ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দুই বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের ‘ছক্কা’
ভারতের রাজনীতিতে অভিনয়শিল্পীদের পদচারণ নতুন কিছু নয়। খেলার জগতের তারকাদেরও ঢুঁ মারতে দেখা যায়। নির্বাচনে সেলিব্রিটিদের ইমেজ ব্যবহার করে বৈতরণি পার হওয়ার প্রবণতা ভারতের রাজনীতিতে প্রবলই। তাঁদের কতজন রাজনীতির লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হতে পারেন, সেটি অবশ্য ভিন্ন বিষয়।
তবে আজ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর সাবেক ক্রিকেট তারকা ইউসুফ পাঠান জানান দিয়েছেন, তিনি রাজনীতির লম্বা ইনিংস খেলার জন্য তৈরি। নিজের ‘বড় ম্যাচের খেলোয়াড়’ তকমার প্রমাণ তিনি রেখেছেন ভোটের জটিল লড়াইয়েও।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বহররমপুর থেকে নির্বাচনে জিতেছেন ভারতের হয়ে ২০০৭ টি–টোয়েন্টি ও ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ইউসুফ পাঠান। হারিয়েছেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য, ভারতীয় কংগ্রেসের পোড়-খাওয়া নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে। জয়ের ব্যবধান ৭৫ হাজার!
লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মোট আসন ৪২। সেখানে ইউসুফ লড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে। ইউসুফকে যেদিন মমতা বহররমপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেদিন থেকেই প্রতিক্রিয়াটা ছিল মিশ্র।
অবাঙালি ইউসুফ পাঠান বরোদার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গে তিনি কতটা সুবিধা করতে পারবেন, মতভেদ ছিল সেটি নিয়েও। বিশেষ করে অভিজ্ঞ রাজনীতিক অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তিনি টক্কর দিতে পারবেন কি না, সেটি নিয়ে ছিল অনেক শঙ্কা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াইটা দারুণভাবেই জিতেছেন ইউসুফ। অনেকটা তাঁর মারকুটে ব্যাটিং স্টাইলের মতোই।
ইউসুফের ছোট ভাই ইরফান পাঠানও দীর্ঘ সময় ধরে খেলেছেন ভারতীয় দলে। বাঁহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইরফান তিন সংস্করণেই ভারতের জার্সিতে খেলেছেন। বড় ভাই ইউসুফের তুলনায় ইরফানের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ।
ইউসুফ ভারতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেললেও টেস্ট খেলা হয়নি। তবে টি–টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছেন। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও দুবার শিরোপা জিতেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে তাঁর জনপ্রিয়তা ও বহররমপুর আসনের মুসলিম ভোটের আধিক্যকে মাথায় রেখেই ইউসুফ পাঠানকে সেখানে অধীর চৌধুরীর মতো প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল। ‘বড় ম্যাচে’ই ইউসুফের ওপর দায়িত্ব পড়েছিল তৃণমূলকে উদ্ধারের। সেই দায়িত্ব পালনে দারুণ সফল তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জিতেছেন ভারতের আরেক সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। দুর্গাপুর-বর্ধমান আসনে তিনি হারিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হেভিওয়েট প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে। দিলীপ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। কিছুদিন আগেও তিনি ছিলেন রাজ্য সভাপতি।
কীর্তি আজাদও ইউসুফ পাঠানের মতো তৃণমূলের আলোচিত প্রার্থী ছিলেন। ১৯৮৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য কীর্তির অবশ্য একটা পুরোনো রাজনৈতিক পটভূমি আছে।
বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভগবত ঝাঁ আজাদের ছেলে কীর্তি একসময় বিজেপি করতেন। টানা দুবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন ওই দলের প্রার্থী হিসেবে। তখন অবশ্য তিনি জিতেছিলেন নিজের রাজ্য বিহার থেকে। দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দুর্নীতি নিয়ে সাবেক মন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বিবাদের কারণেই তিনি বিজেপিছাড়া হয়েছিলেন।