সেই জেরার্ড-কুতিনিওর ওপরই লিভারপুলের লিগ জেতার আশা
চলছে শিরোপার জোর লড়াই। লড়াইটা মূলত ম্যানচেস্টার সিটি আর লিভারপুলের মধ্যে। দুই দলের মধ্যে ব্যবধান একদম সামান্য। একবার ম্যাচ জিতে ম্যানচেস্টার সিটি এগিয়ে যাচ্ছে, তো পরক্ষণেই লিভারপুল নিজেদের হাতে থাকা ম্যাচটা জিতে সিটির গায়ে গায়ে নিজেদের অবস্থান বজায় রাখছে।
লিভারপুলের লিগ শিরোপা জেতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শুধু নিজেদের ম্যাচগুলো জিতলেই হবে না, বরং অপেক্ষা করতে হবে ম্যানচেস্টার সিটির পা হড়কানোরও।
লিভারপুলের সবাই কাতর নয়নে তাকিয়ে আছেন স্টিভেন জেরার্ড ও ফিলিপ কুতিনিওর দিকে। এই দুই মিডফিল্ডারের জাদুতে যদি অসাধ্য সাধন করা যায় আরকি!
আপাতদৃষ্টিতে এতটুকু পড়ে মনে হতেই পারে, ২০১৩-১৪ মৌসুমের সেই বিখ্যাত শিরোপালড়াইয়ের কথাই বলা হচ্ছে বুঝি। সেবারও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গিয়েছিল সিটি আর লিভারপুল। লুইস সুয়ারেজ আর ড্যানিয়েল স্টারিজের পাশাপাশি লিভারপুলের লিগ জেতার স্বপ্ন তখন স্টিভেন জেরার্ড আর ফিলিপ কুতিনিওর কাঁধেও ছিল। এই দুই মিডফিল্ডার জাদু দেখাতে পারলে লিভারপুল জিতবে, নয়তো লিগ জেতার অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘ হবে।
লিভারপুল পারেনি শেষমেশ। লিগের খরা কাটাতে পারেনি সেবার। জেরার্ডের খেলোয়াড়ি জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হিসেবে থেকে গেছে লিভারপুলের হয়ে লিগ জিততে না পারা। সময়ের ফেরে আট বছর পর আবারও সেই জেরার্ড আর কুতিনিওর দিকেই তাকিয়ে আছে লিভারপুল, লিগ জেতার আশায়।
খেলোয়াড়ি জীবনে যতি টেনেছেন আগেই। রেঞ্জার্স হয়ে জেরার্ড এখন অ্যাস্টন ভিলার কোচ। ওদিকে কুতিনিও? বার্সেলোনার প্রলোভনে পড়ে মেসিদের সঙ্গে খেলার আশায় কাতালানপাড়ায় পাড়ি জমালেও সেখানে ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে পারেননি। আবারও ফিরে এসেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, সেই জেরার্ডের ক্লাবেই, মাঝারি মানের অ্যাস্টন ভিলাতে। লিভারপুল অবশ্য এর মাঝে নিজেদের ৩০ বছরের লিগখরা ঘুচিয়েছে। এবার তাদের সামনে সুযোগ এসেছে সে সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর।
গত রাতে সাউদাম্পটনকে ২-১ গোলে হারিয়ে লিগ জয়ের আশা এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে লিভারপুল। সিটি-লিভারপুল দুই দলেরই লিগে আর মাত্র একটা ম্যাচ বাকি। শীর্ষে থাকা সিটির চেয়ে এক পয়েন্ট পেছনে লিভারপুল। অর্থাৎ শেষ ম্যাচে যদি সিটি জিতে যায়, লিভারপুলের নিজেদের ম্যাচ জিতেও লাভ নেই। তাই লিভারপুলের সমর্থকেরা বসে গেছেন প্রার্থনায়, যদি শেষ ম্যাচে সিটি না হারুক, অন্তত ড্র যেন করে!
আর শেষ ম্যাচে সিটির প্রতিপক্ষ? যারা এতটুকু পড়ে ফেলেছেন, এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা তাঁদের। সেই জেরার্ড-কুতিনিওর অ্যাস্টন ভিলা!
আট বছর আগে যে দুজনের পারফরম্যান্সের কারণে লিগ শিরোপা জেতার আশা করেছিল লিভারপুল, আট বছর পর একইভাবে দুজনের আরেকটি ‘পারফরম্যান্সের’ আশায় লিভারপুল–সমর্থকেরা। জেরার্ডের কৌশলে যদি সিটিকে হারানো যায়, কুতিনিও যদি মাত্র একটা ম্যাচের জন্য সেই বিধ্বংসী ফর্মটা ফিরে পান, যে ফর্মের কারণে নজরে পরেছিলেন বার্সেলোনার! আট বছর আগে যে কাজ জেরার্ড-কুতিনিওরা করতে পারেননি, এবার পারবেন? খেলোয়াড়ি জীবনে নিজের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে থেকে গেছে যা, কোচ জেরার্ড কি সেই আক্ষেপ মেটাতে পারবেন দূর থেকে?
যদিও পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে এই আলোচনা অর্থহীন। তবুও, ম্যাচ জিতলে সেটা তো আখেরে অ্যাস্টন ভিলার জন্যও ভালো! আর জেরার্ড-কুতিনিও যদি ভিলাকে জেতাতে পারেন, নিঃসন্দেহে ফুটবল বিশ্বের অন্যতম রোমাঞ্চকর লিগ সমাপ্তির সাক্ষী হবেন ফুটবলপ্রেমীরা।
অপেক্ষা আগামী রোববারের। সব রোমাঞ্চের পর্দা নামবে সেদিনই।