২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সুযোগ পেলে বাংলাদেশি কোচরাও তো পারেন

নেমেই ম্যাচের গল্প বদলে দিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তাঁকে কাঁধে তুলে তাই উদ্‌যাপন করলেন গোলদাতা কেনেথছবি: বাফুফে

ঘরোয়া ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় দলগুলোকে নাক সিটকাতে দেখা যায়। কিন্তু সুযোগ পেলে তরুণ স্থানীয় কোচেরাও যে ভালো করতে পারেন, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। আজ তাঁর অধীনে টানা তৃতীয় ম্যাচ জিতেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ উত্তর বারিধারাকে ৩–১ গোলে হারিয়েছে সাইফ স্পোর্টিং। সাইফের তিনটি গোলই এসেছে বিদেশিদের পা থেকে। নাইজেরিয়ান জন ওকোলি করেছেন দুই গোল, অন্যটি তাঁরই স্বদেশি ইকেচুকু কেনেথের। বারিধারার হয়ে ব্যবধান কমিয়েছেন মারুফ আহমেদ।

জুলফিকার মাহমুদ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সহকারী থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়ার পর এ নিয়ে মোট ৫টি ম্যাচে দল পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছেন জুলফিকার। পাঁচটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে সাইফ। যেখানে লিগে ২১ ম্যাচ খেলে সাইফের মোট জয় ১২টি। লিগের দ্বিতীয় পর্বে আবাহনী লিমিটেড ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকেও হারিয়ে দিয়েছে জুলফিকারের দল।
এর আগে প্রথম পর্বেও দুটি ম্যাচে কোচের দায়িত্ব পালন করে জুলফিকার বড় ব্যবধানে হারিয়ে ছিলেন পুলিশ ফুটবল ক্লাব ও ব্রাদার্স ইউনিয়নকে। লিগের এখনো বাকি আছে আরও ৩ ম্যাচ। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত সাইফের ডাগআউটে জুলফিকারের ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়।

চলতি মৌসুমে দুই দফা বিদেশি কোচ পরিবর্তন করেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। প্রথমে বেলজিয়ামের কোচ পল পুটকে নিয়োগ দেওয়া হয়, কিন্তু লিগের প্রথম পর্বের দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সমঝোতায় বিদায় করা হয় তাঁকে। প্রথম পর্বের ওই দুই ম্যাচে কোচের দায়িত্ব পালন করেন জুলফিকার। এরপর প্রধান কোচ হিসেবে সাইফ ফিরিয়ে আনে পুরোনো ইংলিশ কোচ স্টুয়ার্ট হলকে। কিন্তু ৩১ জুলাই তাঁর সঙ্গেও চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর নবায়ন করা হয়নি।

দুই গোল করেছেন ওকোলি
ছবি: বাফুফে

এ দুজনের সঙ্গেই সহকারী কোচ হিসেবে ছিলেন জুলফিকার। পুল-হলের বিদায়ে তাঁর কাঁধেই পড়ে দল সামলানোর দায়িত্ব।

প্রধান কোচের দায়িত্বটা যে দারুণ উপভোগ করছেন জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলার, তা সাইফের ম্যাচ দেখলেই বুঝা যায়। ম্যাচজুড়ে ‘টেকনিক্যাল এরিয়ায়’ দ্রুতগতিতে প্রান্ত বদল করে হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। দলও খেলছে বেশ ভালো। চোটের কারণে আজ নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল সাইফ, কিন্তু অভাবটা টের পেতে দেখা যায়নি ম্যাচে।

১৯ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত সাইফ। উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার সিরোজিউদ্দিন রাখমাতুলেভের কর্নার থেকে জটলায় রহিমউদ্দিনের শট গোললাইন থেকে বাঁচান প্রতিপক্ষ বারিধারার এক ডিফেন্ডার। ফিরতি বলে রহিমউদ্দিনের শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। বারিধারা গোলকিপার মিতুল মারমার ভুলে ২৮ মিনিটে এগিয়ে যায় সাইফ। মিতুলের শট ওকোলির পায়ে গিয়ে পড়ে। বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গতিতে রাইটব্যাক সোহেল রানাকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন ওকোলি। মিতুল এগিয়ে এলে তাঁর মাথার ওপর দিয়ে চিপ করে গোলটি করেন নাইজেরিয়ান এই ফরোয়ার্ড।

খেলায় সাইফই ছিল এগিয়ে
ছবি: বাফুফে

সাইফের মাঝমাঠটা মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন সিরোজিউদ্দিন। সেট পিসগুলোও মাপা, বিশেষ করে কর্নারগুলো। ৫০ মিনিটে তাঁর কর্নারেই সাইফ দ্বিতীয় গোল পেয়ে যেতে পারত। কর্নারে ইকেচুকু কেনেথের হেড ফিরিয়ে দিয়ে বারিধারাকে সে যাত্রায় বাঁচান গোলকিপার মিতুল। ফিরতি বলে গোলমুখ থেকে সবুজ হোসেন শট ক্রসবার উঁচিয়ে বাইরে।

৫৮ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে বদলি হিসেবে নামান সাইফ কোচ জুলফিকার। তরুণ এই উইঙ্গার নেমেই দুই গোল করিয়ে ম্যাচের চেহারা একেবারে বদলে দেন। ৬৬ মিনিটে ফাহিমের ক্রসে পা লাগিয়ে স্কোরলাইন ২–০ করেছেন কেনেথ। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর যোগ করা সময়ে আরও একটি গোল করান ফাহিম। ডান প্রান্ত দিয়ে দ্রুতগতিতে বক্সে ঢুকে ওকোলির সামনে থালায় সাজিয়ে দেওয়ার মতো বল দেন তিনি। ওকোলি পা ছোঁয়াতে কোনো ভুল করেননি, গোল! লিগে এটি তাঁর ১৬তম গোল।

কেনেথের গোলের মুহূর্ত
ছবি: বাফুফে

এর আগে ৭৫ মিনিটে বারিধারার একমাত্র গোলটি করেছেন তরুণ ফরোয়ার্ড আহমেদ। সুমন রেজার পাস থেকে বক্সের ওপর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেন তিনি। এটি ছিল শুধুই ব্যবধান কমানো। এই জয়ে ২১ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে সাইফ। ২২ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে বারিধারা।

দিনের অন্য ম্যাচে কমলাপুর সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের কাছে ১–০ গোলে হেরেছে এরই মধ্যে দ্বিতীয় বিভাগে অবনমন নিশ্চিত হয়ে যাওয়া আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। ২২ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে পুলিশ। সমানসংখ্যক ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতেই থাকল আরামবাগ।