৮ বছর বয়সী ডমিনিচিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ পরে বলেছে, অনেকেই প্যারিসের একটি উঁচু ভবনের ছাদ থেকে ৪৬ বছর বয়সী ডমিনিচকে লাফ দিতে দেখেছেন।