সালাহ, মানে না ফিরমিনো?
গত মৌসুমে ইউরোপজুড়ে রীতিমতো ত্রাস ছড়িয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে ও রবার্তো ফিরমিনো। আক্রমণের ত্রিফলা এবার একটু ধার হারিয়েছে। এবার অমন ফর্মে না থাকলেও ইউরোপের সেরা ত্রিফলা এখনো এ তিনজন। লিভারপুলের বর্তমান তারকাদের কোন চোখে দেখেন ক্লাব কিংবদন্তি ফাওলার। এ তিনজনের কাউকে যদি বেছে নিতে হয় তবে কাকে বেছে নেবেন? অথবা তিনজন যদি না থাকেন তবে কারা পূরণ করবে সে শূন্যস্থান। ফাওলার দুটো প্রশ্নের উত্তর দিলেন আবার দিলেন না!
লিভারপুলের জার্সিতে অনন্য এক রেকর্ড ছিল ফাওলারের। মাত্র ৪ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে হ্যাটট্রিক করার অবিশ্বাস্য এক রেকর্ড। তিন বছর আগেও আর্সেনালের বিপক্ষে ওই হ্যাটট্রিকটা প্রিমিয়ার লিগের দ্রুততম ছিল। ফাওলারের কাছ থেকে এরপর ওই রেকর্ড ছিনিয়ে নিয়েছেন এমন একজন, যিনি এখন লিভারপুলের খেলোয়াড়। সাউদাম্পটনে খেলার সময় সেনেগালের উইঙ্গার সাদিও মানে ফাওলারের রেকর্ডটা ভেঙে দেন। মানে এখন লিভারপুলের আক্রমণভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে মানে যেহেতু সাউদাম্পটনের হয়ে সে কীর্তি গড়েছেন, তাই লিভারপুলের জার্সি গায়ে এখনো সবচেয়ে দ্রুত হ্যাটট্রিক করার রেকর্ডে ফাওলারের নাম জ্বলজ্বল করছে।
রেকর্ডটা ভাংতে পারে, এমন কে আছে এই লিভারপুল দলে? প্রশ্নের উত্তরে ‘কূটনীতিক’ বনে গেলেন ফাওলার, ‘আমাদের এই দলটায় অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। মো সালাহ অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। গোলের সামনে অনেক ভয়ংকর সে। একই কথা বলা যেতে পারে ফিরমিনো ও মানের ক্ষেত্রেও। তাই এদের মধ্যে যে কেউই আমার কাছ থেকে রেকর্ডটা কেড়ে নিতে পারে। আর এদের কারওর কাছে রেকর্ড হারাতে পারলে আমি বেশ খুশিই হব। আর সত্যি বলতে কি, ফুটবল একটা দলগত খেলা। রেকর্ডটা কার হলো না হলো এ নিয়ে আমি বিশেষ মাথা ঘামাই না। লিভারপুলের হয়ে যে-ই এই রেকর্ডটা করুক না কেন, আমি খুশি হব। কেননা তাতে দলের উপকার হবে। আজকে আপনি যদি জার্সি পরে লিভারপুলের হয়ে মাঠে নেমে গিয়ে আমার রেকর্ডটা ভেঙে দেন, আমি তাতেও খুশি হব। কারণ দিন শেষে এটা দলগত খেলা। লিভারপুল যাতে সব ম্যাচ জেতে, এই লক্ষ্যেই আমরা সবাই মাঠে নামি। আর এই লক্ষ্যের কাছে বাকি সব ব্যক্তিগত রেকর্ড গৌণ আমার কাছে।’
বোঝা গেল আলাদাভাবে কারওর নাম ফাওলার বলবেন না। তাই এবার একটু ঘুরিয়ে ফাওলারের কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘ধরুন লিভারপুল এই মৌসুমের শেষ লিগ ম্যাচ খেলতে নেমেছে অ্যানফিল্ডে, উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে। ম্যাচটা জিতলে লিভারপুল লিগ শিরোপা জিতবে। ম্যাচে ০-০ গোলে সমতা। এমন অবস্থায় নব্বই মিনিটে লিভারপুল একটা পেনাল্টি পেল। সে পেনাল্টিতে গোল করার জন্য আপনি কাকে চান?’ ফাওলার বুঝতে পেরে হাসলেন কিছুক্ষণ। পরে কোচের ওপরেই ছেড়ে দিলেন বিষয়টা, ‘আমাদের পেনাল্টি নেওয়ার কাজ এখন খুব সম্ভবত মো (সালাহ) করে থাকে। ইউর্গেন তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। শেষ কবে পেনাল্টি মিস করেছিল ও? আমার মনে পড়ে না। পেনাল্টি থেকে গোল করার রেকর্ড অসাধারণ ওর। তাই আমার মনে হয় এমন পরিস্থিতিতে মো এর মতো একজনের পেনাল্টিটা নিতে আসা উচিত যে পেনাল্টিতে গোল করে অভ্যস্ত।’
বর্তমানে লিভারপুলের আক্রমণভাগ বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে ও রবার্তো ফিরমিনোর ছবি। এই তিনজনকে বাদ দিয়ে ফাওলারকে যদি বলা হয় কোন তিনজনকে তিনি তার নিজস্ব দলে রাখতে চান, তাহলে কাদের বেছে নেবেন? ফাওলার লিভারপুলের বাইরে যেতে চাইলেন না, ‘আমার আদর্শ আক্রমণভাগে অবশ্যই রাশি (ইয়ান রাশ) থাকবে। লিভারপুলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা সে। ওর গোল করার ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। সতীর্থ হিসেবেও অসাধারণ ছিল ও। অনেক কিছু শিখেছি আমি ওর কাছ থেকে। তাই ওকে আমি রাখবই। দ্বিতীয়জন হিসেবে থাকবে কেনি ডালগ্লিশ। খুব সম্ভবত লিভারপুল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা সে, সেটা কোচ ও খেলোয়াড় দুই হিসেবেই। আর তৃতীয় জন হিসেবে আমি নিজেকে রাখতে চাই। না, এটাকে আমার ঔদ্ধত্য ভাববেন না। আমি শুধু চাই রাশ আর কেনির সঙ্গে খেলতে কেমন লাগে, সেটা অনুভব করতে। রাশের সঙ্গে খেললেও কেনির সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়নি আমার। আর দশজন লিভারপুল সমর্থকের মতো আমার শৈশবের নায়ক ছিল সে। আমি যখন আমার ক্যারিয়ার শুরু করি, তার অনেক আগেই ও তার বুটজোড়া তুলে রাখে। তাই ওর সঙ্গে একই পিচে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়নি আমার। তাই আমি রাশ আর ফাওলারের সঙ্গে নিজেকে রাখব!’