সবচেয়ে বড় জয় পেল মোহামেডান
প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে উত্তর বারিধারার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেড। তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে জিততে না পারায় পয়েন্ট হারানোর আফসোস করেছিলেন মোহামেডানের কোচ শন লেন। আজ সে দুঃখ ভুলতে সুদে-আসলে সব যেন তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল সাদা–কালোরা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বারিধারাকে আজ ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে মোহামেডান। এবারের লিগে এটি মোহামেডানের সবচেয়ে বড় জয়।
ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির হয়ে একটি করে গোল করেছেন আমির হাকিম বাপ্পি, সুলেমান দিয়াবাতে, অনিক হোসেন ও ইয়াসান আউচিং। ব্যবধান কমিয়েছেন সুমন রেজা। দুই দলের ৫ গোলের মধ্যে স্থানীয় খেলোয়াড়েরা করেছেন ৩টি। ২ গোল এসেছে বিদেশিদের পা থেকে। স্কোর লাইন দেখে মনে হতে পারে, মোহামেডানের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছিল বারিধারা। আসলে তা নয়। গোল মিসের খেসারত দিয়েছে বারিধারা। এমনকি পেনাল্টি থেকেও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
মোহামেডানের রক্ষণভাগের নির্ভরযোগ্য সেন্টারব্যাক হাবিবুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দলের বাইরে। চোটে ছিটকে গিয়েছেন সাদা–কালোদের মাঝমাঠের মেরুদণ্ড ও অধিনায়ক জাপানি মিডফিল্ডার উরু নাগাতাও। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ফুটবলারের অনুপস্থিতি কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি দলের খেলায়। হাবিবুরের জায়গায় একাদশে খেলা অনিক হোসেন বরং দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন বারিধারাকে।
মোহামেডান কোচ শন লনের দর্শনটা পরিষ্কার। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না ‘হাই প্রেসিং’য়ে তাদের পিষ্ট করে দেওয়া। আক্রমণভাগে নিজেদের পায়ে বল থাকলে একসঙ্গে সাত খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। শুরু থেকেই নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রথমার্ধেই ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় দলটি।
আক্রমণে ডান প্রান্ত দিয়ে শাহেদ মিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে বেশি। ১৫ মিনিটে তাঁর একটি ক্রস পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে বিপদমুক্ত করেছেন বারিধারা গোলরক্ষক মিতুল মারমা। পরের মিনিটে শাহেদের আরেকটি শট দুর্দান্ত সেভ করেন মিতুল। ১৯ মিনিটে মোহামেডানের প্রথম গোলটিতে মিতুলের আর করার কিছু ছিল না। সুলেমান দিয়াতের ক্রসে বারিধারা ডিফেন্ডার হেডে ক্লিয়ার করলে বল পেনাল্টি আর্কের ওপর গিয়ে পড়ে। নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে জালে জড়িয়ে দিয়েছেন আমির হাকিম।
জাতীয় দলের স্ট্রাইকার ও অধিনায়ক সুমন রেজার কল্যাণে বারিধারা ম্যাচে ফিরতে সময় নিয়েছে মাত্র ৪ মিনিট। থ্রো ইন থেকে বুকে বল নিয়ন্ত্রণে বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেছেন সুমন। সুমনকে মার্কিং না করায় গোলটিতে মোহামেডান ডিফেন্ডারদের দায়ও কম নয়। লিগে এটি সুমনের সপ্তম গোল। আজ দুটি সহজ গোলের সুযোগ না করলে গোলসংখ্যা আরও বাড়িয়ে নিতে পারতেন।
এরপর একের পর এক মোহামেডানের গোল। সাদা–কালোদের গোলের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে বারিধারার গোল মিসের মহড়া। বিপরীতে মোহামেডানের পরের দুটি গোল সেট পিস থেকে। ৩৬ মিনিটে রাকিব খান ইভানের কর্নারে থেকে হেড করে গোল করেন দিয়াবাতে, ২-১।
দলীয় তৃতীয় গোলটিও এসেছে প্রায় একই ভাবে। ইভানের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে দিয়াবাতে হেড করলে বক্সের বাইরে গিয়ে পড়ে। ফিরতি বলে ভলিতে জালে জড়িয়ে দেন সেন্টারব্যাক অনিক, ৩-১।
বিরতি থেকে সমতায় ফেরার মতোই খেলেছে বারিধারা। ‘ওপেন প্লে’তে গোল মিস করেছেন, পেনাল্টি থেকেও গোল করতে ব্যর্থ। ৭৩ মিনিটে স্পটকিক থেকে যত উঁচুতে বলটি মেরেছেন উজবেকিস্তানের সাইদোসটন ফজিলোভ, তাতে মনে হতে পারে রাগবি পোস্টে বল মেরেছেন। ৭৯ মিনিটে মোহামেডানের ইয়াসান আউচিং করেছেন ৪-১। জটলার মধ্য থেকে দেখেশুনে প্লেসিংয়ে গোলটি করেছেন ক্যামেরুনের এই ফরোয়ার্ড।
এই জয়ে ১৭ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে এল মোহামেডান। সমানসংখ্যক ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে বারিধারা।