আর্থিক সমস্যায় বিক্রি করা অলিম্পিক পদক যেভাবে ফেরত পেলেন ব্রাজিলের বক্সার
গল্পটা আদ্রিয়ানা আরাউহোর। মেয়েদের বক্সিংয়ে প্রথম ব্রাজিলিয়ান হিসেবে অলিম্পিক পদক জিতেছিলেন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’ জানিয়েছে, সাবেক বক্সার আদ্রিয়ানার জেতা সে পদকটি অলিম্পিকে ব্রাজিলের শততম পদকও। আর্থিক সমস্যায় পড়ে তিনি সেই পদক বিক্রি করতে নিলামে তুলেছিলেন।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আদ্রিয়ানার জন্য সহজ ছিল না। অলিম্পিক পদক তাঁর জীবনে সেরা অর্জন। আর্থিক সমস্যার কাছে হার মেনে সেই সেরা অর্জনই বেচে দিয়েছিলেন আদ্রিয়ানা। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম এস্তাদাওকে ৪২ বছর বয়সী আদ্রিয়ানা বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি কঠিন ছিল; কিন্তু সেটি নিতেই হতো। পদকটি আমার শ্রেষ্ঠতম অর্জন। কিন্তু সামনে এগিয়ে যেতে আমার অর্থের প্রয়োজন ছিল।’
এস্তাদাও জানিয়েছে দেড় লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়ালে পদকটি নিলামে বিক্রি হয়েছিল। এ নিয়ে আদ্রিয়ানা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘সেই মুহূর্তে আমাকে যুক্তি মানতে হতো। আর্থিক সমস্যায় ছিলাম। পদকটাকে সমস্যা থেকে উত্তরণের সুযোগ হিসেবে দেখি। সকাল ১১টার দিকে এটি নিলামে তোলা হয়। বিকেল চারটার দিকে একজন ক্রেতাও মিলল। দেড় লাখ রিয়ালে ওটা বিক্রি করি। খুশি হব না মন খারাপ করব বুঝতে পারছিলাম না। টাকার জন্য ভালো লাগছিল, পদকের জন্য খারাপ লাগছিল, যেটা আমার শ্রেষ্ঠতম অর্জন।’
বক্সিং ছাড়ার পর অবসর পরিকল্পনা হিসেবে বাহিয়া অঞ্চলে একটি রেস্তোরাঁ খুলতে চেয়েছিলেন আদ্রিয়ানা। সে জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল, আর তাই পদকটি বেচে দেন। আদ্রিয়ানা প্রত্যাশাও করেননি দুই সপ্তাহ পর চমকে যাওয়ার মতো এক খবর পাবেন। পদকটি নাকি তাঁকে ফেরত দেওয়া হবে! নিলামে পদকটি যিনি কিনেছিলেন, তখন তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।
পরে জানা যায় সেই পদক ক্রয়কারী ব্যক্তিটি ব্রাজিলের বুকমেকার প্রতিষ্ঠান ‘সুপারবেট ব্রাজিল’ এর প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্দ্রে ফনসেকা। তিনি সিদ্ধান্ত নেন পদকটি আদ্রিয়ানাকে ফেরত দেবেন এবং আর্থিকভাবে তাঁকে সাহায্য করবেন। অর্থাৎ নিলাম থেকে পাওয়া অর্থ আদ্রিয়ানাকে আর ফেরত দিতে হবে না।
সুপারবেট ব্রাজিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্যাত্রিসিয়া প্রাতেস এ নিয়ে বলেছেন, ‘একজন উচ্চপর্যায়ের অ্যাথলেটের এমন অবস্থা আমাদের ছুঁয়ে গিয়েছিল। সে জন্য আমরা তাঁকে সাহায্য করতে চেয়েছি যেন তাঁর অবসরটা শান্তিপূর্ণ হয়। আমরা নিলামে পদকটি কিনেছি এটা জানাজানি হওয়ার পর, তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসে একাডেমিকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
এস্তাদাও জানিয়েছিল, আদ্রিয়ানা বাহিয়া অঞ্চলে রেস্তোরাঁ দিতে চান; কিন্তু ও গ্লোবো জানিয়েছে, টাকাটা দিয়ে সাও পাওলোয় আদ্রিয়ানা এখন বক্সিংয়ের একটি জিমনেসিয়াম চালু করবেন।
বক্সিংয়ের পাশাপাশি নতুন খেলোয়াড়দের জন্য এখানে ক্লাস, লেকচার ও অনুশীলনের আয়োজন করা হবে। আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি সুপারবেট ব্রাজিল তাঁকে সাহায্য করতে জিমনেসিয়ামের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও পথ দেখাতে চায়।