ছেলে না মেয়ে বিতর্ক পেছনে ফেলে খেলিফের সোনা জয়

সোনার পদকে চুমু খাচ্ছেন ইমানে খেলিফএএফপি

অ্যাথলেটিকসের ইতিহাসে এই বিতর্ক নতুন কিছু নয়। নারী না পুরুষ—এ নিয়ে অতীতেও বিভিন্ন অ্যাথলেটকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল দ্বন্দ্ব। বিষয়টি নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রও। প্যারিস অলিম্পিকেও সামনে এসেছে এই বিতর্ক। যার কেন্দ্রে আলজেরিয়ান বক্সার ইমানে খেলিফ এবং তাইওয়ানের লিন ইয়ু–তিং। তবে বিতর্কের জবাব সোনা জিতে দিয়েছেন খেলিফ। গতকাল রাতে রোলা গাঁরোয় মেয়েদের বক্সিংয়ে ৬৬ কেজির ফাইনালে চীনের ইয়াং লিউকে হারিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

সোনা জিতে দারুণ উচ্ছ্বসিত খেলিফের জীবনে কয়েক দিন আগেও গেছে ভয়ানক এক ঝড়। বক্সিং রিংয়ে নামার পরপরই খেলিফকে ছেলে না মেয়ে, এই বিতর্কে পড়তে হয়। নিজের প্রথম ম্যাচে খেলিফ জয় তুলে নেন মাত্র ৪৬ সেকেন্ডে। তাঁর শক্তিশালী পাঞ্চে টিকতে না পেরে হাল ছেড়ে দেন ইতালির অ্যাঞ্জেলা কারিনি।

এরপর কোয়ার্টার ফাইনালেও তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারেননি হাঙ্গেরির লুকা আন্না হামোরিও। এর মধ্যে প্রকট হয় বিতর্কও। তবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) জানিয়ে দেয়, খেলিফের অলিম্পিকে থাকতে কোনো বাধা নেই। কারণ, সব ধরনের নিয়ম মেনেই অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এই আলজেরিয়ান। ফলে খেলা চালিয়ে যেতে আর কোনো বাধা ছিল না তাঁর। আর এবার সোনা জয়ের লড়াইয়ে ইয়াং লিউকে ৫–০ ব্যবধানে হারিয়ে সব সমালোচনার কড়া জবাবও দিলেন খেলিফ।

রুপাজয়ী চীনের ইয়াং লিউয়ের সঙ্গে সেলফি তুলছেন খেলিফ
এএফপি

টেনিসের অন্য তীর্থভূমি রোলা গাঁরোয় এদিন আলজেরিয়ার অনেক ভক্ত–সমর্থক খেলিফকে সমর্থন দিতে উপস্থিত ছিলেন। যাঁরা ‘ইমানে! ইমানে!’ ডাকে জমিয়ে তোলেন পুরো এলাকা। এর পরও ধারণা করা হচ্ছিল, ফাইনালের লড়াইটা খেলিফের জন্য চ্যালেঞ্জিংই হতে যাচ্ছে। ফাইনালে আসার পথে খেলিফ যে তিনজনের মুখোমুখি হয়েছিলেন, প্রত্যেককেই তিনি নিজের উচ্চতা ও শক্তি কাজে লাগিয়ে হারিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

কিন্তু ফাইনালের প্রতিপক্ষ ইয়াং উচ্চতা ও শক্তিতে তাঁর কাছাকাছিই ছিলেন। পাশাপাশি ইয়াং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলেটও বটে। কিন্তু সোনা জয়ের দৌড়ে টিকতেই পারলেন না এই চীনা অ্যাথলেট। প্রথম রাউন্ডে রিংয়ের কেন্দ্র থেকেই দাপটের সঙ্গে খেলা চালিয়ে যান খেলিফ। দুর্দান্ত এ শুরুটাই অনেক দূর এগিয়ে দেয় আলজেরীয় অ্যাথলেটকে।শুরুতে পাওয়া মোমেন্টাম শেষ পর্যন্ত ধরে রাখেন খেলিফ এবং সোনা জিতেই থামেন।

আলজেরিয়াকে এবারের অলিম্পিকে দ্বিতীয় সোনা জেতানোর পর খেলিফ বলেছেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। আট বছর ধরে আমি এই স্বপ্ন দেখে আসছিলাম এবং এই মুহূর্তে আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। একজন সোনাজয়ী। আমি আট বছর ধরে অনেক কষ্ট করেছি। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। আর এখন তার ফল হিসেবে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হলাম।’ যাঁরা তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে খেলিফ আরও বলেছেন, ‘যাঁরা আমাকে সমর্থন দিতে এসেছেন তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। আলজেরিয়ার সব মানুষকে ধন্যবাদ। আমার দল ও কোচদেরও ধন্যবাদ।’

গ্যালারিতে খেলিফের জয় উপভোগ করেছেন আলজেরিয়ান দর্শকেরা
এএফপি

খেলিফ তিন বছর আগে টোকিও অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন। তখন অবশ্য তাঁকে নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি এবং সেবার তিনি কোনো পদকও জেতেননি। তবে গত বছর ক্রোমোজোম পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ পড়েন খেলিফ। তাঁর মতো একইভাবে বাদ পড়েছিলেন লিন ইয়ু-তিংও। এবারও অলিম্পিক শুরুর পর এ দুজনের সামনে বাধার দেয়াল তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ)। এক সংবাদ সম্মেলনে আইবিএর প্রেসিডেন্ট উমর ক্রেমলেভ বলেন, ‘জেনেটিক পরীক্ষা দেখায় যে তারা নারী নয়, পুরুষ।’

আরও পড়ুন

তবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কাউন্সিল (আইওসি) এ দুজনের পাশে দাঁড়ায়। আইওসির মুখপাত্র মার্ক অ্যাডামস সংবাদ সম্মেলন করে জবাব দিয়ে বলেন, ‘এই অ্যাথলেটরা সিনিয়র পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ছয় বছর কোনো প্রশ্ন ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এই নারীরা এ প্রতিযোগিতার জন্য যোগ্য, যোগ্য থাকবেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন।’

আলজেরিয়ার বিবান মেসবাহ নামক এক দরিদ্র গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন খেলিফ। ঘরের মেয়ে অলিম্পিক জেতার পর ছয় হাজার জনগোষ্ঠীর গ্রামটি এখন আনন্দে ভাসছে। মেয়ের অলিম্পিক সোনা জয়ের প্রতিক্রিয়ায় খেলিফের বাবা ওমর খেলিফ বলেছেন, ‘এটা আলজেরিয়ার বিজয়।’ আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেবোনে নিজের এক্স অ্যাকউন্টে লিখেছেন, ‘আমরা সবাই গর্বিত। অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ইমানে, তোমার জয় গোটা আলজেরিয়ার জয়।’