৮০ কোটি পকেটে পুরে ৪২ মাসের জন্য বার্সায় ‘অবা’
জানুয়ারির দলবদলের অনেকটা সময়েই বার্সেলোনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পিয়ের-এমেরিক অবামেয়াংয়ের বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার সত্যিকারের সম্ভাবনা তৈরি হয় দলবদল সময়ের একেবারে শেষ দিনগুলোতে এসে। তখন ধারণা ছিল, আর্সেনালে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়া ‘অবা’ বার্সেলোনায় যাবেন ছয় মাসের ধারে।
কিন্তু গত পরশু দলবদলের বাজার শেষ হয়ে গেলেও বার্সেলোনার দিক থেকে অবামেয়াংকে নিয়ে কোনো ঘোষণা এল না। তখন শোনা গেল নতুন গুঞ্জন। ধারে নয়, পাকাপাকিভাবেই অবামেয়াংকে সই করাতে পারবে বার্সেলোনা। কারণ, আর্সেনাল তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত সেটিই হলো। ৩২ বছর বয়সী গ্যাবনিজ স্ট্রাইকারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে আর্সেনাল, এরপর আজ বিনা মূল্যেই তাঁকে দলে টেনে নিয়েছে বার্সা। চুক্তি ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
তবে চুক্তিটা ৪২ মাসের হলেও এখানে একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। দেড় বছর পর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০ জুনে গিয়ে চুক্তি বাতিলের সুযোগ রাখা হয়েছে শর্তে। অর্থাৎ ১৮ মাস পর বার্সা আর অবা—দুই পক্ষের কারও ইচ্ছা হলে চুক্তি বাতিল করে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে।
আর চুক্তির সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ক্লাব অবামেয়াংকে কিনতে চাইলে আগ্রহী সে ক্লাবকে ‘রিলিজ ক্লজ’ হিসেবে বার্সাকে দিতে হবে ১০ কোটি ইউরো!
এরই মধ্যে বার্সেলোনার খেলোয়াড় হিসেবে স্প্যানিশ লিগ কর্তৃপক্ষের কাছে অবামেয়াংয়ের নিবন্ধন হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম। তবে এই দলবদলে অবামেয়াংয়ের লাভই হলো। আর্সেনালের কোচ মিকেল আর্তেতার সঙ্গে বনাবনি হচ্ছিল না দেখে অনেক দিন ধরেই আর্সেনালের জার্সিতে খেলতে পারছিলেন না, বার্সেলোনায় গিয়ে খেলার একটা সুযোগ তৈরি হলো।
পাশাপাশি আর্থিক দিক দিয়েও লাভবান হচ্ছেন ‘অবা’। ইংলিশ দৈনিক দ্য টাইমসকে সূত্র হিসেবে দেখিয়ে স্প্যানিশ ক্রীড়াদৈনিক এএস লিখেছে, চুক্তি বাতিল করার ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে ৮৩ লাখ ইউরো দিয়েছে বার্সা। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ৮০ কোটি টাকার বেশি!
বার্সার জন্য আরেকটি সুবিধা হলো, ফ্রান্সের লাভাল শহরে জন্ম নেওয়া অবামেয়াংয়ের ফরাসি ও গ্যাবনিজ নাগরিকত্ব তো আছেই, আছে স্প্যানিশ নাগরিকত্বও। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অ-স্প্যানিশ খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে ‘কোটা’র ঝামেলা নিয়ে ভাবতে হবে না বার্সেলোনাকে।
এসি মিলানসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবের যুব প্রকল্পে খেলে বড় হওয়া অবামেয়াংয়ের পেশাদার ফুটবলে শুরু ২০০৮–২০০৯ মৌসুমে সে সময় ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিভাগে খেলা দিজঁ-র হয়ে। এরপর ফ্রান্সের লিল, মোনাকো, সেঁত এতিয়েনের মতো ক্লাবে খেলে যোগ দেন জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে।
সে সময়ে ইয়ুর্গেন ক্লপ ছিলেন ডর্টমুন্ডের কোচ, তাঁর অধীনে—এবং পরে টুখেলসহ অন্য কোচদের অধীনে ইউরোপের অন্যতম ‘শার্প-শুটার’ হয়ে ওঠেন অবামেয়াং।
ডর্টমুন্ডে সাড়ে চার মৌসুমে ১৪১ গোল করেছেন, এর মধ্যে ২০১৭ সালে জার্মান লিগে ৩১ গোল করে হয়েছেন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
২০১৮ সালের শীতকালীন দলবদলে আর্সেনালে গেছেন, সেখানেও গোলের পর গোল করেছেন। ২০১৯ সালে লিগে ২২ গোল করে লিভারপুলের মো সালাহ ও সাদিও মানের সঙ্গে যৌথভাবে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। আর জাতীয় দলে গ্যাবনের হয়ে ৭২ ম্যাচে তাঁর গোল ৩০টি।
সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে ৩০০-এর বেশি গোল করা অবামেয়াং বার্সায় কেমন গোল করতে পারেন, সেটিই দেখার।