২০১৮ সালে ভুটানে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এক বছর বয়স বাড়িয়ে এবার অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় রূপ নেওয়া টুর্নামেন্টে সেই শিরোপা ধরে রেখেছেন মেয়েরা। পরশু কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মারিয়া মান্দাদের জয় ১-০ গোলে। শুধু এ দুটি সাফল্যই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে এর আগে দুবার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে সেরা হয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ার সেরা দলগুলোর সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার অভিজ্ঞতাও হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের।
মেয়েদের বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সাফল্যের পথে হাঁটছে বাংলাদেশের ফুটবল। কিন্তু নারী জাতীয় দলের অবস্থা বড়ই করুণ। যে কারণে ২০১৯ সালে নেপালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ নারী দল পাঠানোর সাহসই পায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)! জাতীয় দল নিয়মিত না খেলায় মেয়েদের বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বাদ পড়ে যায় বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে ফিরে এসে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৩, ভারত ৫৫, নেপাল ১০৩। বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল কোথায় দাঁড়িয়ে, তা বোঝা যাবে আর একটি তথ্যে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে তিন ম্যাচের সব কটিই হেরে বাংলাদেশের মেয়েরা খেয়েছেন ১৫ গোল।
ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে একই মেয়েদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের পাশাপাশি খেলানো হচ্ছে জাতীয় দলেও। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফজয়ী দলটিতেই আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ১৫ খেলোয়াড়। বেশ কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলে খেলা মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমারা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে দারুণ কিছু করবেন, সেটাই তাই স্বাভাবিক। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলেন তাঁরা। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে হয় শক্ত প্রতিপক্ষের সঙ্গে। বড়দের ফুটবলে সে কারণেই আর পেরে ওঠেন না মারিয়ারা।
দেশের ফুটবল বিশ্লেষকেরা বলছেন, মেয়েদের বয়সভিত্তিক দলের কাছ থেকে নগদ সাফল্য চায় বাফুফে। তাই ঘুরেফিরে একই মেয়েদের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলানো হচ্ছে। যাঁরা জাতীয় দলে খেলছেন, তাঁরাই আবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য। আলাদা কোনো জাতীয় দল তাই গড়ে উঠছে না। কোচ গোলাম রব্বানী বয়সভিত্তিক থেকে জাতীয়—সব দলেরই কোচ।
কিন্তু বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফল্য এলেও জাতীয় দলের দূরবস্থার কারণ কী? গোলাম রব্বানী বলছেন, ‘আমাদের মেয়েদের বয়স কম। ফলে তাদের মেধা বিকশিত হয়নি। এ কারণে জাতীয় দলের জার্সিতে ওরা পেরে ওঠে না। তবে আশা করি, কয়েক বছরের মধ্যে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে। আমরা একটি শক্তিশালী জাতীয় দল পাব।’
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ভারতকে হারালেও মেয়েদের বাংলাদেশ জাতীয় দল কখনো ভারতের বিপক্ষে জেতেনি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শিলিগুড়িতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতের সঙ্গে ড্র করেছিল। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে গোলকিপার সাবিনার ভুলে ৩-১ গোলে হার। তখন তাঁদের বয়সও ছিল কম। স্বাভাবিকভাবে বয়স বাড়া এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে ভালো খেলায়ও উন্নতি আসার কথা বাংলাদেশের মেয়েদের। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে মারিয়াদের খেলায় সে উন্নতি চোখে পড়ে না। ২০১৮ সালে ভারতের সামনে বাংলাদেশ উড়ে যায় ৭-১ গোলে। ২০১৯ সালে ৪-০ গোলে হার।
বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে আসতে আসতেই কেন রুগ্ণ হয়ে যায় বাংলাদেশের নারী ফুটবলের চেহারা? বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির প্রধান ও ফিফা কাউন্সিলর মাহফুজা আক্তার ব্যাখ্যা দিতে চাইলেন, ‘জাতীয় দলের ভালো ফল পেতে হলে চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের মেয়েদের বয়স কম, অভিজ্ঞতাও কম। তাই শক্তিশালী জাতীয় দল গঠন করা যাচ্ছে না। ওরা খেলতে থাকলে চার বছর পর ভালো জাতীয় দল পাওয়া যাবে।’