৭৭ কোটির ম্যারাডোনার জার্সি দিয়ে থালাও মুছতেন না শিলটন
গত ৪ মে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার জার্সি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে জার্সি পরে দুই গোল করেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, সে জার্সিটা নিলামে তুলেছিলেন সাবেক ইংলিশ ফুটবলার স্টিভ হজ। অনলাইন নিলামে সেটি ৭১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে। সেদিনকার মূল্যমানে যা ৭৭ কোটি ৪৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২ টাকা ছিল। গত কয়েক দিনের দরপতনে যা কখনো ৮০ কোটি পেরিয়েছে, আজ রোববার আবার ৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সে যা–ই হোক, অঙ্কটা চোখ কপালে তোলার মতো। খেলাধুলার স্মারক বিক্রির ইতিহাসে এত দামে বিক্রি হয়নি কোনো কিছু। কিন্তু এতেও মন গলছে না পিটার শিলটনের। সেই বিখ্যাত ম্যাচে ইংল্যান্ডের গোলবারে দাঁড়ানো এই ভদ্রলোক বলছেন, তিনি হলে এই জার্সিটা দিয়ে থালাবাসনও মুছতেন না।
সেদিন ম্যাচের ৫৫ মিনিটে তর্কসাপেক্ষে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা গোলটি করেছিলেন ম্যারাডোনা। ইংলিশ দলের অর্ধেক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে মাঝমাঠ থেকে দৌড়ানোর পথে বোকা বানিয়েছিলেন শিলটনকেও। কিন্তু এই গোলকিপারের যত রাগ ক্ষোভ ৫১ মিনিটের গোল নিয়ে। হ্যান্ড অব গড মুহূর্তের জন্মটা যে তখনই, যখন লাফ দিয়েও বলের নাগাল না পাওয়া ম্যারাডোনা হাত দিয়ে গোল করে বসেছিলেন।
এ নিয়ে এখনো ক্ষোভ যায়নি শিলটনের। সেদিন ম্যাচ শেষে হজ যে ম্যারাডোনার সঙ্গে জার্সি বদলেছেন, সেটাও জানা ছিল না ৭২ বছর বয়সী এই সাবেক গোলকিপারের। দ্য সানকে বলেছেন, ‘সেদিন যা হয়েছে, এরপর চীনের সব চায়ের বিনিময়েও আমি ম্যারাডোনার সঙ্গে জার্সি বদলাতাম না। এই জার্সি আমি ঘরের কাজেও লাগাতাম না, এমনকি বাংলোর থালাও মুছতাম না ওটা দিয়ে।’
শিলটনের দাবি, তাঁরা যদি জানতেন হজের কাছে ম্যারাডোনার জার্সি আছে, তাহলে সে জার্সির আর নিলামে ওঠা হতো না, ‘আমি এবং আরও কয়েকজন আছে, তারা যদি জানত ড্রেসিংরুমে হজের কাছে সে জার্সি আছে, তাহলে সেটা আর ড্রেসিংরুম থেকে বের হতো না। ম্যাচের ওই উত্তেজনার মাঝে, ওটা কুচিকুচি করে ছেঁড়া হতো। আমি বাজি ধরতে পারি, হজ খুশি যে আমরা সেটা করিনি। সে জানত আমাদের বললে কী হতো, তাই ওর কাছে এটা আছে, সেটা জানায়নি। আমি নিশ্চিত সে খুশি যে আমরা সেটা জানতে পারিনি।’
নিজে ম্যারাডোনার জার্সিকে পাত্তা না দিলেও সতীর্থ সেটা কাজে লাগিয়েছে, এতে অবশ্য তাঁর রাগ নেই, ‘আমরা এতটাই রেগেছিলাম যে এখন মনে হচ্ছে, না জানানোটাই ভালো হয়েছে। আমি খুশি, ওই ম্যাচ থেকে একজন ইংলিশ কিছু পেল।’ ৭১ লাখ ৪২ হাজার পাউন্ড অবশ্য ‘কিছু’র চেয়ে অনেক বেশিই। ধারণা করা হচ্ছে, ম্যানচেস্টার সিটির মালিক আবুধাবির গ্রুপ সঙ্গে সম্পর্কিত কেউই কিনেছে এই জার্সি।
জার্সিটা আর্জেন্টিনায় থাকছে না, শিলটন এতেও তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছেন, ‘আমরাই শেষ হাসিটা হাসলাম। বিশ্বকাপে ওভাবে প্রতারণার শিকার হওয়ার আদর্শ বিচার এটা। একজন ফুটবলারের করা সেরা ব্যবসা এটা। আমরা কেউই ভাবতে পারিনি এর দাম এত বেশি হবে।’
শিলটনের দাবি, নিজেরা যে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এর প্রতিদান অর্থে নিতে পেরেছেন হজ, ‘সেদিন আমি অধিনায়ক ছিলাম—এখনো আমাকে কষ্ট দেয়, শুধু বিশ্বকাপ জেতার আগ্রহ ছিল আমার। ম্যারাডোনার সঙ্গে জার্সি বদলের চিন্তা মাথাতেও আসেনি। কিন্তু এখন এত দামে বিক্রি হওয়ার পর মনে হচ্ছে, হয়তো করা উচিত ছিল। এত দিন হজকে কথা শুনতে হয়েছে; কীভাবে জোচ্চুরির পরও জার্সি বদলানোর কথা মাথায় এল ওর। আমি ওর জন্য খুশি। সে আমাদের সবার হয়েই প্রতিদান পেল। আমাদের বিপক্ষে ম্যারাডোনার প্রতারণার বিনিময়ে অনেক অর্থ কামিয়ে নিল।’