৬ ম্যাচ আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করল ব্রাজিল
কাগজ-কলমের হিসাবে সামান্য যা একটু সংশয় ছিল, তা–ও এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন নেইমাররা। কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করলেন, আন্তর্জাতিক ফুটবলের সফলতম দলটাকে ছাড়া কাতার বিশ্বকাপ হচ্ছে না।
গোল পেয়েছেন অলিম্পিক লিওঁর মিডফিল্ডার লুকাস পাকেতা। তাঁকে দিয়ে গোল করিয়েছেন নেইমার।
৪-৩-৩ ছকে নেইমারের সঙ্গে ব্রাজিলের আক্রমণভাগে ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির গাব্রিয়েল জেসুস ও লিডস ইউনাইটেডের রাফিনিয়া। ওদিকে মাঝমাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফ্রেদ আর রিয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরোর সঙ্গে নেমেছিলেন পাকেতা। রক্ষণে রিয়ালের এদের মিলিতাও সুযোগ পাননি, বরং জুটি বেঁধেছিলেন দুই সাবেক পিএসজি সতীর্থ থিয়াগো সিলভা ও মার্কিনিওস। দুই পাশে অ্যালেক্স সান্দ্রো ও দানিলোকে রেখে গোলবারের নিচে নেমেছিলেন লিভারপুলের আলিসন বেকার।
ওদিকে রায়ো ভায়েকানোর হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রাদামেল ফালকাওকে জাতীয় দলে খেলার জন্য ডাকেননি কোচ রেইনালদো রুয়েদা। তাঁর জায়গায় পোর্তোর লুইস দিয়াজ আর আতালান্তার দুভান জাপাতার ওপর ভরসা রেখেছিলেন।
বরাবরের মতো শরীরনির্ভর খেলা শুরু করে কলম্বিয়া। ব্রাজিলও প্রথমার্ধে ঠিক ছন্দে ছিল না। বিশেষ করে নেইমার বারবার মাঝে ঢুকে যাওয়ার কারণে ব্রাজিলের বাঁ দিকটার সদ্ব্যবহার করতে পারছিলেন না অন্য সতীর্থরা। মাঝমাঠে কাসেমিরো আর ফ্রেদও ছিলেন নিষ্প্রভ। যে কারণে দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রেদকে বসিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে মাঠে নামান কোচ তিতে। সেখান থেকেই ম্যাচের ভাগ্য ব্রাজিলের দিকে হেলে পড়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত খেলা শুরু করে ব্রাজিল। যদিও গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৭২ মিনিট পর্যন্ত। কলম্বিয়ার রক্ষণভাগ থেকে এক খেলোয়াড় বল উড়িয়ে মেরে দলকে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো দলের বিপদ আরও ডেকে আনেন। সে বল নিয়ন্ত্রণে আনেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মার্কিনিওস। পাকা মিডফিল্ডারের মতো রক্ষণভাগ থেকে মাঝমাঠে উঠে এসে সামনে থাকা নেইমারকে পাস দেন। নেইমারও সময় ব্যয় না করে সামনে স্ট্রাইকারের জায়গায় এগিয়ে যাওয়া পাকেতার উদ্দেশে বল পাঠান। দুই ডিফেন্ডারের মাঝে থাকা সত্ত্বেও একদম পাকা গোলশিকারির মতো ডান পায়ের টোকায় বল জালে জড়ান পাকেতা। ওই এক গোলেই নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য।
ফ্লামেঙ্গোতে আলো ছড়ানোর পর চোখে পড়েছিলেন এসি মিলানের। সেখানে ভাগ্য তেমন সহায় হয়নি। লিওঁতে গিয়ে পাকেতা যে নিজেকে দুর্দান্তভাবে ফিরে পেয়েছেন, সেটার প্রমাণ দিচ্ছে পরিসংখ্যান। মিডফিল্ডার হলেও এ বছর জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে মোট ১৯টি গোল করেছেন, করেছেন ৯টি গোলে সহায়তা।
ওদিকে নেইমার যথারীতি ছিলেন আপন আলোয় উজ্জ্বল। এ নিয়ে ব্রাজিলের হয়ে ১১৬ ম্যাচ খেলে ৭০ গোল আর ৫২ গোলসহায়তা হয়ে গেল তাঁর। অর্থাৎ ১১৬ ম্যাচ খেলে ১২২টি গোলে অবদান রেখেছেন করা বা করানোর মাধ্যমে।
ওদিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাছাইপর্বের ম্যাচে রোনালদো থাকা সত্ত্বেও জিততে পারেনি পর্তুগাল, ড্র করেছে ০-০ গোলে। উল্টো লাল কার্ড দেখে দলের বিপদ বাড়িয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক সেন্টারব্যাক পেপে। পাবলো সারাবিয়ার পেনাল্টি গোলের ওপর ভর করে জর্জিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়েছে স্পেন। মাল্টার বিপক্ষে গোল-উৎসব করেছে ক্রোয়েশিয়া। ৭-১ গোলে জেতা ম্যাচে একটি করে গোল করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের লুকা মদরিচ, ইন্টারের ইভান পেরিসিচ, মার্শেইর দুজে কালেতা-কার, আতালান্তার মারিও পাসালিচ ও হফেনহেইমের অন্দ্রে ক্রামারিচ।
গোল–উৎসবে মেতেছিল জার্মানিও। লিচটেনস্টাইনকে ৯-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে তারা। ৯ গোলের ২টিই করে গেছেন লিচটেনস্টাইনের খেলোয়াড়েরা। আত্মঘাতী দুই গোল ছাড়া বাকি গোলগুলো করেছেন টমাস মুলার (২টি), ইলকায় গুন্দোয়ান, লিরয় সানে (২টি), রিডল বাকু ও মার্কো রয়েস।