‘একটি সংস্করণে খেলবেন, অন্যটি পারবেন না, এটা বলার সুযোগ নেই’—সৌরভ গাঙ্গুলী
ঈশান কিষান ও শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে তোলপাড় চলছে ভারতের ক্রিকেটে। রঞ্জি ট্রফি না খেলায় দুই ক্রিকেটারকে নিজেদের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দিয়েছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। তবে ইএসপিএন ক্রিকইনফো গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্য দাবিও করেছে। চলতি ভারত–ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে খেলার জন্য কিষানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিসিসিআই। কিন্তু কিষান নাকি খেলতে রাজি হননি।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, কিষান ও আইয়ার ফিট ছিলেন এবং জাতীয় দলের খেলাও ছিল না। এমন অবস্থায় তাঁরা নিজ নিজ রাজ্য দলের হয়ে না খেলায় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনা যেটাই হোক, আসল ব্যাপার হলো দুজনেই লাল বলের ক্রিকেট খেলতে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। আর খেলোয়াড়দের বেড়ে ওঠায় লাল বলের ক্রিকেট খেলার গুরুত্ব নিয়েই ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী।
কিষান ও আইয়ারের ব্যাপারে সৌরভ বলেছেন, সম্ভবত এই প্রথম লাল বলের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে অসম্মতি জানাল কেউ। হাতে সময় থাকলে জাতীয় দলের সবাই ঘরোয়ায় খেলেন বলে দাবি করেন সৌরভ। এ প্রসঙ্গে তাঁকে বলা হয়েছিল, আইপিএল সামনে রেখে ভারতের তরুণ ক্রিকেটারদের প্রজন্ম সম্ভবত সাদা বলের খেলাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যদিও ভারতের টেস্ট দলে খেলার সুযোগটাও কিন্তু সবাই পায় না...।
সৌরভের উত্তর, ‘ওরা দুজনেই লাল ও সাদা বলের ক্রিকেট খেলতে পারে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পাশাপাশি আইপিএল ক্যারিয়ারও বড় হবে তাতে। দুটির সূচি তো আর সাংঘর্ষিক না। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শেষ হওয়ার পর আইপিএল শুরু হতে মাঝে প্রায় এক মাস সময় থাকে। তাই আমি কোনো সমস্যা দেখি না। অনেক উঁচু মানের খেলোয়াড় টেস্টের পাশাপাশি সাদা বলেও খেলেন।’
সৌরভ এ বিষয়ে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলদের উদাহরণও টেনেছেন। এরপর অন্য দেশের ক্রিকেটারদের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘মিচেল মার্শ অস্ট্রেলিয়ার লাল বলের প্রধান ক্রিকেটার। হ্যারি ব্রুক লাল বলের ক্রিকেট খেলে। ডেভিড ওয়ার্নার প্রচুর টেস্ট খেলে এবং সে কিন্তু সাদা বলেও অন্যতম সেরা। এমনকি আমাদের সময়েও শচীন (টেন্ডুলকার), রাহুল (দ্রাবিড়) এবং আমি টেস্টের পাশাপাশি সাদা বলেও খেলেছি। তাই এ কথা বলার সুযোগ নেই যে একটি সংস্করণে খেলবেন, অন্যটি পারবেন না।’
আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি দিল্লি ক্যাপিটালসের ক্রিকেট পরিচালকের দায়িত্বে আছেন সৌরভ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল রঞ্জি ট্রফির পারফরম্যান্সকে কতটা মূল্যায়ন করে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। সৌরভ জানিয়েছেন, রঞ্জি থেকে সাদা বলের ক্রিকেট—সবকিছুই বিবেচনা করা হয়। ভারতের তরুণ ক্রিকেটাররা রাজ্য দলে ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’–এর ব্যাপারও সামনে টেনে এনেছেন। অর্থাৎ, প্রচুর খেলার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তরুণেরা। সে জন্য বেছে বেছে খেলার ভাবনাটা আসছে।
কিন্তু সৌরভ এ ব্যাপারে একমত হতে পারেননি, ‘সত্যি বলতে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারটি ফাস্ট বোলারদের জন্য। ব্যাটসম্যানদের এটা কেন দরকার হবে? বুমরার বিশ্রামের ব্যাপারটা মানা যায়। জেমস অ্যান্ডারসনও ১৬০টির বেশি (আসলে ১৮৬টি) টেস্ট খেলেছে। তাহলে ক্যারিয়ারের শুরুতে কোন ওয়ার্কলোড সামলানোর কথা বলা হচ্ছে? আমি এখনো মনে করি, ভারতীয় ক্রিকেটের মান অসাধারণ।’
সৌরভ যেহেতু দিল্লির ক্রিকেট পরিচালক, তাই ঋষভ পন্তের প্রসঙ্গও উঠেছিল। ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার পর সুস্থ হয়ে এবারের আইপিএল দিয়ে মাঠে ফিরবেন পন্ত। দিল্লির অধিনায়ক হিসেবে মাঠে ফেরার কথা থাকলেও মৌসুমের প্রথমভাগে তিনি উইকেটকিপিং করবেন না।
সৌরভ তাঁকে নিয়ে বলেছেন, ‘জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি (এনসিএ) ওকে ৫ মার্চ খেলার ছাড়পত্র দেওয়ার পর আমরা অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা বলব। ওর বিষয়ে সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছি। কারণ, সামনে অনেক লম্বা ক্যারিয়ার পড়ে আছে। আর উইকেটকিপিংয়ে কুমার কুশাগ্রা আছে। রিকি ভুইয়ের মৌসুমও ভালো কেটেছে। এ ছাড়া শাই হোপ ও ক্রিস্তান স্টাবসও আছে।’
২২ মার্চ আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের মুখোমুখি হবে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পরদিনই পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে দিল্লি ক্যাপিটালসের অভিযান।