প্যারিস অলিম্পিকে মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন ইসরায়েলের তিন অ্যাথলেট। প্যারিসে ফ্রান্সের আইন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনার পাশাপাশি গত শনিবার ইসরায়েল ও প্যারাগুয়ের মধ্যকার ফুটবল ম্যাচে সম্ভাব্য ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ অপরাধেরও তদন্তে নেমেছে ফরাসি পুলিশ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের মৃত্যুর হুমকি পাওয়ার খবরটি জানিয়েছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরালদ দারমানিন। আর এ ঘটনার তদন্তে নেতৃত্ব দেবে ফ্রান্সের জাতীয় ‘অ্যান্টি-অনলাইন হেট’ কর্তৃপক্ষ।
ফরাসি কর্তৃপক্ষকে গত সপ্তাহেই সতর্ক করেছিলেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্যারিস অলিম্পিকে ইসরায়েলি অ্যাথলেট এবং দেশটির পর্যটকদের ওপর হামলা করতে ইরানের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেছিলেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। জাতিসংঘের ইরানিয়ান মিশন গত বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রতিরোধী সংগঠনের আদর্শে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো জায়গা নেই। মিথ্যা ও প্রতারণা দিয়ে বাদী ও বিবাদীর ভূমিকা অদলবদল করা যাবে না।’
অলিম্পিকে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা-সুবিধা পাচ্ছেন ইসরায়েলের অ্যাথলেটরা। অলিম্পিক ভিলেজ কিংবা প্রতিযোগিতাস্থলেও তাদের সঙ্গে ফ্রান্সের এলিট ট্যাকটিক্যাল ইউনিটস। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সার্ভিস শিন বেট তাদের এই কাজে সাহায্য করছে।
প্যারিসে গত শনিবার প্যারাগুয়ের কাছে ইসরায়েলের ৪-২ গোলে হারের ম্যাচে সম্ভাব্য ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ অপরাধকর্মের তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৌঁসুলিরা।
গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে ব্যানার প্রদর্শনের পাশাপাশি গ্যালারিতে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগানও শোনা গেছে। এ নিয়ে কৌঁসুলিদের আলাদা বিবৃতিতে বলা হয়, পার্ক দে প্রিন্সেসে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে কিছু সমর্থক ‘মুখোশ এবং কালো পোশাক পরে এসেছিলেন, সঙ্গে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা এবং ব্যানারে লেখা ছিল “গণহত্যার অলিম্পিক”।’ তাঁদের মধ্যে একজন ‘ইহুদিবিদ্বেষী অঙ্গভঙ্গিও করেন।’
কৌঁসুলিদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্যারিস অলিম্পিকের আয়োজকেরা এ বিষয়ে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে একটি অভিযোগ করেছেন। ম্যাচের সময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকা বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদক জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ জন ‘আলট্রা’ সমর্থক ফরাসি ভাষায় গাজায় যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ফরাসি ভাষায় বলা হয়, ‘ইসরায়েল খুনি’ এবং ‘ফিলিস্তিনের শিশুদের হত্যা করছে ইসরায়েল।’
ম্যাচে ইসরায়েলের জাতীয় সংগীতের সময় গ্যালারি থেকে দুয়োধ্বনিও দেওয়া হয়। ইসরায়েলের সমর্থকেরা পাল্টা স্লোগানে বলেছেন, ‘বন্দীদের মুক্তি দাও।’ কৌঁসুলিদের বিবৃতিতে বলা হয়, বর্ণবাদী ঘৃণা ছড়ানো এবং উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন সমর্থকেরা। শুধু তা-ই নয়, ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের ব্যক্তিগত তথ্য গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার তদন্তেও নেমেছেন অ্যান্টিসাইবার ক্রাইম কর্মকর্তারা। তাঁরা তথ্যগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন।
ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের রক্ত পরীক্ষার ফল এবং লগইন করার তথ্যগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল অবশ্য গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ফ্রান্সকে সতর্ক করে দিয়ে দোষ চাপিয়েছে ইরানি পৃষ্ঠপোষক পাওয়া মহলের কাঁধে।