৫৪০ কোটি মানুষ দেখেছেন মেসিদের বিশ্বকাপ জয়
বক্সিং ভক্তদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলছেন, মাইক টাইসনের মতো কিংবদন্তি রিংয়ে নেমেছিলেন বলেই লড়াইটি দেখতে এত মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। সে যা–ই হোক, টাইসন শেষ পর্যন্ত বয়সে তাঁর ৩১ বছরের ছোট জ্যাক পলের কাছে হেরেছেন। ফল যা–ই হোক এবং সম্প্রচার নিয়ে যত বিতর্কই হোক, কাজের কাজ কিন্তু হয়ে গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান–এর হিসাবে বিশ্বের সব খেলাধুলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা ইভেন্টের তালিকায় উঠে এসেছে টাইসন-পলের ম্যাচ। হিসাবটি করা হয়েছে টিভি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দর্শকদের বিবেচনায় নিয়ে।
তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার গত বিশ্বকাপ জয় দেখেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ—৫৪০ কোটি। স্ট্যাটিস্টার হিসাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ৭৯৫ কোটি। অর্থাৎ, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬৭.৫ শতাংশ মানুষ টিভি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মেসিদের বিশ্বকাপ জয় দেখেছেন। সান–এর হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি দর্শকের দেখা শীর্ষ ১০টি খেলাধুলার ইভেন্ট জেনে নিতে পারেন—
মাইক টাইসন-জ্যাক পল: ৬ কোটি ৫০ লাখ
নভেম্বরের শুরু থেকেই আগ্রহের তুঙ্গে ছিল তাঁদের বক্সিং ম্যাচ। এই খেলার কিংবদন্তি ৫৮ বছর বয়সী টাইসনের ২০০৫ সালের পর প্রথম পেশাদার ম্যাচ ছিল এটি। ইউটিউবার থেকে পেশাদার বক্সার বনে যাওয়া পল ৮ রাউন্ডের লড়াইটি বিচারকদের সর্বসম্মত রায়ে জেতেন। পলের ৭৮টি পাঞ্চের জবাবে টাইসন মাত্র ১৮টি পাঞ্চ লাগাতে পেরেছেন। নেটফ্লিক্সে ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচারিত হলেও বাফারিং ও অন্য কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে দেখতে অসুবিধা হয়েছে দর্শকদের। এমন কিছু না ঘটলে দর্শকসংখ্যা নিশ্চিতভাবেই আরও বাড়ত। তবু ৬ কোটি ৫০ লাখ দর্শক নিয়ে শীর্ষ দশের তালিকা থেকে ১৯৭৮ ওয়ার্ল্ড সিরিজ বেসবলকে ছিটকে ফেলেছে টাইসন-পলের ম্যাচ।
২০২৪ সুপারবোল: ১২ কোটি ৪০ লাখ
২০২৪ সুপারবোলে আমেরিকান ফুটবলের দল কানসাস সিটি চিফস ২৪-১৩ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ফিলাডেলফিয়া ইগলসের বিপক্ষে ৩৮-৩৫ ব্যবধানে জিতেছিল। ১২ কোটি ৪০ লাখ দর্শক নিয়ে এটি খেলাধুলার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দর্শকের দেখা ইভেন্টগুলোর তালিকায় নবম।
২০১৯ রাগবি বিশ্বকাপ ফাইনাল: ৮৫ কোটি ৭০ লাখ
জাপানে ২০১৯ রাগবি বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৩২-১২ পয়েন্টে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। রাগবির ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট। খেলাধুলার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দর্শকের দেখা ইভেন্টগুলোর তালিকায় অষ্টম পাঁচ বছর আগের সেই রাগবি বিশ্বকাপ ফাইনাল।
সর্বোচ্চ দর্শকের খেলাধুলার আসর (টিভি ও ডিজিটাল প্লাটফর্ম):
এশিয়ান গেমস: ৯৮ কোটি ৬০ লাখ
সর্বশেষ এশিয়ান গেমস নয়, ২০১৮ জাকার্তা এশিয়ান গেমস জায়গা পেয়েছে তালিকায়। সান জানিয়েছে, বিভিন্ন খেলার এই আসরের এই তালিকায় উঠে আসা চমকপ্রদ হলেও যুক্তিও আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোকে নিয়ে এই আসরের আয়োজন করা হয়। ৪৫টি দেশের অংশগ্রহণে এই আসর টিভিতে দেখেছেন ৯৮ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।
মোহাম্মদ আলী-লিওন স্পিংকস: ২০০ কোটি
১৯৭৮ সালে লিওন স্পিংকেসর বিপক্ষে ‘রিম্যাচ’ খেলেছিলেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী। বক্সিংয়ের ইভেন্টগুলোর মধ্যে শুধু এই ম্যাচটাই দর্শকদের দেখার সংখ্যায় টাইসন-পল ম্যাচকে টেক্কা দিয়েছে। ৮০টি দেশের মোট ২০০ কোটি মানুষ টিভিতে ম্যাচটি দেখেছিলেন। পে-পার-ভিউ টিভি চ্যানেল আসার আগে জাতীয় টিভিতে আলীই ছিলেন সর্বশেষ বড় তারকা বক্সার। আলীর ক্যারিয়ারে সেটি ছিল সর্বশেষ জয়।
২০০৬ শীতকালীন অলিম্পিক: ২১০ কোটি
শীতকালীন অলিম্পিকে অনেক অপ্রচলিত খেলা দেখা যায়, যেগুলো নিয়ে মানুষের তেমন জানাশোনা নেই। তুরিনোয় ২০০৬ শীতকালীন অলিম্পিক ২১০ কোটি মানুষের দেখার কারণ কি এটাই ছিল? সান অবশ্য তা জানাতে পারেনি। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেবারের শীতকালীন অলিম্পিকই সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখেছে।
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ: ২৬০ কোটি
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল টিভি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দেখেছে মোট ৮৩ লাখ মানুষ। তবে গোটা বিশ্বকাপ দেখেছে মোট ২৬০ কোটি। এখন পর্যন্ত এটাই ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখা টুর্নামেন্ট।
ট্যুর ডি ফ্রান্স: ৩৫০ কোটি
শুধু পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক সাইক্লিং প্রতিযোগিতাই নয়, এই খেলায় সবচেয়ে বেশি দর্শকও দেখেন টুর্নামেন্টটি। আয়োজকদের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর ১৯০টি দেশের মোট ৩৫০ কোটি মানুষ প্রতি বছর টিভি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ট্যুর ডি ফ্রান্স দেখেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ১ কোটি ২০ লাখ দর্শক দেখেন এই টুর্নামেন্ট।
২০০৮ অলিম্পিক গেমস: ৪৭০ কোটি
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’—অলিম্পিক এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত খেলাধুলার আসরগুলোর একটি। ২০৬টি দেশের অ্যাথলেটরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক দেখেছেন ৪৭০ কোটি দর্শক।
২০২২ বিশ্বকাপ: ৫৪০ কোটি
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন করেন লিওনেল মেসিরা। দুই বছর আগের সেই বিশ্বকাপ টিভি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দেখেছেন ৫৪০ কোট দর্শক। খেলাধুলার ইতিহাসে আর কোনো আসরে এত দর্শক হয়নি।