৩৯ গোল করা সোহানুরের আক্ষেপ কি ঘুচবে এবারই
রফিকুল ইসলাম কামালের ২৯ বছরের একটি পুরোনো রেকর্ড পড়ে গেছে হুমকির মুখে। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ঢাকার প্রিমিয়ার লিগ হকিতে ৪০ গোল করেছিলেন সাবেক এই স্ট্রাইকার। তাঁর সেই রেকর্ড এবার ভেঙে দেওয়ার খুব কাছে চলে এসেছেন সোহানুর রহমান সবুজ। ৩৯ গোল করেছেন মেরিনার ইয়াংসের এই খেলোয়াড়। গত প্রিমিয়ার লিগেও সোহানুর ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেবার করেছিলেন ৩৩ গোল। ২০১৬ লিগে জিমি করেন ৩৭ গোল।
এবারের প্রিমিয়ার লিগ হকির লিগ পর্যায়ের খেলা শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণ এখনো হয়নি। লিগ পর্যায়ের খেলা শেষে মেরিনার্স ও আবাহনীর পয়েন্ট সমান হয়ে গেছে। টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী শিরোপা নির্ধারণ হবে প্লে–অফে। যার ফলে আরও একটি ম্যাচ পাচ্ছেন সোহানুর। দেখা যাক, শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মোহামেডানের বিপক্ষে গোল করে রফিকুল ইসলামের রেকর্ড ছুঁতে বা ভাঙতে পারেন কি না তিনি।
সোহানুর স্ট্রাইকার নন, ডিফেন্ডার। পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ। এবার ৩৯ গোলের ২২টিই তিনি করেছেন পিসি থেকে। ফিল্ড গোল ১৪টি, পেনাল্টি স্ট্রোকে ৩টি। কাল লিগের শেষ দিনটা ৩৮ গোল নিয়ে শুরু করেছিলেন সোহানুর। সুযোগ ছিল বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে তিন গোল করে রেকর্ড গড়ার। সেই সুযোগও এসেছে তাঁর সামনে। ৫টি পিসি পেয়েছিলেন, কাজে লাগাতে পারেননি একটিও। তবে একটি গোল করেছেন পেনাল্টি স্ট্রোকে।
কালকের দিনটি খানিক হতাশায়ই কেটেছে সোহানুরের। তবে তাঁর দল মেরিনার্স পুলিশকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে শিরোপা জয়ের আশা।
সোহানুর যখন দলের জয় শেষে মাঠ ছাড়েন, তখন তো আর জানতেন না যে শিরোপা–নির্ধারণী প্লে–অফে খেলবে মেরিনার্স; তাই দলের জয়ের পরও একটা আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল তাঁর কণ্ঠে, ‘আক্ষেপ তো থাকবেই। একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলাম। আর দুটি গোল হলে রেকর্ড হতো। আগামী লিগের আগ পর্যন্ত আক্ষেপটা থেকেই যাবে। চেষ্টা করব আগামী লিগে আরও ভালো করে রেকর্ডটা ভাঙতে।’ কে জানে এক বছরের অপেক্ষাটা পরের ম্যাচেই ঘুচে যায় কি না সোহানুরের!
এই চাপ তাঁর ওপর ছিলই। চাপের কাছেই মূলত কাল ভেঙে পড়েছেন। মুখে অবশ্য তা স্বীকার করেননি, ‘চাপ অত ছিল না। তবে মনের ভেতর ইচ্ছা ছিল রেকর্ড ভাঙব। কিন্তু আজ (কাল) আমি পিসিতে ভালো করিনি।’ পরক্ষণে তাঁর মুখে প্রতিজ্ঞা ফুটে বের হয়, ‘তবে এখানেই থেমে থাকব না। কোথায় ভুল ছিল, সেটা বের করব। বিমানবাহিনী, জাতীয় দল বা ক্লাব—যে দলের হয়েই খেলি, চেষ্টা করব ভুল না করতে।’
সোহানুর ২০১২ সালে আজাদ স্পোর্টিয়ের হয়ে ঢাকার লিগে খেলা শুরু করেন। সেই থেকে খেলেছেন ৬টি লিগ, যার তিনটি মেরিনার্সের জার্সিতে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কিছু ম্যাচ ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেছেন। এরপর দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ।
কীভাবে সেটা সম্ভব হলো? সোহানুর পেছন ফেরেন, ‘বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার আগে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলার ইচ্ছা ছিল। ছোটবেলা থেকে একজনের নাম শুনতাম, রাসেল মাহমুদ জিমি। তিনি তারকা। তাই ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল গোল করার। তবে পিসি থেকে যে গোল পাওয়া যায়, এটা আমার জানা ছিল না। বিকেএসপি আমাকে সেই সুযোগটা করে দেয়। ওটার ওপর কাজ করি। স্যারেরা বলেন, ডিফেন্সে খেলতে হবে। সেই থেকে আমি পিসিতে ভালো করতে থাকি।’
আগামীকাল ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিপক্ষে খেলতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হয়ে ভারত যাচ্ছেন সোহানুর। জার্মানিতে একটা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেও তাঁর যাওয়ার কথা। স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে আগামীতে আরও ভালো করার প্রত্যয় ফুটে বের হয় মেরিনার্সের ২১ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড়ের চোখেমুখে।