অলিম্পিকে সোনাজয়ীর নেপথ্যে এক বাংলাদেশিও

বাংলাদেশের টেনিস কোচ আখতার হোসেনসংগৃহীত

অলিম্পিকে সোনা দূরের কথা, পদকের লড়াইও বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদদের জন্য দূরের স্বপ্ন। তবে এবারের প্যারিস অলিম্পিকে অন্তত একজন সোনাজয়ীর নেপথ্যে আছেন এক বাংলাদেশি। চীনের নারী টেনিস খেলোয়াড় ঝ্যাং কিন ওয়েন প্যারিস অলিম্পিকে নারী সিঙ্গেলস ইভেন্টে সোনা জিতেছেন। তাঁর অলিম্পিক জয়ের পেছনে বড় অবদান বাংলাদেশের টেনিস কোচ আখতার হোসেনের। ছোটবেলা থেকেই বেইজিংয়ের একটি টেনিস একাডেমিতে ঝ্যাং কিন ওয়েনের কোচ আখতার।

আরও পড়ুন

আখতার হোসেন বাংলাদেশের হয়ে ডেভিস কাপে খেলেছেন। বয়সভিত্তিক বিভিন্ন ডব্লুটিএ টুর্নামেন্টেও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিকেএসপির সাবেক এই টেনিস খেলোয়াড়। ২০০৫ সালে চীনের পোটার্স হুইল টেনিস একাডেমিতে কোচিং কোর্স করতে গিয়েছিলেন আরও দুই কোচের সঙ্গে। এর পর থেকে সেখানেই।

বেইজিংয়ের সেই টেনিস একাডেমি তাঁর অধ্যবসায় ও আগ্রহ দেখে পিটিআই কোচিং কোর্স করার সুযোগ করে দেয়। ২০০৭ সালে পিটিআই সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করেন, নেন সর্বোচ্চ প্রফেশনাল ক্যাটাগরির ডিগ্রি। এরপর পোটার্স হুইল একাডেমির কোচিং প্যানেলে চাকরি পান। ২০১০ সালে সেই একাডেমিতে অংশীদার হয়ে আসেন সাতবারের গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ী বেলজিয়ান টেনিস তারকা জাস্টিন হেনিন ও তাঁর আর্জেন্টাইন কোচ কার্লোস রদ্রিগেজ। এ দুজনের সান্নিধ্যে নিজেকে আরও শাণিত করেন আখতার।

কোচ আখতার হোসেনের সঙ্গে ঝ্যাং কিন ওয়েন
সংগৃহীত

সেই একাডেমিই চীনের টেনিস খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। আখতার সেখানেই পান ঝ্যাং কিন ওয়েনকে। শুধু ঝ্যাং কিন ওয়েনই নন, কোচ হিসেবে তিনি কাজ করেছেন টেনিস তারকা লি নার সঙ্গেও। ২০১৩ সাল থেকে ঝ্যাং কিন ওয়েনের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন আখতার হোসেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। এরপর বেইজিংয়েরই অন্য একটি একাডেমিতে চাকরি নিয়ে চলে যান। কিন্তু শিষ্য ঝ্যাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগটা সব সময়ই আছে তাঁর। ২০২৩ সালে হাংজু এশিয়ান গেমসে ঝ্যাং জেতেন সোনার পদক। অলিম্পিকেও সোনা জয়ের লক্ষ্য ছিল, যেটা পূরণ হলো এবার।

আরও পড়ুন

আখতার অবশ্য ঝ্যাংয়ের অলিম্পিক জয়ের সব কৃতিত্ব নিচ্ছেন না, ‘জাস্টিন হেনিন একাডেমিতে আরও বেশ কয়েকজন কোচ আছেন। কার্লোস রদ্রিগেজ হচ্ছেন আমাদের সবার ওপরে। ঘটনাচক্রে ঝ্যাংকে নিয়ে আমি কাজ করেছি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ওপর সবার চোখ ছিল। আমি কিছু জায়গায় তাঁকে সাহায্য করেছি, এই যা। তবে কাজ করতে করতে ওর সঙ্গে আমার একধরনের গুরু–শিষ্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’

২০১৩ সালে ঝ্যাং কিন ওয়েনের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন আখতার
সংগৃহীত

২০১৩ সালে জাস্টিন হেনিন একাডেমিতে আসেন ঝ্যাং। আখতার সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ও যখন আমাদের এখানে আসে, তখন একধরনের গ্রিপে খেলত। আমি ওকে গ্রিপ পাল্টাতে বলি। প্রথমে ও কিছুটা দ্বিধায় ছিল। কারণ, একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে গ্রিপ পাল্টে ফেলাটা খুব সহজ কিছু নয়। আমার পর্যবেক্ষণ আমি কার্লোস রদ্রিগেজকেও জানাই। উনি একদিন ঝ্যাংয়ের খেলা দেখে আমার মতে সায় দিয়ে ঝ্যাংকে গ্রিপ বদোতে বলেন।’

শুধু অলিম্পিক বা এশিয়ান গেমসই নয়; উইম্বলডন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, অস্ট্রেলিয়ান ও ইউএস ওপেন—চারটি গ্র্যান্ড স্লামেই খেলেছেন ঝ্যাং। ২০২২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে খেলেই চমক দেখিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে ইউএস ওপেনে উঠেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলেন ফাইনাল।

আরও পড়ুন

আখতার গর্ব অনুভব করেন তাঁর অলিম্পিক সোনাজয়ী শিষ্যকে দেখে, ‘ছোটবেলা থেকেই ওর মধ্যে সম্ভাবনা ছিল। ১৩–১৪ বছর বয়স থেকেই নাইকি ওর পৃষ্ঠপোষক। তবে নিজেরও অধ্যবসায় থাকতে হয়, পরিবারের সাহায্য লাগে। ঝ্যাংয়ের সেটা ছিল।’

২০১৮ সাল পর্যন্ত ঝ্যাংয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন আখতার
সংগৃহীত

২০১৪ ও ২০১৬ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রে অনুশীলনের জন্য পাঠানো হয় ঝ্যাংকে, তখন সঙ্গে ছিলেন আখতার। তাঁর চীনা শিষ্য তখনই ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশি রান্নার, ‘ডরমিটরিতে আমি নিজে নিজের রান্না করতাম। ঝ্যাং মাঝেমধ্যেই চলে আসত, আমার সঙ্গে খেতে। আমার রান্না করা গরুর মাংস খুব পছন্দ করত ঝ্যাং।’

ঝ্যাংয়ের সোনা জয়ের একজন বাংলাদেশি কোচেরও অবদান আছে বলেই তাঁর সাফল্য বাংলাদেশের জন্যও আনন্দের।