ক্রিকেট থেকে নৌবাহিনীতে যাওয়া সরোয়ারের শটপুটে রেকর্ড
যশোরের ঝিকরগাছায় বাড়ি। সৈনিক হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ২০১২ সালে। বাহিনীর আন্তঘাঁটি প্রতিযোগিতায় ৯ মিটার দূরে ছোড়েন শটপুট। বাছাই করে তাঁকে নৌবাহিনীর ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অধীন নিয়ে আসা হয়। শূন্য থেকে শুরু করে গোলাম সরোয়ার আজ শিখরে।
৪৭তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন শটপুটে। এই রেকর্ড করার আগপর্যন্ত কখনো সেভাবে আলোচনায় আসেননি। শটপুটে এক রেকর্ডই তাঁকে প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছে।
৩০ বছরের এই জীবনে অনেক কিছু করেছেন সরোয়ার। ২০১৩ সালে নৌ কমান্ডো কোর্স করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এলিট স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং ও স্যালভেজ ফোর্সের সদস্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন অবশ্য খেলাধুলায় ভালো করায় ফোর্সের দায়িত্ব পালন করতে হয় না। ২০১৯ সালে দক্ষিণ সুদানে যান জাতিসংঘ মিশনে। সেখানে দেখে এসেছেন অন্য জীবন।
২০২০ সালে দেশে ফিরেছেন। ২০২২ সালে জাতীয় সামার প্রতিযোগিতায় প্রথম হন শটপুটে (১৪.২৩ মিটার)। সে বছর জাতীয় প্রতিযোগিতায় ১৩.৮৬ মিটার ছুড়ে দ্বিতীয়। কাল ১৪.৮৯ মিটার ছুড়ে রেকর্ড গড়েছেন। ভেঙে দিয়েছেন ২০১৯ সালে এম ইব্রাহিমের গড়া রেকর্ড (১৪.৫৩)। জাতীয় ও সামার প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭টি খেলে ৩টি করে সোনা ও রুপা জিতেছেন।
থ্রো ইভেন্টের খেলোয়াড়দের বাড়তি খাওয়াদাওয়া লাগে। সেটা কি পর্যাপ্ত পান? বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে সরোয়ার বলছিলেন, ‘ডায়েট তো অবশ্যই লাগে। বিশেষ করে যে থ্রো করবে, তাকে অনেক খেতে হবে। ওয়েট ট্রেনিং করলে তাকে খেতে হবে। কিন্তু আমার বেতন থেকে কোনো সঞ্চয় আসলে থাকে না।’
তাহলে বাড়তি খাওয়াদাওয়া কীভাবে করেন? সরোয়ারের কথা, ‘আসলে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। খাবারের পরিমাণটা বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী নিয়ে থেকে বাড়তি খাবার...এটা কঠিন।’ থ্রো ইভেন্টের খেলোয়াড়দের শারীরিকভাবে স্বাস্থ্যবানও হতে হয়। কিন্তু বেশি ওজন হয়ে গেলে আবার চাকরিজীবনে সমস্যা। ফলে উভয়সংকটেই আছেন সরোয়ার।
যশোরে রাইজিং স্টার ক্লাবের হয়ে স্থানীয় ক্রিকেট লিগে খেলেছেন। সেখান থেকে আসেন ঢাকায়। খেলেছেন ঢাকার তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগেও। প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেট পাওয়ার পরও পরের ম্যাচে তাঁকে আর খেলানো হয়নি। তাঁর ধারণা, ক্লাব পাতানো ম্যাচ খেলেছে বলেই হয়তো খেলানো হয়নি তাঁকে। তখনই নৌবাহিনীতে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হওয়া। তবে পরিবার সচ্ছল হলে হয়তো ক্রিকেটই চালিয়ে নিতেন বলে জানালেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালো করতে অনুশীলন–সুবিধা দরকার। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত পান না। সরোয়ারের কণ্ঠে তাই আক্ষেপ, ‘ভালোভাবে থ্রো করব, তেমন মাঠ নেই। পাকা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থ্রো করি। অনুশীলন–সুবিধা পেলে আরও ভালো করা সম্ভব।’
সরোয়ারের এই সামান্য চাওয়াও কি মেটাতে পারবে বাংলাদেশের রুগ্ণ অ্যাথলেটিকস অঙ্গন?