টালমাটাল নিজেদের ফুটবল, বাংলাদেশের বিপক্ষে তবু আত্মবিশ্বাসী মালদ্বীপ
ভারত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট দ্বীপদেশ মালদ্বীপকে দক্ষিণ এশীয় ফুটবলে উন্নয়নের মডেল বলা যায়। স্বল্প জনসংখ্যার কোনো দেশেও যে এত প্রতিভাবান ফুটবলার তৈরি হতে পারে, পদ্ধতিগতভাবে কাজ করে সেটি দেখিয়েছিল তারা। একসময় যে মালদ্বীপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিপক্ষের গোল–উৎসবের লক্ষ্যবস্তু ছিল, তারাই গত ১৫–২০ বছরে নিজেদের বদলে ফেলেছিল।
সাফ অঞ্চলে ভারতের পর মালদ্বীপকে দ্বিতীয় সেরা দল বলেও মনে করতেন অনেকে। কিন্তু সেই মালদ্বীপের ফুটবলেই এক বছর ধরে চলছে চরম অনিশ্চয়তা। ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটির ফুটবল। গত অক্টোবরে বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে হেরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকেই একপ্রকার নির্বাসনে চলে গিয়েছিল তারা। শুধু তা–ই নয়, মালদ্বীপে গত এক বছরে কোনো লিগও হয়নি। খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই সত্যিকারের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ সামনে রেখে মালদ্বীপের প্রস্তুতি বলতে শুধু দ্বীপভিত্তিক প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট। সেই সঙ্গে তাদের শীর্ষ দল মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা। কোচ মোহাম্মদ সুজাইনের কথা, ‘মালদ্বীপের ফুটবল একধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বে উঠতে পারিনি আমরা। এরপর আন্তর্জাতিক ফুটবল দূরে থাক, দেশে লিগও হয়নি। আমাদের যে দুই শর বেশি দ্বীপ আছে, খেলোয়াড়েরা সেই দ্বীপে দ্বীপে প্রীতি টুর্নামেন্ট খেলেই কাটিয়েছে। মালদ্বীপ জাতীয় দলে যেহেতু মাজিয়া ক্লাবের খেলোয়াড় বেশি, তাই বলা চলে মাজিয়ার এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা সম্বল করেই তারা এসেছে।’
মালদ্বীপ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি বাসাম আদিল জলিলকে ফিফা ৯ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে দুর্নীতির দায়ে। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও ফিফার অর্থ আত্মসাতের প্রমাণও পেয়েছে ফিফা। গত জুনে বাসামের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণার পর দিবেহী প্রিমিয়ার লিগ অনুষ্ঠিত হয়নি। নিরুপায় হয়েই খেলোয়াড়েরা ভারত মহাসাগরের বুকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা মালদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপে আমন্ত্রণমূলক প্রীতি ম্যাচ খেলে কাটিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলতে নামার আগে সেই অভিজ্ঞতা কতটা কার্যকর হবে, এ প্রশ্নে মালদ্বীপের অধিনায়ক সামোহ আলী বলেছেন, ‘ম্যাচগুলো সবই ১১ বনাম ১১ ছিল। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলই আমরা খেলেছি। আমি মনে করি, সেই ম্যাচগুলোই আমাদের কাজে আসবে।’
মালদ্বীপ ফুটবলের কতটা টালমাটাল অবস্থা, সেটির একটা ধারণাও দিয়েছেন কোচ মোহাম্মদ সুজাইন, ‘গত অক্টোবরে আমরা যদি বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বে কোয়ালিফাইও করতাম, তারপরও আমরা ম্যাচগুলো খেলতে পারতাম কি না, সন্দেহ। এমনও হতে পারত, আমরা অস্ট্রেলিয়াতে খেলতে যেতেই পারলাম না, আমাদের ফুটবলের অবস্থা এতটাই খারাপ।’
এমন অবস্থায়ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি জিততেই চান তাঁরা। এ ম্যাচ দুটিই যে তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ জোগাবে, ‘আমরা এখানে জিততেই এসেছি। আমাদের ফুটবল যতই টালমাটাল হোক না কেন, ছেলেরা মানসিকভাবে শক্ত। আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেই ঘুরে দাঁড়াতে চাই।’