অলিম্পিক বাস্কেটবলে সফলতম তারকার মেসি ও আর্জেন্টিনা প্রেম

যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল তারকা ডায়ানা তাউরাসিরয়টার্স

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে রোজারিও সেন্ট্রালের দূরত্ব ৬ হাজার ১৮ মাইল। বিমান ভ্রমণে সময় লাগে প্রায় ২০ ঘণ্টা। কিন্তু খেলার দুনিয়ায় মিলেমিশে গেছে বিশাল দূরত্বের এই দুই শহর। প্রশ্ন হলো কীভাবে?

এবারের অলিম্পিকে অসামান্য এক কীর্তি গড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডায়ানা তাউরাসি। যুক্তরাষ্ট্রের নারী বাস্কেটবল দলের হয়ে তিনি জিতেছেন ষষ্ঠ অলিম্পিক সোনা। অলিম্পিক বাস্কেটবলে সবচেয়ে বেশি পদকজয়ী অ্যাথলেটও এখন তিনি। ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিক দিয়ে সোনা জয়ের ধারাটা শুরু করেছিলেন ডায়ানা। যে ধারা পরে বেইজিং, লন্ডন, রিও ডি জেনিরো, টোকিও এবং এবারের প্যারিস অলিম্পিকেও ধরে রেখেছেন।

আরও পড়ুন

সোনা জয়ে ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি আরও একটি কারণে আলোচনায় এসেছে ডায়ানা। সেটি হচ্ছে আর্জেন্টিনায় প্রোথিত শিকড়ের প্রতি তাঁর টান। আর এখানেই মূলত মিলেমিশে গেছে রোজারিও এবং ক্যালিফোর্নিয়া। এটি প্রাসঙ্গিকভাবে সামনে এনেছে লিওনেল মেসির প্রতি তাঁর ভালোবাসার গল্পকেও।

ফাইনালে মাঠে না নেমেই সোনাজয়ী ডায়ানার বয়স এখন ৪২। জমে ওঠা লড়াইয়ে শেষ দিকে তাঁকে মাঠে নামানোর কোনো সুযোগ পাননি কোচ। ফলে বেঞ্চে বসেই দেখেছেন দলের জয়, হয়েছেন ইতিহাসের অংশও। ডায়ানার বাবা মারিও তাউরাসি ইতালি থেকে আর্জেন্টিনায় যান পাঁচ বছর বয়সে। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা এবং দেশটির প্রেমে পড়া। এর মধ্যেই মারিও প্রেমে পড়েন রোজারিও শহরের লিলিয়ানার।

শুরু হয় তাঁদের যুগল পথচলা। ডায়ানার বড় বোন জেসিকার জন্মও হয়েছে মেসির দেশে। এরপর মারিও এবং লিলিয়ানা ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্যালিফোর্নিয়াতেই পরে জন্ম হয় ডায়ানার। জীবনের প্রয়োজনে ১৯৯৩ সালে আবারও আর্জেন্টিনায় ফিরে যান ডায়ানা ও তাঁর পরিবার।

শৈশব থেকেই খেলাধুলার প্রতি অনুরাগী ডায়ানার ভালোবাসা ছিল ফুটবলের প্রতি। তাঁর মা রোজারিও সেন্ট্রালের ভক্ত হওয়ার কারণেই ফুটবলের প্রতি এমন টান। পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা বাস্কেটবলের দিকেই নিজের পথ পরিবর্তন করে নেন ডায়ানা। তবে মায়ের মতো ডায়ানাও একসময় রোজারিও সেন্ট্রালের ভক্ত হয়ে ওঠেন। তবে এই ভালোবাসা শুধু ক্লাবটির প্রতি নয়, ওই অঞ্চল থেকে উঠে আসা অনেকের মতে সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকেও ভালোবাসেন ডায়ানা।

আরও পড়ুন

আর এই ভালোবাসা থেকেই ডায়ানা তাঁর কুকুরের নামও রেখেছেন মেসি। নিজের ছেলের নাম রেখেছেন লিও মিশেল। আর্জেন্টিনা ও মেসিকে ভালোবাসা মানে তো আবার ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেও ভালোবাসা। ডায়ানার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গেলে ম্যারাডোনার প্রতি তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনও খুঁজে পাওয়া যাবে।

ক্লারিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডায়ানা বলেছেন, ‘রোজারিও সব সময় আমার বাড়ির মতো। সেখানেও আমার পরিবার আছে। সেখানে যেভাবে মানুষ ঘোরাফেরা করে, বেকারিতে যায়, শাকসবজি কিনতে যায় কিংবা মাংসের দোকানে যায়, সেটা আপনি যুক্তরাষ্ট্রে দেখবেন না।’

ইন্টার মায়ামির আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি
এক্স

আর্জেন্টিনার ক্লাব সংস্কৃতির সঙ্গেও বেশ ভালোভাবে যুক্ত ছিলেন ডায়ানা। সেটা কেমন ছিল তা জানাতে গিয়ে এই বাস্কেটবল তারকা বলেছেন, ‘আমি সারা দিন সেখানে থাকতাম। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আমি এখনো আমার ক্লাব জীবনকে মিস করি। এমনটা যুক্তরাষ্ট্রে নেই। ভিলা ডিয়েগোতে (যে ক্লাবের সদস্য ছিলেন) আমি সবকিছু খেলতাম। ফুটবল, টেনিস, হকি সব।’

আর্জেন্টিনার প্রতি ডায়ানার ভালোবাসা কতটা গভীর, সেটা ফুটে উঠেছে তাঁর এই কথাতেও, ‘সত্যি কথা হচ্ছে আমি যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি পরি, কিন্তু ভেতরে সময় আর্জেন্টিনার জামা থাকে। আমার বাবা, মা, পুরো পরিবার আর্জেন্টাইন। আমি এই পদক দুটি দেশের জন্যই জিতেছি।’