২৯০০ কোটি টাকা খরচ করে বিপদে আছেন ল্যাম্পার্ড
করোনাভাইরাস ইউরোপের সব দলকে বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। তবে সবার বিপদ চেলসির জন্য পথ খুলে দিয়েছিল। অন্য দলগুলো যেখানে দলবদলের জন্য হাত খুলে খরচ করার সাহস পায়নি, সেখানে আগের দলবদলে কোনো খরচ না করা চেলসি সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে দারুণভাবে।
হাকিম জিয়েশ, টিমো ভের্নার, কাই হাভার্টজ, বেন চিলওয়েল, এদুয়ার্দ মেন্দিকে কিনে এনেছে চেলসি। মুফতে এসেছেন থিয়াগো সিলভা। দলবদলের বাজারে ২৫ কোটি পাউন্ড খরচ করেছে চেলসি। কিন্তু লিগে এখনো সেই বিনিয়োগের ফল পায়নি। লিগে বড় দলগুলোর সঙ্গে এখনো কোনো মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স নেই তাদের।
১৭ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগের পয়েন্ট তালিকায় ৯ নম্বরে আছে চেলসি। খুব দ্রুত অবস্থা বদলাতে না পারলে চাকরি হারাতে পারেন কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। অন্তত দলটির সাবেক ডিফেন্ডার উইলিয়াম গালাস এমনটাই ভাবছেন।
ল্যাম্পার্ড বলছেন, আরেকটু সময় দরকার গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু ভের্নার কিংবা হাভার্টজের সেরাটা বের করে আনার মতো ফরমেশন বা খেলার ধরন দেখাতে পারেননি চেলসির কিংবদন্তি মিডফিল্ডার। খেলার ধরন আকর্ষণীয় হোক বা না হোক, ম্যাচে ইতিবাচক ফল পেলেই সমালোচনা দূরে সরিয়ে রাখতে পারতেন ল্যাম্পার্ড। যেটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে উলে গুনার সুলশার করতে পারছেন।
ল্যাম্পার্ডের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলো, সুলশার তাঁর দল নিয়ে শীর্ষে আছেন। কিন্তু চেলসির বর্তমান অবস্থান তো ইউরোপে খেলার যোগ্যও নয়। প্লেওজোকে গালাস তাই নিজের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন, ‘আমার ধারণা, ল্যাম্পার্ডের চাকরি ঝুঁকিতে আছে। সে এখন ভালো অবস্থানে নেই। কারণ, ওরা এখন সেরা তিনে নেই।’
এবার অন্য দলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বিনিয়োগ করেও লিগে চেলসির এমন দিশেহারা অবস্থা। যে কারণে ল্যাম্পার্ডকে নতুন করে ভাবতে বলছেন গালাস, ‘ওরা অনেক অর্থ খরচ করেছে, চেলসি বোর্ড তাই চাইবে দল প্রিমিয়ার লিগ জিতুক। আমার মনে হয়েছিল, এ মৌসুমে লিগ জেতার ভালো সুযোগ ছিল তাদের। কিন্তু এখন যে অবস্থা, আমি নিশ্চিত বোর্ড দলের ফলে মোটেও খুশি নয়। এ কারণেই আমার ধারণা, ফ্র্যাঙ্ক খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছে। ওর প্রিমিয়ার লিগ জেতার বা অন্তত সেরা তিনে থাকার চেষ্টা করতে হবে।’
লিগে এখন পর্যন্ত বড় দলগুলোর মধ্যে লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল ও এভারটনের কাছে হেরেছে চেলসি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহামের সঙ্গে করেছে ড্র। এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দশে থাকা মাত্র একটি দলকেই হারাতে পেরেছে চেলসি এবং সেটি দশে থাকা ওয়েস্ট হাম। গালাসের ধারণা, এটাই মূল সমস্যা দলটির, ‘আপনি যখন খেলোয়াড় কেনার জন্য ২৫ কোটি পাউন্ড (প্রায় ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা) খরচ করেন, তার মানে আপনি প্রিমিয়ার লিগ জিততে চান। বর্তমানে চেলসির অবস্থা খুব ভালো নয়। ওরা বড় দলের বিপক্ষে ভালো খেলছে না।’
কোচ ছাঁটাই করার জন্য বেশ বিখ্যাত চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচ। গত এক দশকে নয়জন কোচের দেখা মিলেছে চেলসিতে। গালাস তাই সাবেক সতীর্থকে নিয়ে চিন্তিত, ‘এখন সব চাপ ফ্র্যাঙ্কের ওপর এবং ওকে খুব শিগগির একটা সমাধান বের করে নিতে হবে। কারণ, আমরা সবাই জানি, চেলসির ম্যানেজার মানেই খুব সহজেই চাকরি হারাতে পারেন। ওর ওপর অনেক চাপ এবং ওকে সঠিক পদ্ধতিটাই বেছে নিতে হবে।’
দলবদলে আসা নতুন তারকাদের মধ্যে দুই জার্মান খেলোয়াড় ভের্নার ও হাভার্টজ এখনো নিজেদের প্রতিভা দেখাতে পারেননি। ল্যাম্পার্ডকে তাই দল নির্বাচনে আরেকটু কঠোর হতে বলছেন সাবেক ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার, ‘ওরা ভের্নারকে অনেক অর্থ দিয়ে এনেছে, এ কারণেই হয়তো ফ্র্যাঙ্ক প্রতি ম্যাচেই ওকে নামাচ্ছে। কিন্তু এই খেলোয়াড় তার দক্ষতা দেখাতে পারছে না। হয়তো দলের খেলোয়াড় নির্বাচনে বদল আনা দরকার।। আমি আশা করি, ফ্র্যাঙ্ক যত দ্রুত সম্ভব সমাধান খুঁজে বের করবে। সে একজন তরুণ কোচ, কিন্তু আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে সে দারুণ এক কোচ হবে। সে খুবই আবেগপ্রবণ এবং ফুটবল খুব ভালো বোঝে।’
গ্রীষ্মে এত এত খরচ করেও থামছে না চেলসি। বাজারে গুঞ্জন, ওয়েস্ট হাম থেকে মিডফিল্ডার ডেকলান রাইসকে কেনার চিন্তা চেলসির। গালাসের ধারণা, এই দলবদল চেলসির জন্য ভালোই হবে, ‘সে খুব ভালো খেলোয়াড়, ওর বয়স চিন্তা করলে অবিশ্বাস্য। খুব শক্তিশালী এবং টেকনিকের দিক থেকে ওর প্রায় সবকিছু আছে। ওর ভালো ব্যক্তিত্ব আছে। আমার ধারণা, চেলসির জন্য ভালো সংযোজন হবে সে।’