হকি নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন সাকিব
মঞ্চের দুই পাশে সারি সারি করে রাখা ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর লোগো-সংবলিত বোর্ড। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এক ফাঁকে সাকিব আল হাসানকে ডেকে নিলেন মঞ্চে। বিশাল আকারের কাপড়ের পর্দা সরিয়ে মোনার্ক মার্টের লোগো উন্মোচন করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। ফুটবলে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালুর উদ্যোগ নিলেও তা অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে এবার হকিতে শুরু হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
টুর্নামেন্টের পোশাকি নাম বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। অক্টোবরের শেষের দিকে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে শুরু হওয়ার কথা এই লিগ। হকি ফেডারেশনের কাছ থেকে এই লিগের স্বত্ব কিনেছে বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এইস। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আজ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফের হাতে ১ কোটি টাকার চেক তুলে দেন এইসের চিফ প্যাট্রন ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভির। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন হকি ফেডারেশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক আবদুস সাদেক, সাবেক হকি তারকা প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, মাহবুব হারুন, রফিকুল ইসলামসহ অনেকে। উপস্থিত ছিলেন হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান।
হকির এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবে ছয়টি করপোরেট দল একমি, রূপায়ন গ্রুপ, ওয়ালটন, সাইফ পাওয়ারটেক ও মোনার্ক মার্ট। ষষ্ঠ দলের নাম কয়েক দিন পর ঘোষণা করবে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। এই ছয় দলের অন্যতম মোনার্ক মার্ট ক্রিকেটার সাকিবের প্রতিষ্ঠান।
বিকেএসপিতে বেড়ে ওঠা সাকিব খুব কাছ থেকে দেখেছেন হকি খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ (জিমি), মামুনুর রহমানদের (চয়ন)। এমনকি বিকেএসপিতে তাঁর রুমমেট ছিলেন হকি খেলোয়াড় ইমরান হাসান (পিন্টু)।
আজ চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এসে সাকিব যেন ফিরে গেলেন বিকেএসপির সেই দিনগুলোতে। পেছন ফিরে বলেন, ‘বিকেএসপিতে পড়ার সময় জিমি ভাই, চয়ন ভাইদের খেলা দেখতাম। আমার রুমমেট ছিল একজন হকি খেলোয়াড়। তখন বিকেএসপিতে অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হতো। আমরা সবাই খেলা দেখতে যেতাম। সমর্থন দিতাম বিকেএসপি দলকে। ওরা জিতে এলে আমরা হোস্টেলে অনেক মজা করতাম। এগুলো আসলে মজার স্মৃতি।’
শুধু আবেগের জায়গা থেকেই নয়, বাংলাদেশের হকির উন্নতির স্বার্থেই এই টুর্নামেন্টে যুক্ত হয়েছেন বলে জানালেন তিনি।
সাকিব বলেন, ‘খেলার সঙ্গে থাকাটাই আমাদের একটা বড় ব্যাপার। আর বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে খেলাধুলায় অনেক কিছু করার সম্ভাবনা আছে। সবাই যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করছে। আমরাও আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করা শুরু করলাম। আমাদের হকিতে অনেক সম্ভাবনা আছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আমরা ২৭তম স্থানে আছি। ১৬টি দেশ বিশ্বকাপ খেলে। কাজেই বিশ্বকাপে খেলা তো বেশি দূরের ব্যাপার না। আমার বিশ্বাস যদি হকিটা সঠিকভাবে প্রচার-প্রচারণা পায় এবং ভালোভাবে সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা বিশ্বকাপে খেলতেই পারি।’
টুর্নামেন্টে নিজের দল মোনার্ক মার্টকে চ্যাম্পিয়ন দেখতে চান সাকিব, ‘যেহেতু একটা দল নিয়েছি। আমাদের চিন্তা থাকবে কীভাবে এই দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ভালো হয় এবং আমরা যদি সেটার একটা রোলমডেল হতে পারি, অন্যরা সেটা হয়তো অনুসরণ করতে পারবে। তাতে সামগ্রিকভাবে হকিরই একটা উন্নতি হবে।’
খেলোয়াড়দের চাকরি ও আর্থিক নিরাপত্তার কথাও ভাবছেন সাকিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়দের সবার ক্যারিয়ার ১০-১৫ বছরের বেশি থাকে না। যারা সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়, তাদের চাকরির সুযোগ ও আর্থিক নিরাপত্তা যদি দিতে পারি, তখন খেলোয়াড়েরা খেলায় অনেক বেশি মনোযোগ দিতে পারবে।’
শুধু হকি নয়, অন্য খেলায়ও অবদান রাখতে চান তিনি। নিজের সেই ইচ্ছার কথাও বললেন এক ফাঁকে, ‘আমি আমাদের জায়গা থেকে সেই চেষ্টাটা শুরু করেছি। মোনার্ক গ্রুপ এরই মধ্যে গলফার সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেছে। এখন হকিতে এসেছি। ক্রিকেটের সঙ্গেও আসার চেষ্টা করছি। অ্যাথলেটিকসের দিকে এগোতে পারি। প্রতিটি জায়গাতে আমাদের অবদান রাখার করার ইচ্ছা আছে।’
এই ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগ থেকে আরও নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসবে বলে মনে করছেন সাকিব, ‘আমি মনে করি এই টুর্নামেন্ট হলে হকি অন্তত ৩-৪ জন নতুন খেলোয়াড় পাবে। জাতীয় দলে অনেকে খেলছে। যখন এই দল অনেক বড় হয়ে যাবে তখন প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাবে। আমার মনে হয়, এটা থেকে শুধু হকিই উপকৃত হবে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আরও ভালো অবস্থানে চলে যাব।’